Prothomalo:
2025-11-03@08:21:30 GMT

নতুন বাদুড় পেল বাংলাদেশ

Published: 9th, July 2025 GMT

দক্ষিণ এশিয়ায় বাদুড় আছে ১৫০ প্রজাতির, সেখানে বাংলাদেশে পাওয়া যায় মাত্র ৩৫টি। দেশের আয়তন কিংবা আবাসের বৈচিত্র্য এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও বাদুড় নিয়ে আমাদের গবেষণার ঘাটতি একটি বড় কারণ। গবেষণার উদ্যোগ যেমন কম, তেমনি আকার-আকৃতি, গুপ্তস্থানে বসবাস, চেনাজানার জটিলতায় দেশের বাদুড় সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি।

স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীর নানা দিক মূলত আমার গবেষণার জগৎ। ফলে বিষয়টি আমাকে বেশ পীড়া দেয়। তাই অন্যান্য গবেষণার পাশাপাশি গত দুই বছর যাবৎ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক অনুদানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছোট পরিসরে কিছু গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করি।

এই গবেষণাকালে গত বছরের এপ্রিলে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা রেমাক্রিতে যাই গুহায় বাস করা বাদুড়ের খোঁজে। সাঙ্গু নদের পাড়ঘেঁষা একটি মারমা পাড়ায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। সেখান থেকে আমাদের গন্তব্য আরও প্রায় দুই কিলোমিটার। সাঙ্গু নদের পশ্চিমে পাহাড়ি পথ। সঙ্গে একজন গবেষক ছাত্র ও থানচি থেকে যোগ দেওয়া একজন গাইড। ওই পাহাড়ি পথও আমাদের অজানা। তাই গন্তব্যে যেতে একজন স্থানীয় গাইডের সন্ধানে থানচি থেকে যোগ দেওয়া গাইড আমাদের নিয়ে গেল পাশের একটি পাড়ায়। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই পাড়ায় বাস করে খুমি সম্প্রদায়।

পরদিন খুব সকালেই রওনা হলাম গুহার উদ্দেশে। আমাদের তিনজনের দলে খুমি পাড়া থেকে যুক্ত হন আরও চারজন। গুহাটি অনেকটা আগ্নেয়গিরির মতো আকৃতি। ফলে ওপর দিক থেকে গুহায় ঢুকতে হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পাহাড় বেয়ে আমরা গুহার মাঝামাঝি উচ্চতা বরাবর খাঁজে দাঁড়াতে সক্ষম হই। কিন্তু গুহার ভেতরে নামার তেমন কোনো পথ নেই। গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে গুহার ভেতর নামার জন্য কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। আমার গবেষক ছাত্র অং শৈ নু মারমা কোনোমতেই আমাকে নামতে দিতে রাজি নয়, নামার পর যদি গুহা থেকে উঠতে না পারি! আমার মধ্যেও সাহসের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিল। ফলে দিকনির্দেশনা দিয়ে খুমি পাড়ার গাইডদের ভেতরে পাঠালাম। ওরা গাছের শিকড় ধরে তর তর করে নেমে গেল নিচে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফিরে এল কয়েকটি বাদুড়ের নমুনা নিয়ে। দু–একটি বাদুড় দেখে উল্লসিত হয়ে উঠলাম। এমন বাদুড় এর আগে তো দেখিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে বাদুড়ের নমুনার দৈহিক ও খুলির মাপজোখ নিলাম। কিন্তু প্রজাতি শনাক্তে তাতেও কোনো সিদ্ধান্তে না আসতে পেরে দাঁতের গঠন পরীক্ষা করি। আর তখনই বেরিয়ে এল বাদুড়ের পরিচয়। প্রায় তিন মাস পর নিশ্চিত হলাম এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি বাদুড়। এই বাদুড়ের ইংরেজি নাম মায়োটিস ব্যাট, অন্য নাম মাউস-ইয়ারড ব্যাট; লাতিন নাম মায়োটিস অ্যানেকটান্স। বাংলায় বলা যায় ইঁদুরকানী বাদুড়। এর কানের গঠন অনেকটা ইঁদুরের কানের মতো, তাই এমন নাম। তা ছাড়া এ বাদুড়ের মুখের চারপাশে কিছু লম্বা লোম থাকে। আকারে ছোট। ঊর্ধ্ববাহুর দৈর্ঘ্য মাত্র ৪৫ মিলিমিটার, লেজ তুলনামূলকভাবে লম্বা, যা প্রায় ৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। কানের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ মিলিমিটার, দেহের তুলনায় কিছুটা লম্বা। এদের ওপরের চোয়ালের তিন নম্বর প্রিমোলার দাঁতটি অতিক্ষুদ্র, যা দাঁতের সারি থেকে ভেতরের দিকে সরে গেছে। এই বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে অন্যান্য নিকটাত্মীয় থেকে এদের আলাদা করা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১২ প্রজাতির ইঁদুরকানী বাদুড়ের দেখা মেলে। কিন্তু এই জাতের বাদুড়ের কোনো রেকর্ড বাংলাদেশে নেই। এই বাদুড় শুধু দেশের জন্য নতুন নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই বেশ বিরল। ফলে প্রতিটি রেকর্ডই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত ম্যামালিয়া নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে এই বাদুড় নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করি। এই বাদুড় নথিভুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে বাদুড়ের সংখ্যা আরও একটি বাড়ল। এই বাদুড়ের বৈশ্বিক মানচিত্রে প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম।

ড.

এম এ আজিজ: অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই ব দ ড় আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। এতে একজন শিক্ষকসহ হোটেলের দুই কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে উভয় পক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির নাম শিপন মিয়া (৩০)। তিনি বড়িকান্দি ইউনিয়নের নুরজাহানপুর গ্রামের মোন্নাফ মিয়া ওরফে মনেক মিয়ার ছেলে। নবীনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই দুজনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে।

গুলিবিদ্ধ আহত ব্যক্তিরা হলেন বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেন (৩৮) এবং হোটেলের দুই কর্মচারী—উপজেলার আলমনগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে ইয়াসিন মিয়া (২০) ও চরলাপাং গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে নুর আলম (১৮)। এমরান উপজেলার শ্যামগ্রামের মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তাঁর ভাই ঢাকায় কর্মরত পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিল্লাল হোসেন।

বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মনেক ডাকাত এলাকাটা শেষ করে ফেলেছেন। তাঁর কারণেই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। মনেক ডাকাতদের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে মনেক ডাকাতের ছেলে নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় মোন্নাফ মিয়া ও তাঁর ছেলে শিপনের দীর্ঘদিন ধরে একক প্রভাব ছিল। তাঁদের সঙ্গে একই এলাকার থোল্লাকান্দি গ্রামের মিস্টার মিয়ার ছেলে আরাফাত মিয়ার বিরোধ চলছিল। শনিবার রাত আনুমানিক নয়টার দিকে বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে শিপন মিয়া আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে আরাফাতের নেতৃত্বে সশস্ত্র একটি দল হোটেলে ঢুকে গুলি চালায়। এতে শিপনসহ হোটেলের দুই কর্মচারী ইয়াসিন ও নুর আলম গুলিবিদ্ধ হন। গুলির শব্দে বাজারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার পর আরাফাত ও তাঁর সহযোগীরা দ্রুত পালিয়ে যান।

শিপনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর নুরজাহানপুরে পৌঁছালে মোন্নাফ মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক গণি শাহ মাজারের অদূরে তালতলায় এমরান হোসেনের কার্যালয়ে হামলা চালান। সেখানে এমরান গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাঁরা থোল্লাকান্দি গ্রামে হামলা চালিয়ে একাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রাতে ঘটনাস্থলে অভিযান চালালেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কারণ, উভয় পক্ষের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ কাউকেই শনিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়নি। তাঁদের হয়তো অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, শিপনের ওপর হামলাকারী আরাফাত থোল্লাকান্দি গ্রামের এমরান হোসেনের আত্মীয়। এ কারণেই এমরানের কার্যালয়ে গিয়ে হামলা এবং তাঁকে গুলি করা হয়েছে।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত শিপন ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। শিপন ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে। ওই ঘটনায় একজন শিক্ষকসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে সবাই পলাতক। তাই কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু: ৩ দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলনের ব
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • খুলনায় ২২ বোতল মাদকসহ যুবক আটক
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি প্রোগ্রামে ডিপ্লোমা, অনলাইন ও অফলাইনে আবেদন ফি ১০০০
  • অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক নিহত