ভারত তিস্তার উজানে বাঁধ দিয়ে এ দেশকে পানিবঞ্চিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু। তিনি বলেছেন, তিস্তা চুক্তি এই জনপদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। স্বৈরশাসকরা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করেননি, বরং সব সময় ভারতের পক্ষে তারা অবস্থান নিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এ কথাও বলেছেন, ‘আমি জীবনে ভারতকে যা দিয়েছি, তা তারা চিরদিন মনে রাখবে।’

শনিবার সন্ধ্যায় কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সরকারি মীর ইসমাইল হোসেন কলেজ মাঠে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশের প্রধান অতিথি দুলু সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তিস্তা নদী বহমান ছিল, তা এখন শুকিয়ে গেছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণ করেছিলেন সেচের জন্য। কিন্তু ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে পানি থেকে বঞ্চিত করেছে।

আসাদুল হাবিব দুলু আরও বলেন, বর্ষাকালে হঠাৎ পানি ছেড়ে দিচ্ছে। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি মানুষ-জনপদ খান খান হয়ে যাচ্ছে। যখন পানির প্রয়োজন, তখন গোটা তিস্তা নদী ধু-ধু বালুচর। একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, তিস্তায় সংস্কারের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণের জন্য। যতটুকু জানা গেছে, চীন একটি প্রকল্প তৈরি করতে চেয়েছিল। তারা সরকারের সঙ্গে চুক্তিও করেছিল।

সে চুক্তি ভারতের আপত্তির কারণে বাস্তবায়ন হয়নি অভিযোগ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আমরা এই জনপদের মানুষকে সংগঠিত করতে চাচ্ছি, দাবি উচ্চারণ করতে চাচ্ছি। তিস্তাকে বাঁচাতে হবে, এই জনপদের মানুষকে বাঁচাতে হবে। একটা মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে জনপদের মানুষের জীবন-জীবিকা উদ্ধার করতে হবে।’

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ জেলার বাসিন্দাকে নিয়ে বৃহৎ কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা অনুযায়ী এ সমাবেশে করা হয়। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু, হাসিবুর রহমান হাসিব, উপজেলা বিএনপির নেতা আনিছুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, জাকির হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র র রহম ন জনপদ র

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর জুলাই সনদ চূড়ান্ত হবে

রাষ্ট্রের কোন কোন ক্ষেত্রে কী কী সংস্কার আনা হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হলেও এখন পর্যন্ত জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। অন্যদিকে প্রস্তাবিত সংস্কারের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত বা আলোচনা হয়নি।

বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঠিক করা বা জুলাই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা না হলে বেশ কিছু দলের সনদে সই না করার আশঙ্কা আছে। তাই এ বিষয়ে একটি ঐকমত্য হওয়ার পরই জুলাই জাতীয় সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হতে পারে। এ কারণে দলগুলোর স্বাক্ষর নিয়ে জুলাই সনদ গ্রহণে একটু দেরি হতে পারে।

বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিজেরা আগে আলোচনা করবে। সনদের খসড়া চূড়ান্ত করার পর বাস্তবায়ন পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া বিষয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার কথা ভাবছে কমিশন। জুলাই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার বিষয়টি আলোচনায় আছে। যাতে ভবিষ্যতে এই সনদ বাস্তবায়নে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকে। কয়েকটি রাজনৈতিক দলও কীভাবে জুলাই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা যায়, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলাপ–আলোচনা করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত করার কাজটি কমিশন দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে চায়। দলগুলোর কাছ থেকে যত দ্রুত মতামত পাওয়া যাবে, তত দ্রুত এটা চূড়ান্ত করা হবে। আলী রীয়াজ, সহসভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়। দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের আলোচনার মাধ্যমে আসা ঐকমত্য ও সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। জুলাই মাসের মধ্যে এই সনদ তৈরি করার লক্ষ্য ছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের। এ সময়ের মধ্যে আলোচনা শেষ হলেও সনদের খসড়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বে আলোচনার মাধ্যমে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলোসহ জুলাই সনদের একটি খসড়া দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১৫টি দল তাদের মতামত দিয়েছে। সেখানে সনদের খসড়ার কিছু বিষয় নিয়ে কোনো কোনো দল আপত্তি জানিয়েছে। তাই এই খসড়া আবার সংশোধন করা হবে। প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন করে নতুন খসড়া আবার দলগুলোর কাছে ফেরত পাঠানো হবে। তারপর খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। এটি করতে সপ্তাহখানেক লাগতে পারে।

