গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিএনপির নেতারা রোববার বিকেলে ‘ঐক্য সমাবেশ’ করেছেন। এতে কেন্দ্রীয় তিন নেতাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকলেও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীকে দেখা যায়নি। এমনকি তাঁর অনুসারী ও সদ্য ঘোষিত দুটি আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশ নেতা যোগ দেননি।

রোববার বিকেলে উপজেলার কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে এ ঐক্য সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) কাজী ছাইয়েদুল আলম। সমাবেশে নেতা-কর্মীদের দেওয়া বক্তব্যে নতুন কমিটি নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, গত ২০ মে জেলা বিএনপির অধীন আটটি কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সদর, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলা এবং পৌর বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলাদা আলাদা সভার আয়োজন করা হয়। সে সভা শেষে ১৪ জুন ৪১ সদস্যের আটটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সব কমিটি স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মেনে নিলেও কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। দুটি কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব করা হয়েছে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর অনুসারীদের। ১৬ জুন নতুন কমিটি আনন্দমিছিল করলেও একই দিনে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলার পর পুলিশ পারভেজ আহমেদকে গ্রেপ্তার করে এবং একই দিন তাঁকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর উপজেলা বিএনপিতে দ্বিধা-বিভক্তির সৃষ্টি হয়।

ওই ঘটনার পর আজ বিকেলে ঐক্য সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান, কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো.

সাইজুদ্দিন আহাম্মেদ প্রমুখ।

কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম সিকদার বলেন, ‘আজকে আমাদের সমাবেশ না। আমাদের বিপক্ষে ওরা সমাবেশ করছে। তারা কমিটি মানে না। তাই আমাদের বাদ দিয়ে সমাবেশ করেছে। তারা ঐক্য সমাবেশ নাম দিয়েছে। কিন্তু আমরা ঐক্যের বাইরে। আমাদের আহ্বায়ক কমিটির কেউ সেখানে যায়নি।’

কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মামুদ সরকার বলেন, ‘তারা আমাদের নতুন কমিটির বিপক্ষে একত্র হয়ে সমাবেশ করছে। এ জন্য আমরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর লোকেরা যাইনি। আজকে আমাদের আহ্বায়ক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

জানতে চাইলে চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘ঐক্য সমাবেশে আমরা কেউ নেই। আপনারা জানেন, উপজেলায় নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত হয়েছে। কমিটির অনেকে আশা অনুযায়ী পদ পায়নি। বিএনপি তো অনেক বড় দল। একটা পদ তো দুজনকে দিতে পারবেন না। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই কমিটি দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে উনিশ-বিশ হবেই। অনেকেই পদ পায়নি, এ জন্য হয়তো ঐক্য সমাবেশ করেছে তারা। তবে যখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে, সবাইকে রাখা হবে। দলকে শক্তিশালী করতে যা করা দরকার, সবই করা হবে।’

ঐক্য সমাবেশের আয়োজক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর (চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী) কর্মকাণ্ড একটু বিতর্ক। তিনি নিজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। যার কারণে তাঁকে আমরা ডাকিনি। তাঁর সংশোধন হওয়ার প্রয়োজন আছে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, আজকের আয়োজন বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন ফরম বিতরণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে। সেখানে গিয়ে দেখেছেন, প্রায় ৫০ হাজারের মতো নেতা-কর্মী সমবেত হয়েছেন। তাঁদের অনেক ক্ষোভ। নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা ও তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি নিয়ে আলোচনা করে পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইশর ক আহম দ স দ দ ক ব এনপ র ক ন দ র য় ব এনপ র সদস য প র ব এনপ র সদস যসচ ব ব এনপ র স ন ব এনপ র কম ট র স র উপজ ল আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

বরকতের শত্রু অহংকার

আমরা প্রায়ই নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠি। নেতিবাচক চিন্তা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই ‘তুমি অবশ্যই সফল হবে’, এমন উক্তি আমাদের মধ্যে উৎসাহ জাগায়। কিন্তু এই বিশ্বাস আমাদের সীমাবদ্ধ করে ফেলতে পারে।

‘আমি মহান কিছুর জন্য নির্ধারিত’, এই চিন্তা আমাদের মধ্যে অহংকার জাগিয়ে তুলতে পারে, যা আমাদের জীবনের বরকত নষ্ট করে।

অহংকারের ক্ষতি

আমাদের সম্ভাবনা কী? সাফল্যের রূপ কেমন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না থাকায় আমরা নিজেরাই সাফল্যের সংজ্ঞা তৈরি করি। আমি ভাবি, আমি একটি বড় কোম্পানির সিইও হতে পারি এবং এটি না হওয়া পর্যন্ত আমি থামব না। অথবা আমার কোনো বন্ধু, যাকে আমি নিজের চেয়ে কম প্রতিভাবান মনে করি, একটি বিশাল ব্যবসা শুরু করেছে। তাই আমি ভাবি, আমি তার চেয়ে ভালো করতে পারি।

অহংকার আত্মবিশ্বাস নয়, অহংকার একটি অস্বাস্থ্যকর বিশ্বাস, যা আমাদের কানে ফিসফিস করে যে আমরা অন্যদের চেয়ে উন্নত, নিয়ম আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।রায়ান হলিডে

যখন আমি নিজেকে মহান মনে করি, আমি সেই অনুযায়ী কাজ করি। সামান্য অনৈতিক পথও বেছে নিতে পারি। কারণ, আমি ভাবি, এটি আমার ‘নির্ধারিত’ সাফল্যের জন্য প্রয়োজন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিবর্তে রাতে কাজের ভেতর সর্বদা ডুবে থাকা আমাদের ন্যায্য মনে হয়। এটি আমাদের স্বার্থপর করে তোলে।

আরও পড়ুনসম্পদের অহংকার ধ্বংস করে কারুনকে১৯ মার্চ ২০২৪

রায়ান হলিডে অহংকারের একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন, ‘অহংকার আত্মবিশ্বাস নয়, অহংকার একটি অস্বাস্থ্যকর বিশ্বাস, যা আমাদের নিজেদের গুরুত্বের ওপর অতিরিক্ত জোর দেয়। এটি আমাদের কানে ফিসফিস করে যে আমরা অন্যদের চেয়ে উন্নত, আমাদের চাহিদা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা এতটাই ব্যতিক্রমী যে নিয়ম আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’

ইসলামি শিক্ষায় নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ধারণা আছে। আবু আলিয়া সুরখিল ব্যাখ্যা করেছেন যে, ‘এটা হলো আত্মার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সংগ্রাম, যেখানে একজন ব্যক্তি প্রলোভন, শারীরিক আকাঙ্ক্ষা ও শয়তানের প্রবঞ্চনা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করে।’

নফস আল–আম্মারা বা ‘মন্দের দিকে প্ররোচনাকারী আত্মা’ আমাদের সম্পদ, খ্যাতি, ক্ষমতা বা শারীরিক তৃপ্তির দিকে ঠেলে দেয়, যা আমাদের আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়।

‘আমি মহান কিছুর জন্য নির্ধারিত’, এই চিন্তা আমাদের মধ্যে অহংকার জাগিয়ে তুলতে পারে, যা আমাদের জীবনের বরকত নষ্ট করে।অহংকারের বিরুদ্ধে লড়াই

অহংকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমাদের সাফল্যের ধারণাকে পুনর্গঠন করতে হবে। এর অর্থ হলো, দুনিয়ার সাফল্যের পরিবর্তে আখিরাতের পুরস্কারকে প্রাধান্য দেওয়া এবং ফলাফলের পরিবর্তে কাজের প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দেওয়া। ‘আমি কীভাবে ওটা অর্জন করব’, এর পরিবর্তে ‘আজ আমি কীভাবে নিজেকে উন্নত করতে পারি’, এই চিন্তা আমাদের কাজের ধরন বদলে দেয়।

আরও পড়ুনমন্দ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের উপায়০৬ এপ্রিল ২০২৫

নিজেকে কিছুর ‘প্রাপ্য’ মনে করার ধারণা থেকে মুক্ত হতে হবে। নবীজি (সা.), যিনি সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জান্নাতের প্রাপ্য ছিলেন, তিনিও বলেছেন, ‘সঠিক পথ অনুসরণ করো, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করো এবং সুসংবাদ দাও। নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ শুধু তার কাজের দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সাহাবিরা বললেন, ‘এমনকি আপনিও নন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)?’ নবীজি বললেন, ‘এমনকি আমিও নয়, যদি না আল্লাহ আমাকে তাঁর রহমত দান করেন। জেনে রাখো, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা ছোট হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৬৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৮১৮)

‘আমি কীভাবে ওটা অর্জন করব’, এর পরিবর্তে ‘আজ আমি কীভাবে নিজেকে উন্নত করতে পারি’, এই চিন্তা আমাদের কাজের ধরন বদলে দেয়।

এই হাদিসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। প্রথমত, আল্লাহর সামনে আমাদের অবস্থান স্বীকার করা, মানে আল্লাহ আমাদের রিজিক দান করেন, কিন্তু তিনি আমাদের কিছু দিতে বাধ্য নন। দ্বিতীয়ত, প্রক্রিয়ার ওপর মনোযোগ দেওয়া—জান্নাতে প্রবেশ একটি অসাধারণ অর্জন, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন ছোট ও নিয়মিত কাজ। এটি আমাদের তাড়াহুড়ার সংস্কৃতি থেকে বরকতের সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যায়।

কর্মক্ষেত্রে বরকতের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সমালোচনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে না নিয়ে উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখা, দক্ষতা বাড়িয়ে অন্যদের সেবা করা এবং নিজের পরিবর্তে অন্যদের অবদানের কৃতিত্ব দেওয়া এর অন্যতম উপায় হতে পারে।

 সূত্র: প্রোডাক্টিভ মুসলিম ডটকম

আরও পড়ুনইবলিসের কাহিনি১২ মে ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