জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, “প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনার ক্ষেত্রে মতভিন্নতার কারণেই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম পর্বের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো পৃথকভাবে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে পারষ্পরিক আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলগুলো নিজেদের অবস্থানের পাশাপাশি অন্যদের অবস্থান সম্পর্কেও জানতে পারছে।

বুধবার (১৮ জুন) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার তৃতীয় দিন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় সব রাজনৈতিক দলগুলো মতামতও দিচ্ছেন আবার মতবিনিময়ও করছেন, যা কমিশনকে অগ্রসর হতে সাহায্য করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দু'টি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা রাজনৈতিক দলগুলো অনুভব করে।”

তিনি বলেন, “দুয়েকটি দলের মধ্যে এ ব্যাপারে নীতিগত মত পার্থক্য থাকলেও একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থার বিষয়ে সকলে মত দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা  সংস্কার কমিশনের দুটি প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয়েও পুনর্বার আলোচনা অব্যাহত থাকবে “

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ (এবি) ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।

আগামীকাল সকাল ১১টায় আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। এতে আজকের অসমাপ্ত আলোচনাসহ প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সংবিধানের মূলনীতি, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

ঢাকা/এএএম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

সাফল্যের সঙ্গে সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বাসস লিখেছে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।

আরো পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা

সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে; এমন কিছু পরিবর্তন যা এদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না, এমন কিছু পরিবর্তন যা আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাবে, সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।”

“সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা বিদেশিদের আসতে দেখেছি’ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বন্ধু রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।”

“এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসেছে, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিয়েছে এবং আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে আমরা নিজেরাই বিশ্ববাসীর দরবারে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি,” বলেন তিনি। 

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা এই সনদ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের সকলকে আমি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”

এই জুলাই সনদ সারা বিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ যারা মাসের পর মাস এই দীর্ঘ আলোচনার সঙ্গে থেকেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সকল কার্যকলাপ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।”

‘দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে’ বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, একক সংগঠন, একক সংস্থা অথবা একক সরকার দিয়ে সম্ভব হবে না; এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
  • তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
  • কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব
  • ঐকমত্য কমিশন হাজির করেছে অনৈক্যের দলিল: বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন
  • জুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে
  • সমস্যা সমাধান করে নির্বাচনের পথে এগোন: অন্তর্বর্তী সরকারকে মির্জা ফখরুল
  • অধ্যাপক আলী রীয়াজের নতুন বই প্রকাশিত
  • সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক, কতটা যৌক্তিক