‘তোর পাকা রাস্তা তুই তুইলি লিয়্যা যা’
Published: 9th, July 2025 GMT
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী–অধ্যুষিত গ্রাম চৈতন্যপুর। গ্রামটির ভেতরে একটি পাকা রাস্তার নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন অবহেলিত জনপদটির বাসিন্দারা। এবার সেই রাস্তা নিয়েই বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। রাস্তাটির কাজ ফেলে কয়েক সপ্তাহ ধরে উধাও হয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তাটিতে বৃষ্টি হলেই জমছে কাদাপানি।
গোদাগাড়ী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি চৈতন্যপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে ১ হাজার ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি পাকাকরণের কাজ শুরু হয়। গত পবিত্র কোরবানির ঈদের আগে রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির পর এর ওপর বালু ও রোলার রেখে চলে যান সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ঈদের দুই সপ্তাহ পরও তাঁরা কাজে আসেননি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অসুবিধা হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের ফোন পেয়ে সড়কটির মাঝখান থেকে গাড়ি ও বালু সরানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে নতুন করে কাজ শুরু হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গ্রামটির কয়েকজন ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ঈদের পর ঠিকাদার আর কাজে হাত দেননি। রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে আর হাঁটাচলা করা যাচ্ছে না। গ্রামটির বাসিন্দা বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় জানান, তাঁরা এমনিতেই অবহেলিত। পাকা রাস্তা হবে ভেবে সবাই বেশ খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তাটি যে ভোগান্তির কারণ হবে, তা বুঝতে পারেননি। গ্রামের ছেলেমেয়েরা কাদা মাড়িয়ে স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। সড়কটি যেন প্রতিদিনের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত সোমবার বিমলের এক স্বজনের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। বরযাত্রীদের কয়েকজন ওই সড়কে আছাড় খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। ফলে জামাকাপড় একেবারে কাদায় মাখামাখি হয়ে যায়। হাঁটুতে বেশ আঘাত পান একজন। এ নিয়ে বিয়েবাড়িতে হুলুস্থুল কাণ্ড। আক্ষেপ নিয়ে বিমল বলেন, ‘পূর্বপাড়ার পরে খানিকটা জায়গা খুঁইড়ে রাইখিছে। ওইটুকুর নাকি টেন্ডারই হয়নি। এখন দেখেন তো দাদা, গাঁয়ের কৃষকদের কী সমস্যা। এলাকার লোকজন ধান বিক্রি করতে যাইতে পারছে না।’
রাস্তাটি নিয়ে নিজের ভোগান্তির কথা জানান ভ্যানচালক বিল্টু (৪৫)। তিনি বলেন, দুজন পেছন থেকে না ঠেললে তিনি ভ্যান নিয়ে রাস্তা পার হতে পারেন না। গতকাল বিকেলে অনেকক্ষণ রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে থাকার পরে স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন সরকার ও মাসুম আলীকে পান তিনি। তাঁরা দুজন ঠেলে দেওয়ার পর বিল্টু কাদা থেকে ভ্যানটি টেনে তোলেন। এই ভ্যান ঠেলতে গিয়ে নয়নের ছাতাটি হঠাৎ কাদার মধ্যে পড়ে যায়। খেপে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মুন বুইলসে যে বুলি, এই তোর পাকা রাস্তা তুই তুইলি লিয়্যা যা।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের প্রকৌশলী মুনসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ এলাকার মাটিতে এক ফোঁটা বৃষ্টি হলেই দুই ফোঁটা বেঁধে থাকে। কাদায় কোনো কাজ করা যায় না। এ জন্য ঠিকাদার কাজ শুরু করে আর এগোতে পারছেন না। এলাকাবাসীর আগ্রহের কারণেই আগেভাগে কাজ শুরু হয়েছিল। নইলে বর্ষার পরই তাঁরা কাজ শুরু করতেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার কাজ শুরু করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাজ না করেই অর্ধেক টাকা তুলে নেন ঠিকাদার
সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রতিবাদে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। এমনকি ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন তারা। গতকাল সোমবার দুপুরে সদর ইউনিয়নের সূর্য নারায়ণপুর এলাকার কর্মসূচিতে শতাধিক মানুষ অংশ নেন। তারা সড়কটির কাজ যথাযথভাবে করার দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সূর্য নারায়ণপুরের আব্দুর রশিদের বাড়ি থেকে বক্তারটেক পর্যন্ত ২৮০ ফুট দীর্ঘ রাস্তাটিতে ইট বিছিয়ে (সলিং) ৮ ফুট চওড়া করার কথা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীনে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় এ কাজের প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সদর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আল আমিন পালোয়ান এ কাজের ঠিকাদার। কিন্তু এলাকাবাসী সড়কটিতে নিম্নমানের ইট ব্যবহার ও বালু না দিয়েই কাজ শুরুর অভিযোগ করেছেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আল আমিন পালোয়ান একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। যে কারণে গত সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর একাধিক মামলায় আসামি হয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু সম্প্রতি এলাকায় এসে ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। নিম্নমানের সামগ্রী বসানোর প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির গুজব ছড়িয়েছেন তিনি। এমনকি নানা মাধ্যমে আল আমিন হুমকিও দিচ্ছেন।
সেখানে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার কাজল, মো. রানা শেখ প্রমুখ। তাদের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আল আমিন পালোয়ানের নম্বরে কল দিয়েও সংযোগ মেলেনি।
কাপাসিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. তামান্না তাস্নীম বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শনে যেতে বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।