শিল্পকলায় জবি চলচ্চিত্র সংসদের উৎসব শুরু
Published: 23rd, June 2025 GMT
উদীয়মান নির্মাতাদের চোখে দেখা সময় ও সমাজের গল্প নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে শুরু হয়েছে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫’।
সোমবার (২৩ জুন) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ চলচ্চিত্র উৎসবের সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
চলচ্চিত্রের ভাষায় তরুণরা কী ভাবছে, কোন গল্প বলতে চায়—সেই ভাবনার অভিব্যক্তি মেলে ধরতেই এবারের আয়োজন। উৎসবের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘হয়ার স্টোরিজ টেক ফাইট’।
উৎসবের সভাপতি আদনান মাহমুদ সৈকত বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে আমরা দেশজুড়ে উদীয়মান নির্মাতাদের গল্প বলার একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চেয়েছি। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ফল।”
পরিচালক রাগীব শাহরিয়ার সৈকত বলেন, “সারা দেশের শিক্ষার্থী ও উদীয়মান নির্মাতাদের কাছ থেকে জমা পড়া ৭০টিরও বেশি চলচ্চিত্র। এর মধ্য থেকে নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শনীর মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়েছে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রদর্শিত হয় প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো। একইদিন বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ভিডিও কনফারেন্স রুমেও অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রদর্শনী।
প্রতিযোগিতামূলক বিভাগে প্রদর্শিত উল্লেখযোগ্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ছিল এমডি সাকিব হোসেন পরিচালিত ‘ট্রয়িডহবিন্দু’, রেজওয়ান মহিদের ‘ফার্স্ট’, অভ্রদীপ দাসের ‘সোরো’, ‘স্ট্রেংথ’, ‘লিবার্টি’, রুদ্র ব্যানার্জীর ‘টাইম লুপ’ ও ‘টুলি’, শরমিন ইসলাম প্রিয়ার ‘এস্কেপ’, সাগ্নিক মণ্ডল স্বাগতোর ‘ক্যারেক্টার’, পুজান কুমার দাসের ‘চিত্তো’, অতনু বিশ্বাসের ‘লাইফ অ্যান্ড টাইডস’, ফাহিমুর রহমানের ‘টাইম’, রায়হান এস মাহমুদের ‘কুয়াশা’, সিফাত রহমানের ‘নট আ ড্রিম!!’ এবং এমডি মকবুল হোসেন জামালের ‘স্টেপ’।
অপ্রতিযোগিতামূলক বিভাগে প্রদর্শিত হয় ফকির বিপ্লব পরিচালিত ‘সাউদা (দ্য ট্রেড)’, আহনাফ সাবিতের ‘হাঙ্গ্রি ফিল’, নাজমুল মুহাম্মদের ‘নেকলেস’, হুসাইন মোহাম্মদের ‘ছাদের আলো’, সিফাত রহমানের ‘বিক্রম’, আলম আনোয়ারের ‘আনারকলি’ এবং এমডি ফাহাদুর রেজার ‘ফিউজড’।
এ উৎসবের বিচারক প্যানেলে রয়েছেন দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব বিধান রিবেরু, সৈয়দ আহমেদ শাওকি এবং সাদিয়া খালেদ রিতী।
তিন দিনব্যাপী এই উৎসব চলবে আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত। মঙ্গলবার (২৪ জুন) অনুষ্ঠিত হবে আরো স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং বিকেল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে একটি বিশেষ মাস্টার ক্লাস, যার পরিচালনায় থাকবেন নির্মাতা রাকা নওশীন নাওয়ার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব শরীফ সিরাজ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক সামিউন হক দোলা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে অংশ নেন উৎসবে নির্বাচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর পরিচালকগণ।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রদর শ শ ল পকল উৎসব র পর চ ল অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে রঙতুলির আঁচড়ে সেজে উঠছে দেবী দুর্গা,
আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা, তারপরই শুরু হবে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজাকে কেন্দ্র করে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও চলছে সাজসজ্জা আর প্রস্তুতির ব্যস্ততা।
প্রতিটি মণ্ডপে এখন বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ, কোথাও রঙতুলির ছোঁয়ায় রাঙানো হচ্ছে প্রতিমা, কোথাও চলছে আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেল সাজানোর শেষ মুহূর্তের কাজ। একদিকে শিল্পীরা দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা নির্মাণে, অন্যদিকে আয়োজকরা তৎপর নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজে।
আগামী রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবী দুর্গাকে বরণ করার আনুষ্ঠানিকতা। পরবর্তী দিনগুলোতে একে একে অনুষ্ঠিত হবে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও মহা-নবমীর পূজা।