মোটাদাগে জুলাই সনদের খসড়ায় তিনটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে আছে এই সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় অংশে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার উল্লেখ। আর তৃতীয় অংশে থাকছে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার। সে হিসেবে বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও সনদের অংশ। সেখানে বলা আছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে। বিএনপি এ ধরনের অঙ্গীকারের বিষয়ে একমত।

জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কিছু দল বলছে, জুলাই জাতীয় সনদকে একটি আইনি ভিত্তি দিতে হবে। না হলে এই সনদ অর্থহীন হবে। জামায়াত মনে করে একটি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, অধ্যাদেশ, গণভোট বা ফরমান জারির মাধ্যমে সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া যায়।

এনসিপি বলছে, ‘লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (আইনগত কাঠামো আদেশ), গণপরিষদ নির্বাচন অথবা গণভোট—যেকোনো পদ্ধতিতে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। কোন পদ্ধতিতে সেটি হবে, সেটা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে।

মোটাদাগে জুলাই সনদের খসড়ায় তিনটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে আছে এই সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় অংশে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার উল্লেখ। আর তৃতীয় অংশে থাকছে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার। সে হিসেবে বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও সনদের অংশ।

গত বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার শেষ দিনে জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে আলোচনার দাবি তুলেছিল। তবে সেদিন বিএনপির পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক করার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কর্মপরিধির মধ্যে পড়ে কি না। তবে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, জুলাই সনদকে একটি অধ্যাদেশের মধ্যে আনা হলে সে ক্ষেত্রে বিএনপি সম্মত হতে পারে। এ বিষয়ে বিএনপিসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া চূড়ান্ত করার কাজটি কমিশন দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যত দ্রুত মতামত পাওয়া যাবে, তত দ্রুত এটা চূড়ান্ত করা হবে।

বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন আশা করে, যে জাতীয় সনদ তৈরি হবে, সেটি বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা তৈরি করা যায় কি না, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিবেচনা করবে। কমিশনও নিজেদের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা করবে। সম্ভবত এক পর্যায়ে দলগুলোর সঙ্গেও এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হবে।

জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া চূড়ান্ত করার কাজটি কমিশন দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যত দ্রুত মতামত পাওয়া যাবে, তত দ্রুত এটা চূড়ান্ত করা হবে।জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ যেসব বিষয়ে ঐকমত্য

গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেয়। পরে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে আইন-বিধি সংস্কার করে বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়ন সম্ভব, এমন অনেকগুলো সুপারিশকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

অন্যদিকে ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে ৩৩টি দলের সঙ্গে (২০ মার্চ-১৯ মে) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক আলোচনা করে কমিশন। প্রথম পর্বে ৬৫টির বেশি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। এ পর্বে ১৯টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত বা ঐকমত্য হয় ৯টি বিষয়ে।

দ্বিতীয় পর্বে যে বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো হলো সংসদীয় কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, পুলিশ কমিশন গঠন এবং রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভিন্নমত ছিল। তবে ২৯টি দল একমত হওয়ায় এটিকে ঐকমত্য হিসেবে বিবেচনা করেছে কমিশন।

ভিন্নমতসহ সিদ্ধান্ত

দ্বিতীয় পর্বে ১০টি বিষয়ের সিদ্ধান্তে কোনো কোনো দলের ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) আছে। সেগুলো হলো—সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিধান, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও ক্ষমতা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, রাষ্ট্রের মূলনীতি ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