যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন যে, প্রতিটি দেশ তার প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে চায়। কিন্তু ব্যাপক শুল্ক আরোপের ৯০ দিনের বিরতির সময়, যুক্তরাষ্ট্র মাত্র তিনটি দেশের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়েছে। খবর আনাদোলুর। 

গত ২ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। বেশিরভাগ দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক হার এবং ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেন তিনি। ট্রাম্পের এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা ও আর্থিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। 

পরে উত্তেজনা কমাতে পরে হোয়াইট হাউজ ১০ শতাংশ বাদে সকলের জন্য কার্যকর শুল্কনীতি ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে। তখন ট্রাম্প জানান, এই ৯০ দিনে তিনি দেশগুলোর সঙ্গে ৯০টি বাণিজ্য চুক্তি করতে চান। ওই সময় পর্যন্ত দেশগুলোকে উচ্চহারের শুল্কারোপ থেকে ছাড় দেন ট্রাম্প।

আরো পড়ুন:

উড়োজাহাজ ও ফুড ড্রিংক কিনতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেওয়া হবে: বাণিজ্য সচিব

ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনয়নের সুপারিশ নেতানিয়াহুর

তবে চীনের সঙ্গে অচলাবস্থা আরো তীব্র হয়, যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে চীনা পণ্যের ওপর মোট শুল্ক ১৪৫ শতাংশে নিয়ে আসে। প্রতিশোধ নিতে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে বেইজিং। 

আনাদোলুর প্রতিবেদন বলছে, ট্রাম্প ৯০ দিনের মধ্যে ৯০টি চুক্তি নিশ্চিত করার ঘোষণা দিলেও, ফলাফল ট্রাম্পের সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়ে অনেক কম।

৭ মে, ট্রাম্প ‘সম্মানিত দেশ’ হিসেবে অভিহিত একটি চুক্তির ঘোষণা দেন। পরে তিনি প্রকাশ করেন যে, যুক্তরাজ্যই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

চুক্তির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ গাড়ির ওপর শুল্ক ১০ শতাংশে কমিয়ে এনেছে। নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে এতে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম খাতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে মূল ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখা হয়। বিনিময়ে যুক্তরাজ্য আরো আমেরিকান গরুর মাংস ও ইথানল কিনতে সম্মত হয়।

মে মাসে জেনেভায় আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ কমে যায়, কারণ উভয় দেশ সাময়িকভাবে পারস্পরিক শুল্ক কমাতে সম্মত হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ৯০ দিনের জন্য চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে কমিয়ে এনেছে, অপরদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে এনেছে। জুন মাসে লন্ডনে দ্বিতীয় দফার আলোচনা জেনেভা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে।

গত মাসের শেষের দিকে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন যে, ভারতের সঙ্গেও খুব শিগগির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে।

জুলাইয়ের শুরুতে, ট্রাম্প ভিয়েতনামের সঙ্গে তৃতীয় চুক্তির ঘোষণা করেন। ওই চুক্তির আওতায়, ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে। এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে ভিয়েতনামের মধ্য দিয়ে পরিবহন করা পণ্যগুলোতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে। বিনিময়ে, মার্কিন পণ্যগুলো ভিয়েতনামের বাজারে কার্যত শুল্কমুক্ত প্রবেশ করবে।

এর আগে, ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

বাণিজ্য চুক্তির জন্য অন্যান্য দেশকে চিঠি পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প 

ট্রাম্প প্রশাসন ওয়াশিংটনের সঙ্গে এখনও চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি এমন দেশগুলোকে চিঠি পাঠাতে শুরু করেছে। যেমন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট বলেছেন, আগামী দিনে আরো ১২টি দেশ চিঠি পাবে এবং শুল্ক স্থগিতাদেশ ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হবে।

চিঠি অনুসারে, মালয়েশিয়া, কাজাখস্তান ও তিউনিসিয়া ২৫ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বসনিয়া ৩০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৩২ শতাংশ, বাংলাদেশ ও সার্বিয়া ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড ৩৬ শতাংশ এবং লাওস ও মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

এখন পর্যন্ত, জাপান, ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আরো চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে, যা শুল্ক কৌশলের দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই অনিশ্চয়তা ওয়াশিংটনকে স্বল্পমেয়াদি হুমকিকে স্থায়ী বাণিজ্য বাধায় পরিণত করতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় পরিণতির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প র জন য ৯০ দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