Prothomalo:
2025-07-09@18:12:28 GMT

নতুন বাদুড় পেল বাংলাদেশ

Published: 9th, July 2025 GMT

দক্ষিণ এশিয়ায় বাদুড় আছে ১৫০ প্রজাতির, সেখানে বাংলাদেশে পাওয়া যায় মাত্র ৩৫টি। দেশের আয়তন কিংবা আবাসের বৈচিত্র্য এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও বাদুড় নিয়ে আমাদের গবেষণার ঘাটতি একটি বড় কারণ। গবেষণার উদ্যোগ যেমন কম, তেমনি আকার-আকৃতি, গুপ্তস্থানে বসবাস, চেনাজানার জটিলতায় দেশের বাদুড় সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি।

স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীর নানা দিক মূলত আমার গবেষণার জগৎ। ফলে বিষয়টি আমাকে বেশ পীড়া দেয়। তাই অন্যান্য গবেষণার পাশাপাশি গত দুই বছর যাবৎ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক অনুদানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছোট পরিসরে কিছু গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করি।

এই গবেষণাকালে গত বছরের এপ্রিলে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা রেমাক্রিতে যাই গুহায় বাস করা বাদুড়ের খোঁজে। সাঙ্গু নদের পাড়ঘেঁষা একটি মারমা পাড়ায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। সেখান থেকে আমাদের গন্তব্য আরও প্রায় দুই কিলোমিটার। সাঙ্গু নদের পশ্চিমে পাহাড়ি পথ। সঙ্গে একজন গবেষক ছাত্র ও থানচি থেকে যোগ দেওয়া একজন গাইড। ওই পাহাড়ি পথও আমাদের অজানা। তাই গন্তব্যে যেতে একজন স্থানীয় গাইডের সন্ধানে থানচি থেকে যোগ দেওয়া গাইড আমাদের নিয়ে গেল পাশের একটি পাড়ায়। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই পাড়ায় বাস করে খুমি সম্প্রদায়।

পরদিন খুব সকালেই রওনা হলাম গুহার উদ্দেশে। আমাদের তিনজনের দলে খুমি পাড়া থেকে যুক্ত হন আরও চারজন। গুহাটি অনেকটা আগ্নেয়গিরির মতো আকৃতি। ফলে ওপর দিক থেকে গুহায় ঢুকতে হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পাহাড় বেয়ে আমরা গুহার মাঝামাঝি উচ্চতা বরাবর খাঁজে দাঁড়াতে সক্ষম হই। কিন্তু গুহার ভেতরে নামার তেমন কোনো পথ নেই। গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে গুহার ভেতর নামার জন্য কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। আমার গবেষক ছাত্র অং শৈ নু মারমা কোনোমতেই আমাকে নামতে দিতে রাজি নয়, নামার পর যদি গুহা থেকে উঠতে না পারি! আমার মধ্যেও সাহসের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিল। ফলে দিকনির্দেশনা দিয়ে খুমি পাড়ার গাইডদের ভেতরে পাঠালাম। ওরা গাছের শিকড় ধরে তর তর করে নেমে গেল নিচে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফিরে এল কয়েকটি বাদুড়ের নমুনা নিয়ে। দু–একটি বাদুড় দেখে উল্লসিত হয়ে উঠলাম। এমন বাদুড় এর আগে তো দেখিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে বাদুড়ের নমুনার দৈহিক ও খুলির মাপজোখ নিলাম। কিন্তু প্রজাতি শনাক্তে তাতেও কোনো সিদ্ধান্তে না আসতে পেরে দাঁতের গঠন পরীক্ষা করি। আর তখনই বেরিয়ে এল বাদুড়ের পরিচয়। প্রায় তিন মাস পর নিশ্চিত হলাম এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি বাদুড়। এই বাদুড়ের ইংরেজি নাম মায়োটিস ব্যাট, অন্য নাম মাউস-ইয়ারড ব্যাট; লাতিন নাম মায়োটিস অ্যানেকটান্স। বাংলায় বলা যায় ইঁদুরকানী বাদুড়। এর কানের গঠন অনেকটা ইঁদুরের কানের মতো, তাই এমন নাম। তা ছাড়া এ বাদুড়ের মুখের চারপাশে কিছু লম্বা লোম থাকে। আকারে ছোট। ঊর্ধ্ববাহুর দৈর্ঘ্য মাত্র ৪৫ মিলিমিটার, লেজ তুলনামূলকভাবে লম্বা, যা প্রায় ৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। কানের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ মিলিমিটার, দেহের তুলনায় কিছুটা লম্বা। এদের ওপরের চোয়ালের তিন নম্বর প্রিমোলার দাঁতটি অতিক্ষুদ্র, যা দাঁতের সারি থেকে ভেতরের দিকে সরে গেছে। এই বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে অন্যান্য নিকটাত্মীয় থেকে এদের আলাদা করা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১২ প্রজাতির ইঁদুরকানী বাদুড়ের দেখা মেলে। কিন্তু এই জাতের বাদুড়ের কোনো রেকর্ড বাংলাদেশে নেই। এই বাদুড় শুধু দেশের জন্য নতুন নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই বেশ বিরল। ফলে প্রতিটি রেকর্ডই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত ম্যামালিয়া নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে এই বাদুড় নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করি। এই বাদুড় নথিভুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে বাদুড়ের সংখ্যা আরও একটি বাড়ল। এই বাদুড়ের বৈশ্বিক মানচিত্রে প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম।

ড.

এম এ আজিজ: অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই ব দ ড় আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ঠিকাদার উধাও, থমকে গেছে হাই-টেক পার্ক নির্মাণকাজ

ময়মনসিংহ হাই-টেক পার্কের নির্মাণকাজ থমকে গেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর উধাও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টুব্রু (এলঅ্যান্ডটি) ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভয়েন্টস সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড। এখনও বাকি প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ।

ময়মনসিংহ নগরের কিসমত এলাকায় ৬ দশমিক ১ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন হাই-টেক পার্কটি দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। ২০১৭ সালে দরপত্র আহ্বান করা হলেও ২০২২ সালের জুন মাসে কাজ শুরু হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের জুনে। পরে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ১ বছর বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুনেও কাজ শেষ করতে না পেরে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে ভারতীয় কোম্পানিটি।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ। যে স্থানে একসময় প্রায় আড়াইশ শ্রমিকের কর্মব্যস্ততা ছিল, সেখানে এখন বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীসহ ভারী যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। রোদে-বৃষ্টিতে উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এসব মূল্যবান নির্মাণসামগ্রী প্রকল্পের ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে তুলছে। তাছাড়া পুরো প্রকল্পে কাজ করছেন মাত্র ৩০-৪০ জন শ্রমিক। অথচ দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করার জন্য প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক প্রয়োজন।

কাজ থমকে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে কথা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিনিধি এবং প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ভীতসন্ত্রস্ত’ হয়ে চলে যাওয়ায় পুরো প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ছয়-সাত মাস কাজ বন্ধ থাকার পর এখন আবার অল্প কিছু শ্রমিক কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বছর সময় পেলে কাজ সম্পন্ন করে হস্তান্তর করতে পারব।’

এই অচলাবস্থা কেবল প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নয়, স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হাই-টেক পার্কের কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত পার্কটি বাস্তবায়িত হোক। এটি চালু হলে আমাদের এলাকার চিত্র বদলে যাবে।’

কথা হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী স্বরুপ কুমার পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আইটি বিভাগের একজন ছাত্র হিসেবে আইটি পার্কে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে পারতাম। এ ছাড়া পার্কটি চালু হলে এখানে বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতো।’

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মো. সাহিদুজ্জামান উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, প্রকল্পটি চালু করতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে হলেও কাজটি শেষ করা দরকার। আইটি খাতে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এই প্রকল্প দ্রুত শেষ করা অপরিহার্য।

কাবে নাগাদ কাজ শেষ হতে পারে তা জানতে যোগাযোগ করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব ও ১২ আইটির প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল মুমিন খানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের পর ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভারতে চলে যাওয়ায় কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। ১ বছর সময় বাড়লে কাজটি শেষ করতে পারবেন বলে আশা তাঁর। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারাও কাজে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মাত্র একজন উপসহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল) দিয়ে ১৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প দেখভাল করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে, নতুন লোক নিয়োগ দেওয়া হবে।

জানা গেছে, দেশের ১২টি জেলায় ১২টি আইটি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। অন্যান্য জেলার কাজ ধীরগতিতে এগোলেও সিলেট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কাজ ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ লাখ বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এর মাধ্যমে ৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আসবে বাংলাদেশে। সাততলা এই ভবনে প্লাগ অ্যান্ড পে, ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবিশন, স্টার্টআপ ফ্লোরসহ বেশ কয়েকটি ফ্লোর থাকবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটির বাংলাদেশি প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি এই প্রকল্পে নতুন এসেছি। আমার আগে যিনি ছিলেন তিনি ভারতে চলে গেছেন। এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কথাবার্তা চলছে। অনেক দিন নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। পুনরায় ধাপে ধাপে কাজ শুরু হয়েছে। পুরোদমে ১ বছর কাজ হলে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা রাখি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে বন্ধন জুলাইয়ের...
  • একজন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তকে রক্ষা করতে পারবে না ভারত: শফিকুল আলম
  • ডিপজলের নামে মামলা: মুক্তি ও সনির ফেসবুক পোস্ট
  • নারী ভক্তের মামলার পর ডিপজল বললেন, আল্লাহ বিচার করবেন
  • মামলার পর মুখ খুললেন ডিপজল
  • ‘বিশ্ব আর কোনো সম্রাট চায় না’, ট্রাম্পকে লুলার হুঁশিয়ারি
  • ঠিকাদার উধাও, থমকে গেছে হাই-টেক পার্ক নির্মাণকাজ
  • নাসিরনগরে ছাত্রদল নেতার মৃত্যুর জেরে ৪০ বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট, গ্রামছাড়া শতাধিক পরিবার
  • তিনদিন ধরে বাড়িঘরে হামলা লুটপাট চলছে