ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানি হচ্ছে এক লাখ মেট্রিক টন চাল
Published: 15th, January 2025 GMT
ভারত ও পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের ও রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে এক লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করবে সরকার। পৃথক দুটি ক্রয় প্রস্তাবে এই চাল কেনা হবে। এতে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনায় ব্যয় হবে ২৭৭ কোটি ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা এবং রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বাকি ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ৩০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এক লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ৫৮১ কোটি ৪১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, পাকিস্তানের সঙ্গে সরকার-সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
দেশের সরকারি খাদ্য মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল জিটুজি পদ্ধতিতে পাকিস্তান থেকে আমদানির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো হয়। বাংলাদেশের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পাকিস্তান চাল সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪৯৯ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-৬ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার একটি প্রস্তাবেও অনুমোদন দেয় কমিটি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস হতে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
দেশের সরকারি খাদ্য মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ৬টি জমা পড়ে। ৬টি প্রস্তাবই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ভারতের মেসার্স গুরুদিও এক্সপোর্টস করপোরেশনের কাছ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন ৪৫৪.
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দরপত র র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজস্ব বাড়াতে বড় পরিকল্পনা
দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে কমতে পারে বৈদেশিক সহায়তা। বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হতে পারে। এরই আলোকে আগামী তিন অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ২০ লাখ ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের(এনবিআর) আওতায় আদায়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ১৮ লাখ ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
রাজস্ব আদায় বাড়াতে এই বড় পরিকল্পনার তথ্য জানা গেছে অর্থ বিভাগ ও এনবিআর সূত্রে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি এক প্রাক্কলনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে রাজস্ব খাত থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর থেকে আসবে ৫ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে এনবিআর থেকে আসবে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর থেকে আদায়ের পরিকল্পনা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
এদিকে, বাজেট পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেটি অর্জন করা তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জন করা সম্ভব হয় না। গত আট অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি। আর এই ধরনের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে একধরনের ‘সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ( আইআরডি)’।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সম্পাদিত বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে আইআরডি।
কাক্ষিতমাত্রায় কর আদায়ে মোটা দাগে চারটি সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে আইআরডি। এগুলো হচ্ছে—কর পরিসর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জরিপ কার্যক্রমে পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা; আন্তঃকর ব্যবস্থাপনায় তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা; দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদির অভাব।
অন্যদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর মতে, সংস্থাটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জনবল স্বল্পতা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অপ্রতুলতা।
আইআরডি’র তথ্যমতে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
এনবিআরের সাময়িক তথ্য মতে, গত অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসাবে মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব কম আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।
একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়, ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু বছর শেষে তাও আদায় করা সম্ভব হয়নি। সে বছর রাজস্ব আদায় হয়েছিল মাত্র ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। একইভাবে ২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও পরে তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বছর শেষে সেটিও আদায় করা সম্ভব হয়নি।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেওয়া ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময় এসে দেখা যায় কোনোভাবেই এই টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে না। ফলে টার্গেট থেকে ১৬ হাজার ২১০ কোটি টাকা কাটছাঁট করে সংশোধিত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারে কাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ের প্রকৃত পরিসংখ্যান হচ্ছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা; যা কিনা সংশোধিত রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা কম।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা