সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় (রৌয়া বিল) হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

গত রোববার রাতে জেলা প্রশাসক (রুটিন দায়িত্বরত) মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সই করা এ-সংক্রান্ত জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সুনামগঞ্জ হাউসবোট অ্যাসোসিয়েশন। এর আগে হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ‘অবশ্য পালনীয়’ ১৩টি নির্দেশনা জারি করে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রৌয়া বিলের ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় হাউসবোটের যাতায়াত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনে জারি করা নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। অন্যথায় কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর উদ্দেশ্য হাওর এলাকার প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি রোধ করা।

এর আগে জেলা প্রশাসনের জারি করা পর্যটকদের জন্য বর্জনীয় নির্দেশনাগুলো হলো উচ্চ শব্দে গান-বাজনা করা/শোনা, অজৈব বা প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য/বর্জ্য ফেলা, মাছ ধরা, শিকার বা পাখির ডিম সংগ্রহ, পাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বিঘ্ন ঘটানো, ডিটারজেন্ট-শ্যাম্পু বা রাসায়নিক ব্যবহার, গাছ কাটা, ডাল ভাঙা বা বনজ সম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করা এবং মনুষ্যসৃষ্ট জৈব বর্জ্য হাওরে ফেলা।

এ ছাড়া পর্যটকদের জন্য অবশ্য পালনীয় নির্দেশনাগুলো হলো জেলা প্রশাসন নির্ধারিত নৌপথ ব্যবহার, লাইফ জ্যাকেট পরা, প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার না করা, দূর থেকে পাখি ও প্রাণী পর্যবেক্ষণ করা, ফ্ল্যাশ ছাড়া ছবি তোলা, স্থানীয় গাইড ও পরিষেবা গ্রহণ, ক্যাম্পফায়ার বা আগুন জ্বালানো থেকে বিরত থাকা।

গত শনিবার এ নির্দেশনা জারি করে জেলা প্রশাসন। একই দিন বিকেলে হাওরপাড়ে মতবিনিময় সভা করা হয়। টাঙ্গুয়ার হাওরের অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসাসহ পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিতের দাবি জানান এলাকাবাসী। এর আগে ১৮ জুন টাঙ্গুয়ার হাওরকে বাঁচানোর দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়। এতে হাওর অঞ্চলবাসীর পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।

টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী কবির আহমদ বলেন, হাউসবোটগুলো রৌয়া বিলে ঢুকতে না পারলে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যের কম ক্ষতি হবে।

সুনামগঞ্জ হাউসবোট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন বললেন, কয়েক বছর ধরে এসব নিয়ম অলিখিতভাবে ছিল। সেটি এখন লিখিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। হাউসবোট নির্ধারিত জায়গায় রেখে কেউ চাইলে হাতে চালিত নৌকায় করে যাবেন। এ নির্দেশনা আমরা মানব।

জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল করিম বললেন, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ ট ঙ গ য় র হ ওর ট ঙ গ য় র হ ওর হ উসব ট র জন য পর ব শ এল ক য় র এল ক

এছাড়াও পড়ুন:

টাঙ্গুয়ার হাওরে ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ‘অবশ্য পালনীয়’ ১২টি নির্দেশনা জারির এক দিন পর হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন।

রোববার রাতে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (রুটিন দায়িত্বরত) মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এ–সংক্রান্ত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকা প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি রোধকল্পে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় পর্যটকবাহী হাউসবোটের যাতায়াত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন থেকে আগে জারি করা নির্দেশনা অবশ্যই পালনের অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় কঠোরই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পর্যটকদের নিয়ে হাউসবোটগুলো প্রথমে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় যায়। এরপর সেখান থেকে টেকেরঘাট এলাকায় গিয়ে বোটেই রাত যাপন করেন পর্যটকেরা।

