২৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া রাফিয়ার ক্লাস করা হলো না
Published: 7th, August 2025 GMT
এই তো সেদিন, বিভাগের ব্যাচের মেসেঞ্জার গ্রুপে সবার সামনে সগৌরবে নিজের পরিচয় দিলেন। সবাই মিলে ১৭ আগস্ট ক্লাস করবেন ভেবে কত আনন্দ ছিল তার মনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস, নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ সবকিছুর জন্যই মুখিয়ে ছিল মেয়েটি। কিন্তু সব প্রস্তুতি, অপেক্ষা আর স্বপ্ন থমকে দাঁড়াল একটি দুঃসংবাদের ভারে।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী রাফিয়া সুলতানা কুইন। বুধবার (৬ আগস্ট) রাতের অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিরতরে তার পথচলা থেমে যায়।
রাফিয়া সুলতানা কুইন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা আব্দুল খালেক আহমেদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
জানা গেছে, কয়েকদিন আগে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন কুইন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়লে চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। পরে বুধবার রাত ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রাফিয়া কুইন ভোলাহাট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। অসাধারণ ফলাফল এবং মেধার ভিত্তিতে তিনি দেশের ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯টি ইউনিটে ভর্তির সুযোগ পান।
রাফিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এ’ ইউনিটে ৪৫২তম, ‘বি’ ইউনিটে ৪৭তম এবং ‘সি’ ইউনিটে ৪৩তম হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬তম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৩৯তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে ২২০তম এবং ‘ডি’ ইউনিটে ২৫৬তম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬২৯তম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০তম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৮তম হয়ে উত্তীর্ণ হন।
এছাড়া গুচ্ছভুক্ত ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৮তম স্থান অধিকার করে এই মেধাবী শিক্ষার্থী। সবশেষে নিজের পছন্দের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন রাফিয়া। তবে ক্লাস শুরুর আগেই চিরবিদায় নিতে হলো তাকে।
ভোলাহাটে বাসা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো.
তিনি আরো লিখেছেন, “জীবন কত নিষ্ঠুর, ফুল ফোটার আগেই ঝড়িয়ে দেয়। কত স্বপ্ন, কত উদ্দীপনা নিয়ে ক্যাম্পাস আসার কথা ছিল তার। অথচ আজ সে আর নেই। কোথাও নেই। তার স্বপ্নে নেই, বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে নেই, বাস্তবেও আর নেই।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউন ট আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে তেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান আওয়ামী লীগ নেতা মেহেদী গ্রেপ্তার
সিদ্ধিরগঞ্জে তেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান এবং আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত আনোয়ার হোসেন মেহেদীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতা ও হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় দীর্ঘ সময় পলাতক থাকার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে র্যাব-১১ এর একটি বিশেষ দল তাকে আটক করে। পরে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়। দুপুরে পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনূর আলম রোববার দুপুরে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
থানা সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন মেহেদীর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দুটি হত্যা মামলা ও একটি হত্যাচেষ্টার মামলাসহ মোট তিনটি মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলোতে তিনি এজাহার ভুক্ত আসামি এবং দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন।
মামলা গুলো হলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এফআইআর নং-২৫ (তাং- ২৬/৮/২০২৪), এফআইআর নং-২৭ (তাং- ২৭/৮/২০২৪) এবং এফআইআর নং-২৫ (তাং- ২২/১০/২০২৪)। এর পাশাপাশি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে জালিয়াতিসহ আরও একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, মেহেদী হত্যা মামলার পলাতক আসামি ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের একটি চৌকস দল তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আনোয়ার হোসেন মেহেদী সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল বর্মাস্ট্যান্ড এলাকার আফির উদ্দিন মাদবরের ছেলে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মেহেদী ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে গোদনাইলের পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে তেল চুরি করে আসছিল। অভিনব কৌশলে তেল চুরি করে তারা কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছে।
তার এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের কারণে রাষ্ট্র যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তেমনি এলাকায় একটি অপরাধী চক্রও গড়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মেহেদী তার রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এলাকায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তার তেল চোর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেত না।
প্রতিবাদ করলে হুমকি-ধমকি ও নির্যাতনের শিকার হতে হতো। তেল চুরির পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ভূমি দখল ও চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আনোয়ার হোসেন মেহেদী ও তার বাহিনী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস অবস্থান নেয়।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি তার দলবল নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান, যা পরে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মতো ঘটনায় রূপ নেয়। এই সহিংসতাকে কেন্দ্র করেই তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল, যার ভিত্তিতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।
তার গ্রেপ্তারের খবরে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। সাধারণ মানুষ এই শীর্ষ তেল চোর ও তার সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যদেরও আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে।