নিউইয়র্কের পথে প্রধান উপদেষ্টা
Published: 22nd, September 2025 GMT
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত ১টা ৪০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে।
আরো পড়ুন:
রাতে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্ক যাচ্ছেন রবিবার
সফরসূচি অনুযায়ী, অধ্যাপক ইউনূস ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এছাড়া, তিনি একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। ভাষণে তিনি বিগত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমূলক উদ্যোগ, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার তুলে ধরবেন।
সফরসঙ্গী হিসেবে ছয়জন রাজনৈতিক নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রয়েছেন। তারা হলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও জামায়াত নেতা নকিবুর রহমান তারেক এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা.
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এটি জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রথমবারের মতো এমন একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক।
এই বৈঠক থেকে কার্যকর সমাধান উদ্ভাবনের জন্য গত মাসে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন পেয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ২৫ সেপ্টেম্বর যুবকদের জন্য কর্মপরিকল্পনার ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেবেন। এছাড়া, তিনি বাংলাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরবেন। ভাষণে তিনি শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন, নিরাপদ অভিবাসন, অবৈধ অর্থপাচার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়ও তুলে ধরবেন।
সফরকালে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবং বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভা, পিসবিল্ডিং কমিশন মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক, ‘জি-৭৭ ও চীন’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক, নারী-শান্তি ও নিরাপত্তা ফোকাল পয়েন্ট নেটওয়ার্ক, ওআইসি বার্ষিক সমন্বয় সভা, বিমসটেক, সিকা এবং এলডিসি মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
আগামী ২ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: বাসস
ঢাকা/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প ট ম বর পরর ষ ট র ন উইয়র ক অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে ঢাকার আদালতের আদেশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) থাকা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করে ফেরত আনার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত এ আদেশ দেন।
গতকাল রোববার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার (৮ কোটি ১০ হাজার ডলার) বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক পাচারে জড়িত ছিল বলে সিআইডির আবেদনের ভিত্তিতে আদালত এ নির্দেশ দেন।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনার মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। আর আরসিবিসির মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পায় বাংলাদেশ। প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার অন্য উদ্যোগে ফেরত আসে। এখন আরসিবিসির কাছে পুরো ৮১ মিলিয়ন ডলারই ফেরত চাওয়া হচ্ছে, যেটা আদালত বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন।
আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে করা মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, এর সঙ্গে সিআইডির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সিআইডির কাছে যে মামলা আছে, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। সমাপ্তির পথে, খুব দ্রুতই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
আদালতের আদেশে বলা হয়, তদন্তে সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ এবং ফিলিপাইন সরকারের পাঠানো মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পর্যালোচনা করে প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা অবৈধভাবে ৮১ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেন, আদালতের আদেশ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশের কপি (অনুলিপি) পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে টাকা দেশে ফেরত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির তথ্য ১ দিন পর জানতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা ২৪ দিন গোপন রাখে। ৩৩তম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।
সিআইডির ভাষ্য, জাতিসংঘের কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম (ইউএনটিওসি), ফিলিপাইনের আইন এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) নির্দেশনার আলোকে এবং সর্বশেষ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার এখন ফিলিপাইনের সরকারের কাছ থেকে এই অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে।
সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা (মেসেজ) পাঠিয়ে ফেডে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।
অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মিলছিল না।
২০২০ সালের ২৭ মে ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাতের অভিযোগে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই মামলা চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেন নিউইয়র্কের আদালত। তবে ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে। ওই সময় করা এক মামলায় ফিলিপাইনের আদালত ২০১৯ সালে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে মুদ্রা পাচারের আট দফা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলায়ও তাঁকে আসামি করা হয়।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিটির সময় গত ৮ জুলাই আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ দেওয়ার কথা।
এর আগে গত ১১ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ছয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে সরকার। এ কমিটিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তকাজের অগ্রগতি, এ-সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য ওই কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পরে আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।
পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা হলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা।