বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ধারাবাহিক বিপর্যয় বাকৃবির
Published: 23rd, June 2025 GMT
বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২৫’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকাশিত ‘ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২৫’-এ দেখা গেছে, বাকৃবির অবস্থান উঠে এসেছে ১০০১ থেকে ১৫০০ এর মধ্যে। অথচ ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২২-এ বাকৃবির অবস্থান ছিল ৬০১-৮০০ এর মধ্যে। যা পরের বছর নেমে যায় ৮০১–১০০০ এ। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে দেশের এই কৃষিভিত্তিক প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টি।
টিএইচই ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিং প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অগ্রগতির ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ১৩০টি দেশ ও অঞ্চলের ২,৫২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই র্যাঙ্কিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশের আরো সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় এবারের ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিংয়ে বাকৃবির সঙ্গে একই ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন সূচকে অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এসডিজির দরিদ্র বিলোপ, মানসম্মত শিক্ষা, জলজ জীবন ও লক্ষ্য পূরণে অংশীদারিত্ব এই চারটি লক্ষ্যে পূরণের সূচকে বাকৃবি র্যাংকিং-এ অবস্থান করছে। মানসম্মত শিক্ষা (এসডিজি ৪) সূচকে ২০২২ সালে বাকৃবির অবস্থান ছিল ৩০১–৪০০, যা ২০২৪ সালে নেমে আসে ৪০১–৬০০ এবং ২০২৫ সালে আরো পিছিয়ে ৬০১–৮০০ অবস্থানে যায়।
তবে আশার কথা হলো, জলজ জীবন (এসডিজি -১৪) ও দারিদ্র্য বিলোপ (এসডিজি -১) সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান তুলনামূলকভাবে কিছুটা উন্নত হয়েছে। জলজ জীবন সূচকে বাকৃবি রয়েছে ১০১–২০০ এবং দারিদ্র্য বিলোপ সূচকে রয়েছে ২০১–৩০০ অবস্থানে। লক্ষ্য পূরণে অংশীদারিত্ব (এসডিজি -১৭) সূচকে গতবারের তুলনায় অগ্রগতি দেখা গেছে; ২০২৪ সালে যেখানে অবস্থান ছিল ১০০১–১৫০০, সেখানে ২০২৫ সালে ৬০১–৮০০ এর মধ্যে উঠে এসেছে।
জানা যায়, ‘ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২৫-এ বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান লাভ করেছে। এর মধ্যে ১০১-২০০ এর মধ্যে জায়গা করে নেওয়া দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ( ডিআইইউ)।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ র্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ২০২৬ সালের বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংঙ্কিং প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের ১৫টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অনুপস্থিত। গত ৪ বছরেও কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে একবারো জায়গা করে নিতে পারেনি বাকৃবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারণে টিএইচই ও কিউএস র্যাঙ্কিং আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বস্ত সূচক হিসেবে বিবেচিত। এই দুই র্যাঙ্কিংয়ে বারবার পিছিয়ে পড়া দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি উদ্বেগের বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক অধ্যাপক ড.
