মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনে হামলা ঠেকাতে তিনি একবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, পুতিন ইউক্রেনে হামলা করলে, তিনি মস্কোয় বোমা ফেলে প্রতিশোধ নেবেন। গত বছর নির্বাচনী প্রচারে ব্যক্তিগত অনুদানকারীদের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প এমন দাবি করেছিলেন। তহবিলদাতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের ওই কথোপকথনের একটি অডিও হাতে পেয়েছে সিএনএন।

২০২৪ সালে এক তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে আলাপচারিতার অডিও এটি। সেখানে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি পুতিনকে বলেছিলাম, আপনি ইউক্রেনে ঢুকলে আমি মস্কোয় বোমা ফেলব। আমি আপনাকে বলছি, আমার আর অন্য কোনো উপায় থাকবে না। তখন পুতিন বলেছিলেন, “আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি না।” তবে অন্তত ১০ ভাগ হলেও তিনি আমার কথা বিশ্বাস করেছিলেন।’

তহবিলদাতাদের সঙ্গে গত বছরের ওই বৈঠকে ট্রাম্প আরও দাবি করেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকেও একই ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি চিন পিংকে বলেছিলেন, যদি চীন তাইওয়ানে হামলা করে, তাহলে তার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংয়ে বোমা ফেলবে।

সি চিন পিংয়ের সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি আমাকে উন্মাদ ভেবেছিলেন।’ তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।

ট্রাম্প যখন তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছিলেন, তখন এসব মন্তব্য করেছিলেন। ২০২৪ সালে নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় তার নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন, যা অডিও টেপে রেকর্ড করা হয়।

পরে সাংবাদিক জোশ ডসি, টাইলার পেজার ও আইজ্যাক আর্নসডরফ ওই অডিওগুলো সংগ্রহ করেন। তাঁরা তাঁদের নতুন বই ‘২০২৪’-এমন কিছু তথ্য বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন।

এই অডিও টেপগুলো আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি। ট্রাম্পের প্রচারশিবির ওই টেপগুলোর বিষয়বস্তু নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

অডিও রেকর্ডগুলোতে ট্রাম্পের এমন এক রূপ দেখা গেছে, যা সাধারণত জনসমক্ষে দেখা যায় না। বন্ধ দরজার আড়ালে ধনী দাতাদের মন জয় করতে গিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি শুধু তাঁর আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির কথাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ করা শিক্ষার্থীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনার কথাও বলেছিলেন।

পুতিন ও সি চিন পিংয়ের সঙ্গে নিজের কথোপকথনের কথা তুলে ধরে ট্রাম্প দাবি করেন, যদি জো বাইডেনের বদলে তিনি প্রেসিডেন্ট থাকতেন, তাহলে ইউক্রেন ও গাজার যুদ্ধ ঠেকানো যেত। এ দাবি তিনি আগেও করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন। যদিও বাস্তবে দুই যুদ্ধই এখনো থামেনি।

গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ট্রাম্প আবারও পুতিনকে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট শান্তিচুক্তিতে রাজি হচ্ছেন না; বরং যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে অনেক আজেবাজে কথা বলছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি পুতিনের ওপর খুশি নই। আমি তাঁর আচরণে খুবই অসন্তুষ্ট।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ল ন ইউক র ন তহব ল

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা