প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের জটিলতার অবসান কবে
Published: 9th, July 2025 GMT
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশসংক্রান্ত জটিলতা এখনো কাটেনি। তথ্য অধিদপ্তরের (পিআইডি) দেওয়া প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড থাকলেও অনেক পেশাদার সাংবাদিক সেই কার্ড দেখিয়ে সচিবালয়ে ঢুকতে পারছেন না। যদিও একটি অস্থায়ী তালিকায় নাম থাকা সাংবাদিকেরা প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে—তাহলে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড থাকার মানে কী?
সাংবাদিকেরা বলছেন, মাসের পর মাস ধরে এই জটিলতা চললেও এর কার্যকর সমাধান হচ্ছে না। এতে সাংবাদিকেরা পেশাগত কাজে প্রতিবন্ধকতায় পড়ছেন। কবে এ সমস্যার সমাধান হবে, সেটাও স্পষ্ট করে বলছে না সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পিআইডি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার। যদিও পরে আওয়ামী লীগ সরকার তখন মূলধারার প্রতিটি গণমাধ্যমের কার্ডের কোটা কমিয়ে দিয়েছিল। পরে বৈধ কার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ৯০০।
আরও পড়ুনআরও ১১৮ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল১০ নভেম্বর ২০২৪অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিন দফায় মোট ১৬৭ জনের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করে পিআইডি। ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের পদক্ষেপ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের অন্তরায় বলে প্রতিবাদ জানায় সম্পাদক পরিষদ। সংবাদপত্রের
মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (নোয়াব) সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনও উদ্বেগ প্রকাশ করে।
ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা এবং অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়ে সচিবালয়ে ঢুকতে না দেওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এর কারণ তিনি বুঝতে পারছেন না। অতীতে ব্যক্তিগতভাবে কারও কারও কার্ড বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এভাবে ঢালাও কার্ড বাতিল কখনো হয়নি। এই প্রবণতা মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। অবশ্যই এর দ্রুত সমাধান দরকার।
সমালোচনার মুখে গত ডিসেম্বরে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পিআইডি যেসব সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তা পুনর্বিবেচনা করা হবে। কোনো পেশাদার সাংবাদিক তাঁর কার্ড বাতিলের বিষয়টি ন্যায়সংগত মনে না করলে তিনি তা লিখিতভাবে জানাতে পারবেন। এরপর অধিদপ্তর সেসব আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুনঅ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করায় ক্ষোভ সাংবাদিকদের ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪এর মধ্যে গত ডিসেম্বরে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়ে সচিবালয়ে ঢোকার অনুমতি বাতিল করা হয়। এরপর তথ্য অধিদপ্তর জানায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অস্থায়ী পাস দেওয়া হবে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পর নির্ধারিত সংখ্যক সাংবাদিকের একটি তালিকা করা হয়। এ তালিকায় ৬১৫ জন সাংবাদিকের নাম রয়েছে, যাঁরা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারছেন। অন্যরা কার্ড থাকলেও সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না। এ নিয়ে অনেক সাংবাদিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা, ২০২২ পুনর্মূল্যায়নের জন্য গত জানুয়ারিতে ১৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশে কর্মরত দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের জন্য নতুন প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জারি করা এই নীতিমালা অনুযায়ী, গণমাধ্যমের সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, উপসম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক, প্রতিবেদক, আলোকচিত্রী ও ভিডিওগ্রাফারের মোট সংখ্যার আনুপাতিক হারে কার্ড দেওয়ার কথা আছে। তবে কার্ডের সংখ্যা মোট সংখ্যার ৩০ শতাংশের বেশি নয় এবং একক কোনো প্রতিষ্ঠান ১৫টির বেশি কার্ড পাবে না।
ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা এবং অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়ে সচিবালয়ে ঢুকতে না দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। মতিউর রহমান চৌধুরী, প্রধান সম্পাদক, মানবজমিনবর্তমানে স্থায়ী ও অস্থায়ী—এই দুই ধরনের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়। স্থায়ী কার্ডের মেয়াদ তিন বছর এবং অস্থায়ী কার্ডের মেয়াদ এক বছর। নতুন নীতিমালায় সবাই একই ধরনের কার্ড পাবেন। কার্ডের মেয়াদ হবে তিন বছর।
অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক বা কলামিস্টরা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাবেন। এ ক্ষেত্রে মূলধারার গণমাধ্যমে কমপক্ষে ২০ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা এবং মূলধারার গণমাধ্যমে বছরে অন্তত ১০টি প্রতিবেদন প্রচার বা প্রকাশের প্রমাণ দাখিল করতে হবে। তবে সাড়ে চার মাস হতে চললেও এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হয়নি।
পিআইডির একটি সূত্র জানায়, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়ার জন্য যে কমিটি গঠন করার কথা, সেটি এখনো হয়নি। এখন ব্যতিক্রম ছাড়া কেবল পুরোনো কার্ডের মেয়াদ শেষ হলে নবায়ন করা হচ্ছে। যদিও তা দেখিয়ে সচিবালয়ে ঢোকা যাচ্ছে না।
প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো.
সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারের একটি অংশ চায়, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নিরাপত্তা পাসের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হোক। সেই লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে। এ জন্য সাংবাদিকদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের বাইরেও সারা দেশ থেকে নানা পেশার লোকজন প্রতিনিয়ত সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে এসে থাকেন। এর মধ্যে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সংকুচিত করার দিকেই সরকারের নজর বেশি কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে সীমাবদ্ধতার বিষয়টি পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও আমার দেশ–এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভালো প্রতিবেদন তৈরির কাজে পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতিনিয়ত সচিবালয়ে প্রবেশের দরকার হয়। কিন্তু এখন অনেকেই কার্ড দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না। এতে পেশাদার সাংবাদিকেরা ভালো প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিষয়টির দ্রুত সমাধান করা দরকার। সংস্কার কমিশনও এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুনকোনো গণমাধ্যম ১৫টির বেশি অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাবে না২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গত ২৬ জুন এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা ভুল ছিল। তবে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কোনো সাংবাদিক বা প্রতিষ্ঠান কি বলতে পারবে, সচিবালয়ে সাংবাদিকের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে? ‘প্রায় ৬০০ সাংবাদিক সচিবালয়ে প্রবেশের এক্সেস পেয়েছেন’ উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘তাঁরা যাচ্ছেন, রিপোর্ট করছেন, আমরা তেমন কোনো কমপ্লেইন পাচ্ছি না। তবে এই কাজটা স্লো হয়ে গেছে। সবাইকে খুব দ্রুত অ্যাক্রিডিটেশন দেওয়া উচিত।’
প্রেস সচিব এ কথা বললেও বাস্তবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সবাই চাইলেই সচিবালয়ে ঢুকতে পারছেন না। প্রধান ফটকে পুলিশের কাছে সাংবাদিকদের নামের তালিকা দেওয়া আছে। সেই তালিকায় যাঁদের নাম আছে, সেই সাংবাদিকদের এখন ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়। এভাবে তালিকা মেলাতে গিয়ে আরেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, একজন পেশাদার সাংবাদিকের জন্য প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু সেই কার্ড দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে না পারাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে এই কার্ড অপব্যবহারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে কার্ড বাতিল করা কিংবা মাসের পর মাস এই কার্ড দেখিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে না দেওয়া স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করা উচিত।
আরও পড়ুনসাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা ভুল ছিল: প্রেস সচিব২৬ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নত ন ন ত ম ল প রথম আল ক প রব শ র সরক র র ব যবস থ কম ট র অন য য় র জন য প আইড র একট
এছাড়াও পড়ুন:
৩৬ বছর পর ঢাকা লিগে লঙ্কান ফুটবলার
আশি-নব্বই দশকে ঢাকার লিগ মাতিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ফুটবলাররা। পাকির আলীর নাম তো এই প্রজন্মের অনেকেই শুনেছেন। ফুটবল ক্যারিয়ারে ইতি টানার পর বাংলাদেশের ক্লাবে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন পাকির আলী।
১৯৮৯ সালে পাকির আলীর পর আর কোনো লঙ্কান ফুটবলার দেখা যায়নি বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে। অবশেষে ৩৬ বছর পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে দেখা যাবে লঙ্কান খেলোয়াড়কে।
শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের অধিনায়ক ও গোলরক্ষক সুজন পেরেরার সঙ্গে এক মৌসুমের জন্য চুক্তি করেছে ফর্টিস ফুটবল ক্লাব। সুজন পেরেরার আগেও ঢাকা লিগে খেলেছিলেন লঙ্কান এই গোলরক্ষক। আশির দশকে পোস্টের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন লায়নেল ফিরিচ।
গত মৌসুমে গোলরক্ষক পজিশনে বেশ ভালোই ভুগেছিল ফর্টিস ফুটবল ক্লাব, বিশেষ করে মিতুল মারমা চলে যাওয়ায় এই পজিশনে কিছুটা সমস্যায় পড়েছিল তারা। যে কারণে লঙ্কান সুজন পেরেরাকে নেওয়া বলে বুধবার সমকালকে জানান ফর্টিস ক্লাবের ম্যানেজার রাশেদুল ইসলাম, ‘সুজন পেরেরা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা একজন গোলরক্ষক। তাঁর সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। আশা করি, তাঁকে পাওয়ায় গোলরক্ষক পজিশনে আমাদের শক্তিটা বেড়েছে।’
সুজন পেরেরা সর্বশেষ খেলেছিলেন মালদ্বীপের ক্লাব টিসি স্পোর্টসে। ২০২২ সালে যোগ দেওয়ার পর ক্লাবটির হয়ে ৩৪ ম্যাচ খেলেছিলেন ৩২ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক। ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া সুজন পেরেরা দেশের জার্সিতে খেলেছিলেন ৫৬ ম্যাচ।