ভারত তিস্তায় বাঁধ দিয়ে পানিবঞ্চিত করেছে: দুলু
Published: 26th, January 2025 GMT
ভারত তিস্তার উজানে বাঁধ দিয়ে এ দেশকে পানিবঞ্চিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু। তিনি বলেছেন, তিস্তা চুক্তি এই জনপদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। স্বৈরশাসকরা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করেননি, বরং সব সময় ভারতের পক্ষে তারা অবস্থান নিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এ কথাও বলেছেন, ‘আমি জীবনে ভারতকে যা দিয়েছি, তা তারা চিরদিন মনে রাখবে।’
শনিবার সন্ধ্যায় কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সরকারি মীর ইসমাইল হোসেন কলেজ মাঠে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশের প্রধান অতিথি দুলু সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তিস্তা নদী বহমান ছিল, তা এখন শুকিয়ে গেছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণ করেছিলেন সেচের জন্য। কিন্তু ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে পানি থেকে বঞ্চিত করেছে।
আসাদুল হাবিব দুলু আরও বলেন, বর্ষাকালে হঠাৎ পানি ছেড়ে দিচ্ছে। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি মানুষ-জনপদ খান খান হয়ে যাচ্ছে। যখন পানির প্রয়োজন, তখন গোটা তিস্তা নদী ধু-ধু বালুচর। একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, তিস্তায় সংস্কারের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণের জন্য। যতটুকু জানা গেছে, চীন একটি প্রকল্প তৈরি করতে চেয়েছিল। তারা সরকারের সঙ্গে চুক্তিও করেছিল।
সে চুক্তি ভারতের আপত্তির কারণে বাস্তবায়ন হয়নি অভিযোগ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আমরা এই জনপদের মানুষকে সংগঠিত করতে চাচ্ছি, দাবি উচ্চারণ করতে চাচ্ছি। তিস্তাকে বাঁচাতে হবে, এই জনপদের মানুষকে বাঁচাতে হবে। একটা মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে জনপদের মানুষের জীবন-জীবিকা উদ্ধার করতে হবে।’
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ জেলার বাসিন্দাকে নিয়ে বৃহৎ কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা অনুযায়ী এ সমাবেশে করা হয়। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু, হাসিবুর রহমান হাসিব, উপজেলা বিএনপির নেতা আনিছুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, জাকির হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র র রহম ন জনপদ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক
অক্টোবরের প্রথম দিকে লম্বা এক ছুটিতে বেড়াতে গেলাম বগুড়া। দেশের উত্তরের জনপদ বরাবরই আমার পছন্দ। মানুষ কম, হালকা বসতি। পথে বা হাটবাজারে ততটা ভিড়ভাট্টা নেই। বাজারে কম দামে টাটকা শাকসবজি মেলে। এসব কেনার চেয়ে দেখেই তুমুল আনন্দ পাই। নিঝুম গ্রামের ভেতর ফসলের মাঠে ছড়িয়ে থাকা বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি বেশ উপভোগ করি। যত দূর চোখ যায়Ñ গ্রামের পর গ্রাম। মুঠো মুঠো সবুজের ভেতর এঁকেবেঁকে ছুটে চলা মেঠো পথ মাড়িয়ে আমরা প্রতিদিন দূরে কোথাও হারিয়ে যাই। দিনের মুহূর্তগুলো মানুষের জীবনাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা নিপুণভাবে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যেতে পারে,Ñ এসব গ্রামে না এলে তা বোঝার উপায় নেই। কৃষিনির্ভর এই জনপদে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা যেন অনিবার্য নিয়তি।
বগুড়ার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে, দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে মনে হলো যথেষ্ট নয়! চোখের তৃষ্ণা মেটেনি। মনের ক্ষুধাও যায়নি! তখনই মনে পড়ল নওগাঁর ঘুঘুডাঙ্গার বিখ্যাত তালসড়কটির কথা। এত কাছে এসে তালসড়কটি দেখতে যাব না, তা কি হয়? স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ বললেন, ‘বগুড়া থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টারই তো জার্নি। ঘুরে আসুন।’ আমারও মনে হলো, এমন একটি অসাধারণ দৃশ্যের জন্য এই দূরত্ব কিছুই না।
সকালে তুমুল বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার থেমেও গেল। গাড়িতে ওঠার সময় স্থলপদ্মের গাছটি চোখে পড়ল। গাছভর্তি ফুলগুলো বৃষ্টির দাপটে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। অথচ বিকেলে ভেবে রেখেছিলাম, সকালে শরতের মধুর আলোয় স্থলপদ্মের ছবি তুলব। তা আর হলো না। দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। প্রথমে গেলাম নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন স্বপ্নমণ্ডিত সেই তালসড়কে পৌঁছাই, তখন ঠিক দুপুরবেলা।
কিন্তু দুপুর হলেও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর তালসড়ক। শুধু বৃহত্তর রাজশাহী নয়, দূরদূরান্ত থেকেও পর্যটকেরা এখানে আসেন। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নে এই তালসড়কের অবস্থান। মূলত ঘুঘুডাঙ্গা-শিবপুর সড়কের দুপাশজুড়ে থাকা বীথিবদ্ধ তালগাছের জন্যই সড়কটি ‘তালসড়ক’ বা ‘তালতলী’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। হাজীনগর গ্রামের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে এই তালসড়কের অবস্থান।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও খালপাড়ে ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে কয়েক লাখ তালগাছ। তখন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট, রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর উপজেলার রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছে অনেক তালগাছ। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছই হারিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বেঁচে আছে কিছু। তবে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গার এই গাছগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। বর্তমানে গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু হওয়ায় রাস্তার দুপাশে শোভাবর্ধন করছে।
একসময় নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কটি ছিল একটি মেঠো পথ। ২০১২ সালের দিকে সড়কটি পাকা করা হয়। বর্তমানে তালসড়কের দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ থাকায় সড়কটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
ভাদ্র মাসে তাল পাকার মৌসুমে তালসড়ক ঘিরে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। নানা স্বাদের তালের পিঠা এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। তবে বেড়াতে আসা পর্যটকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এখানে মানসম্পন্ন পর্যটনসেবা থাকা প্রয়োজন।
শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলই নয়, বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানেও প্রচুর পরিমাণে তালগাছ চোখে পড়ে। খেতের আলপথ, বাড়ির সীমানা, খালপাড়, পুকুরপাড় বা পথের ধারে এসব সুদৃশ্য তালগাছ প্রকৃতিতে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে। দেশের বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে থাকা এসব তালগাছের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও আছে। দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দৃশ্যমান তালগাছের রস থেকে ভালো মানের সুস্বাদু গুড় ও মিছরি তৈরি করা হয়। বাজারে এসব গুড়-মিছরির চাহিদাও ব্যাপক। আমাদের দেশেও এসব গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে তালের গুড় তৈরি করা সম্ভব। প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার।
মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক