৯০ দিনে মাত্র ৩টি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 9th, July 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন যে, প্রতিটি দেশ তার প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে চায়। কিন্তু ব্যাপক শুল্ক আরোপের ৯০ দিনের বিরতির সময়, যুক্তরাষ্ট্র মাত্র তিনটি দেশের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়েছে। খবর আনাদোলুর।
গত ২ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। বেশিরভাগ দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক হার এবং ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেন তিনি। ট্রাম্পের এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা ও আর্থিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল।
পরে উত্তেজনা কমাতে পরে হোয়াইট হাউজ ১০ শতাংশ বাদে সকলের জন্য কার্যকর শুল্কনীতি ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে। তখন ট্রাম্প জানান, এই ৯০ দিনে তিনি দেশগুলোর সঙ্গে ৯০টি বাণিজ্য চুক্তি করতে চান। ওই সময় পর্যন্ত দেশগুলোকে উচ্চহারের শুল্কারোপ থেকে ছাড় দেন ট্রাম্প।
আরো পড়ুন:
উড়োজাহাজ ও ফুড ড্রিংক কিনতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেওয়া হবে: বাণিজ্য সচিব
ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনয়নের সুপারিশ নেতানিয়াহুর
তবে চীনের সঙ্গে অচলাবস্থা আরো তীব্র হয়, যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে চীনা পণ্যের ওপর মোট শুল্ক ১৪৫ শতাংশে নিয়ে আসে। প্রতিশোধ নিতে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে বেইজিং।
আনাদোলুর প্রতিবেদন বলছে, ট্রাম্প ৯০ দিনের মধ্যে ৯০টি চুক্তি নিশ্চিত করার ঘোষণা দিলেও, ফলাফল ট্রাম্পের সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়ে অনেক কম।
৭ মে, ট্রাম্প ‘সম্মানিত দেশ’ হিসেবে অভিহিত একটি চুক্তির ঘোষণা দেন। পরে তিনি প্রকাশ করেন যে, যুক্তরাজ্যই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
চুক্তির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ গাড়ির ওপর শুল্ক ১০ শতাংশে কমিয়ে এনেছে। নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে এতে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম খাতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে মূল ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখা হয়। বিনিময়ে যুক্তরাজ্য আরো আমেরিকান গরুর মাংস ও ইথানল কিনতে সম্মত হয়।
মে মাসে জেনেভায় আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ কমে যায়, কারণ উভয় দেশ সাময়িকভাবে পারস্পরিক শুল্ক কমাতে সম্মত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ৯০ দিনের জন্য চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে কমিয়ে এনেছে, অপরদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে এনেছে। জুন মাসে লন্ডনে দ্বিতীয় দফার আলোচনা জেনেভা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে।
গত মাসের শেষের দিকে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন যে, ভারতের সঙ্গেও খুব শিগগির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে।
জুলাইয়ের শুরুতে, ট্রাম্প ভিয়েতনামের সঙ্গে তৃতীয় চুক্তির ঘোষণা করেন। ওই চুক্তির আওতায়, ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে। এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে ভিয়েতনামের মধ্য দিয়ে পরিবহন করা পণ্যগুলোতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে। বিনিময়ে, মার্কিন পণ্যগুলো ভিয়েতনামের বাজারে কার্যত শুল্কমুক্ত প্রবেশ করবে।
এর আগে, ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
বাণিজ্য চুক্তির জন্য অন্যান্য দেশকে চিঠি পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প
ট্রাম্প প্রশাসন ওয়াশিংটনের সঙ্গে এখনও চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি এমন দেশগুলোকে চিঠি পাঠাতে শুরু করেছে। যেমন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট বলেছেন, আগামী দিনে আরো ১২টি দেশ চিঠি পাবে এবং শুল্ক স্থগিতাদেশ ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হবে।
চিঠি অনুসারে, মালয়েশিয়া, কাজাখস্তান ও তিউনিসিয়া ২৫ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বসনিয়া ৩০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৩২ শতাংশ, বাংলাদেশ ও সার্বিয়া ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড ৩৬ শতাংশ এবং লাওস ও মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
এখন পর্যন্ত, জাপান, ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আরো চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে, যা শুল্ক কৌশলের দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই অনিশ্চয়তা ওয়াশিংটনকে স্বল্পমেয়াদি হুমকিকে স্থায়ী বাণিজ্য বাধায় পরিণত করতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় পরিণতির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প র জন য ৯০ দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।