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব গবেষণা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, সেগুলো নিয়মিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে বিষয়টি আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইমপ য ক ট র র অবস থ ন লক ষ য প রক শ ক উএস সরক র এসড জ
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি, এখন কী করবে ভারত-ইসরায়েল
বহু দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্য একের পর এক যুদ্ধের বৃত্তে ঢুকে পড়েছে। একের পর এক দেশ আক্রমণের শিকার হয়েছে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। সব দিক বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্য হয়ে উঠেছে বিশ্বশক্তিগুলোর যুদ্ধক্ষেত্র। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি নিয়ে তাদের উদ্বেগ কম, আগ্রহের জায়গা প্রাকৃতিক সম্পদ।
কাতারের দোহায় ইসরায়েলের হামলার পর উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর মধ্যে ‘মার্কিন নির্ভরযোগ্যতা’ নিয়ে ক্রমে সন্দেহ বাড়ছে। দ্য টাইমস অব ইসরায়েলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দোহায় হামলার আগে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। যদিও ট্রাম্প পরে তা অস্বীকার করেছেন।
আসল ব্যাপার হলো ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা উপভোগ করে। স্বাভাবিকভাবেই এ সন্ধিক্ষণে সবার নজর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রকল্পের দিকে। কারণ, ইসরায়েলের এই প্রকল্প খোলাখুলিভাবে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর ওপর হুমকি তৈরি করেছে।
আরও পড়ুনযুবরাজ সালমান এক দশকে যেভাবে সৌদি আরবকে পাল্টে দিলেন১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ফলে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক, রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যম বিশ্লেষকেরা ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে এবং সেটি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে আরব-মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ও পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে। এ অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ইউরোপ এবং পাকিস্তানের চিরশত্রু ও বিকাশমান অর্থনৈতিক শক্তি ভারতকে হতবাক করেছে।
সম্প্রতি ভারত যখন ‘ইসরায়েলি ধাঁচের সম্প্রসারণবাদের’ ঘোষণা দিয়ে আক্রমণ করে, তখন পাকিস্তান কার্যকরভাবে নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে। কয়েক বছর আগে প্রয়াত ব্রিটিশ সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক মন্তব্য করেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান সংঘাতে ইসরায়েল বড় ভূমিকা রাখছে।
এ বছরের শুরুতে তুরস্ক-পাকিস্তান-আজারবাইজানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তিটি মুসলিম দেশগুলোতে যে শঙ্কা বাড়ছে তারই প্রতিফলন।
পাকিস্তান-সৌদি আরব চুক্তি দিল্লি ও জেরুজালেমে সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হলেও ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ও ‘অখণ্ড ভারত’ প্রকল্পের কারণে বিশ্বশান্তি হুমকির মুখে পড়ার বিষয়ে কোনো উদ্বেগ দেখা যায় না।ইসরায়েল ও ভারতের জোট এবং তাদের ‘সম্প্রসারণবাদী’ নীতির কারণে উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিকে আগ্রাসী পরিকল্পনা হিসেবে নয়; বরং প্ররোচনাহীন হামলার বিরুদ্ধে একটি আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরেই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে, ছয়টি মুসলিম দেশ বোমা হামলা চালিয়ে এবং মুসলমানদের হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বাস্তুচ্যুতি ও স্থায়ীভাবে পঙ্গু করার পর নেতানিয়াহু এখন অভিযোগ তুলছেন—বিশ্বে ইসরায়েল যে ক্রমে নিঃসঙ্গ হয়ে উঠছে, এর জন্য দায়ী চীন, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘আমাদের অস্ত্রশিল্পকে আরও বিকশিত করতে হবে। আমরা একসঙ্গে এথেন্স ও সুপার স্পার্টা হব।’
আরও পড়ুনইসরায়েল-ভারত যেভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে চেয়েছিল২৬ জুন ২০২৫‘ফিফটি স্টেটস-ওয়ান ইসরায়েল’ শীর্ষক এক বিশাল সমাবেশে নেতানিয়াহু বলেন, ‘জীবনের মূল্য আইনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’। তাঁর এ বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে, সামনে আরও বড় যুদ্ধ অপেক্ষা করছে।
আসলে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রকল্পের লক্ষ্য হলো পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের অংশবিশেষ দখল করে নেওয়া। এর মধ্যে রয়েছে মিসর, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন ও সৌদি আরব। এটি স্বীকার করতেই হবে, এটি নিছক কল্পকাহিনি নয়; বরং ঠেকানো সম্ভব এমন এক বাস্তবতা।
সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধে আমি লিখেছিলাম, ইসরায়েল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মুসলিম দেশ ধ্বংস করছে। পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলকে নিঃশর্ত সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, মিসর, এমনকি আরও দূরে মধ্যপ্রাচ্যে ভূমি দখলের অভিযানকে সমর্থন করছে। ‘ইহুদি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে’ কিংবা ‘বিশ্বকে নিরাপদ করা’—এই যুক্তিকে সামনে আনা হচ্ছে। ইসরায়েলের এ মারাত্মক অভিযান কোথায় গিয়ে শেষ হবে? এরপর কোন দেশ—পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসর নাকি সৌদি আরব?
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই দেশের নেতারা। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রিয়াদ