আর বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে এই মহা উৎসব। আনন্দ, ভক্তি আর মিলনমেলার আবহে বাঙালি হিন্দু সমাজে দুর্গাপূজা ইতোমধ্যেই বয়ে এনেছে উৎসবের রঙিন বার্তা।
সরজমিনে শহরের দেওভোগ আখড়া, পালপাড়া, উকিলপাড়া, সাহাপাড়া, আমলাপাড়া, নয়ামাটি, নিতাইগঞ্জের বলদেব জিউর আখড়া মন্দির, সাহাপাড়া মন্ডপে, মীনাবাজার গোপীনাথ জিউর আখড়া মন্দির, বঙ্গবিহারী, গলাচিপা মন্দির পূজামণ্ডপে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে জোরেসোরে।
শেষ মুহুর্তে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ স্থানে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। চলছে রঙতুলির আঁচড়।
এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজাকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মন্দির কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন আনসার,পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।
প্রতিমা শিল্পীরা বলেন, আর বেশি দিন বাকি নেই পূজার, আমরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। প্রতিমাগুলো নতুন করে রং ও তুলির আঁচড় দিয়ে সাজিয়ে তুলছি। পূর্বে সম্পূর্ণ প্রতিমা তৈরি করা থেকে সাজানো পর্যন্ত খরচ হত ৭০/৮০ হাজার টাকা। এখন সংশ্লিষ্ঠ মালামালের দাম বৃদ্ধি,শিল্পীদের পারিশ্রমিক বাড়ার কারণে খরচ প্রায় দিগুণ।
তবুও এই কাজ আমাদের করতেই হবে কারণ এটা আমাদের ধর্মীয় রীতিনীতি। শেষ মুহূর্তে দেবীকে পড়ানো হবে পোশাক-পরিচ্ছদসহ অন্যান্য আল্পনা।
নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে এবছর ২২৪টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গা উৎসব। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৯টি, বন্দরে ২৯টি, সোনারগাঁয়ে ৩৫টি, আড়াইহাজারে ৩৭টি এবং রূপগঞ্জে ৪৪টি মণ্ডপ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনের পক্ষে থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজাকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে ও পুলিশ প্রশাসন।
প্রশাসনের নজরদারির বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন বলেন, ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয় থেকে শুরু করে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি আমাদের শহরের বিভিন্ন মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন, তাঁরা সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পুলিশ, র্যাব, কমিশনার,সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সবার সাথে আমাদের ইতোমধ্যে বৈঠক হয়েছে, ওনারা আমাদের মণ্ডপগুলোর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া যেকোনো ধরণের নাশকতা মোকাবেলায় আমাদের নিজস্ব সেচ্ছাসেবক দল প্রত্যেক মণ্ডপে নিয়োজিত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, দুর্গাপূজা শারদীয় উৎসব উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি, হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে মতবিনিময় সভা হয়েছে। তারাও সবাই আমাদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা আশা করি উৎসবের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রতীক। পূজা উদযাপন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে রামকৃষ্ণ মিশনের পূজা মন্ডপ প্রদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এবারের শারদীয় দুর্গাপূজায় কোন নিরাপত্তার ঝুকি নাই। বিগত সময়ের চেয়ে এবার আরো বেশী সম্প্রতির বন্ধন অটুট থাকবে এবং উৎসমুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে দূর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের শংকা নাই। এই পূজাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সকল মন্ডপে সিসি ক্যামেরার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এবার পূজা উৎসবমুখর হবে। নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নাই। নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি সবসময়ই ছিলো। এবছর সম্প্রিতি আরও ভালো হয়েছে।
দেশে এবছর ৩৩ হাজার পূজামন্ডপ রয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে পূজা উদযাপন কমিটি ৭ জন করে ভলেন্টিয়ার নিয়োগ দিবে, আনসার সদস্য থাকবে ৮জন করে। এছাড়াও পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিরাশভার কাজে নিয়োজিত থাকবে।