সংকটাপন্ন এই হাওরের জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষায় পর্যটকদের সচেতন করতে শনিবার জেলা প্রশাসন থেকে ১২টি নির্দেশনা জারি করা হয়। একই দিন বিকেলে হাওরপাড়ে এক মতবিনিময় সভায় টাঙ্গুয়ার হাওরের অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসাসহ পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিতের দাবি জানান এলাকাবাসী। তাঁরা বলেন, মূল হাওরে ইঞ্জিনচালিত নৌযানের প্রবেশ বন্ধ করতে পারলে সমস্যা অনেক কমে আসবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে হাওরের জয়পুর এলাকায় হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে করণীয় শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা।

এর আগে গত বুধবার বিপর্যয় থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরকে বাঁচানোর দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয় হাওর অঞ্চলবাসীর পক্ষ থেকে। প্রথম আলোতে ১২ জুন ‘অস্তিত্ব সংকটে টাঙ্গুয়ার হাওর: শূন্য হচ্ছে প্রকৃতির ভান্ডার’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুনটাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের মানতে হবে ১২ নির্দেশনা২১ জুন ২০২৫

জেলা প্রশাসনের নিদের্শনা
হাওরে পর্যটকদের জন্য ব্যবহৃত নৌযানগুলোকে প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত নৌপথ ব্যবহার করতে হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য লাইফজ্যাকেট ব্যবহার, স্থানীয় গাইড ও পরিষেবা গ্রহণ, প্লাস্টিক পণ্য বর্জন, দূর থেকে পাখি ও প্রাণীর পর্যক্ষেণ করা, ক্যাম্পফায়ার বা আগুন জ্বালানো থেকে বিতরণ থাকতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, হাওরে উচ্চশব্দে গান-বাজনা করা বা শোনা যাবে না। হাওরের পানিতে অজৈব বা প্লাস্টিক–জাতীয় পণ্য ও বর্জ্য ফেলা যাবে না। মাছ ধরা, শিকার বা পাখির ডিম সংগ্রহ করা যাবে না। পাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। ডিজারজেন্ট, শ্যাম্পু বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না। গাছকাটা, গাছের ডাল ভাঙা বা বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যাবে না। হাওরে সংরক্ষিত (কোর জোন) অংশে প্রবেশ করা যাবে না। মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য হাওরে ফেলা যাবে না।

আরও পড়ুনবিপর্যয় থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন, ৬ দফা দাবি১৮ জুন ২০২৫

জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে

সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় এ হাওরের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট। এ হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট–বড় ১০৯টি বিল আছে। তবে প্রধান বিল ৫৪টি। হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তখন হাওর রূপ নেয় সমুদ্রে। হাওর এলাকার ৮৮টি গ্রাম রয়েছে। বর্ষায় এই গ্রামগুলো ছোট ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। হাওরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ৩৮টি ঝরনা নেমে এসে মিশেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে।

টাঙ্গুয়ার হাওর প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, রূপে-গুণে অনন্য এক জলাভূমি। পর্যটকদের কাছে অতিপ্রিয়। ভরা বর্ষায় সেই রূপ উপচে পড়ে। টাঙ্গুয়ার হাওর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে তাই মুগ্ধতা নিয়ে ফেরেন পর্যটকেরা। তাই প্রতিবছর এখানে প্রচুর পর্যটক আসেন। তবে প্রয়োজনীয় তদারকির অভাব, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনসহ নানা কারণে এখন হাওরে প্রাকৃতিক সম্পদ কমছে। এখন আগের মতো গাছ, মাছ ও পাখি নেই। জীববৈচিত্র্য রয়েছে হুমকির মুখে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে পর্যটকদের কোনো বাধা নেই: জেলা প্রশাসক
  • টাঙ্গুয়ার হাওরে ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
  • টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি
  • সীতাকুণ্ডের ঝরনায় দুর্ঘটনা এড়াতে নানা উদ্যোগ
  • গল টেস্টে ক্রিকেট যেভাবে বাংলাদেশের ‘খেলা’ হয়ে উঠল
  • টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের মানতে হবে ১২ নির্দেশনা
  • টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে নতুন নির্দেশনা