ড্রেপ্যাক ডিজিটাল রাইটস সম্মেলন অনুষ্ঠিত
Published: 4th, February 2025 GMT
ডিজিটাল রাইটস, ইন্টারনেট গভর্নেন্স, অনলাইন ফ্রিডমসহ ইন্টারনেট সম্পর্কিত ‘ড্রেপ্যাক ডিজিটাল রাইটস কনভেনিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রগ্রেসিভ কমিউনিকেশনস (এপিসি) ও এনগেজমিডিয়ার সহযোগিতায় ডিজিটালি রাইট লিমিটেড এ সম্মেলনের আয়োজন করে। এটি ডিজিটাল রাইটস এশিয়া-প্যাসিফিকের (ড্রেপ্যাক) জাতীয় পর্যায়ের তৃতীয় সম্মেলন।
সম্মেলনে মানবাধিকার কর্মী, নীতিনির্ধারক, মিডিয়াকর্মী, আইন বিশেষজ্ঞ, একাডেমিক, শিল্পী এবং বেসরকারি প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ নিয়ে আলোচনা করেন। সম্মেলনে আইসিটি বিষয়ক নীতিনর্ধারণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অনলাইন নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মিসইনফরমেশন বিষয়ে আলোচনা হয়।
‘টুয়ার্ডস এ ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ডিজিটাল স্পেস’ শীর্ষক উদ্বোধনী সভায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড.
এপিসির এশিয়া ডিজিটাল রাইটসের প্রধান পভিত্রা রামানুজাম সেশনটি পরিচালনা করেন। সম্মেলনে মৌলিক অধিকারের সুরক্ষায় অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল নীতির প্রয়োজনীতায় জোর দেওয়া হয়।
‘অ্যাড্রেসিং ইন্টারনেট গভর্নেন্স থ্রু ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি’ শীর্ষক আলোচনায় উন্মুক্ত ও নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চয়তায় সরকার ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।
এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন- বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান, টেলিনর এশিয়ার জোহান মার্টিন সিল্যান্ড, সাংবাদিক তাসনিম খলিল, শেয়ারট্রিপের সিইও সাদিয়া হক। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন অ্যাকসেস নাও-এর রমন জিৎ সিং চিমা।
ডিজিটালি রাইট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী সেশনটি পরিচালনা করেন।
‘ফ্রি এক্সপ্রেশন অ্যান্ড অনলাইন সেফটি– ইমপ্লিকেশনস অব দ্য সাইবার প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক সেশনে আইন বিশেষজ্ঞ ও অ্যাকটিভিস্টরা বাকস্বাধীনতা ও ডিজিটাল রাইটসের সাম্প্রতিক আইন প্রণয়নের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
এখানে আলোচক হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন- আইসিটি সমন্বয় ও সংস্কারের পলিসি উপদেষ্টা ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভের (জিএনআই) উসামা খিলজি এবং দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শহিদুল আলম।
এনগেজমিডিয়ার সিনিয়র ম্যানেজার (যোগাযোগ) সারা পাসিয়া সেশনটি পরিচালনা করেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ডিজিটালি রাইটের টেক পলিসি ফেলোদের কাজ নিয়েও আলোচনা করা হয়। ফেলোরা ডিজিটাল রাইটস রক্ষায় নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও তাদের গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ডিজিটাল রাইটসের বিভিন্ন অংশীজনের পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সম্মেলনে অনলাইন ফ্রিডমের ঝুঁকি মোকাবিলায় উন্মুক্ত ও টেকসই ডিজিটাল পরিবেশের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন এপিসি, এনগেজমিডিয়া এবং ডিজিটালি রাইটের প্রতিনিধিরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড জ ট ল র ইটস র ড জ ট ল র ইট ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বাড়তি মাশুল আরোপ করায় সাত জাহাজের অনুমতি বাতিল
চট্টগ্রাম বন্দরে গতকাল বুধবার থেকে বাড়তি মাশুল কার্যকর হয়েছে। এই বাড়তি মাশুল পুষিয়ে নিতে সারচার্জ বা অতিরিক্ত ভাড়া আরোপ করেছিল বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলো। তবে সারচার্জ আরোপ করায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ফ্রান্সভিত্তিক একটি শিপিং কোম্পানির সাতটি জাহাজের অনুমোদন বাতিল করেছে।
অন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকেও সারচার্জ প্রত্যাহার করার জন্য বলেছে। অন্যথায় তাদেরও জাহাজের অনুমতি বাতিল অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে বন্দর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগ করেছে কয়েকটি শিপিং লাইন।
এ পরিস্থিতিতে দুটি শিপিং কোম্পানি তাদের সারচার্জ প্রত্যাহার করেছে বলে বন্দরকে জানিয়েছে।
ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীদের আপত্তি উপেক্ষা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বন্দরের নতুন মাশুলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। এক মাস পর অর্থাৎ গতকাল থেকে সেই বাড়তি মাশুল আদায় শুরু হয়েছে। তাতে বন্দরের বিভিন্ন সেবা মাশুল একলাফে ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম ধাপে বন্দর কর্তৃপক্ষ এই মাশুল শিপিং এজেন্টদের কাছ থেকে আদায় করে। শিপিং এজেন্টরা তাদের গ্রাহক অর্থাৎ আমদানি–রপ্তানিকারকদের থেকে সেই মাশুল আদায় করে। তবে সাধারণত পণ্য পরিবহনের জন্য বার্ষিক ভিত্তিতে শিপিং কোম্পানিগুলো বড় গ্রাহকদের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তি শেষ হওয়ার আগে পণ্য পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ নেই। এ জন্য শিপিং কোম্পানিগুলো তাৎক্ষণিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সারচার্জ আরোপ করে।
সারচার্জ আরোপ করে পরে প্রত্যাহার
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর ৭ অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে ফ্রান্সের সিএমএ–সিজিএম, সুইজারল্যান্ডের এমএসসি, ডেনমার্কের মায়ের্সক লাইন এবং দেশীয় এইচআর লাইনস– এই চারটি শিপিং কোম্পানি তাদের সেবা ব্যবহার করে পণ্য আমদানি–রপ্তানির ক্ষেত্রে সারচার্জ আরোপ করে।
৭ অক্টোবর প্রথমে ফ্রান্সের শিপিং কোম্পানি সিএমএ–সিজিএম ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কনটেইনারপ্রতি ৪৫ ডলার বাড়তি সারচার্জ আদায়ের ঘোষণা দেয়। তাদের এই বাড়তি সারচার্জ কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ২৬ অক্টোবর থেকে।
এমন ঘোষণার পর ১০ অক্টোবর ফ্রান্সের সিএমএ–সিজিএম কোম্পানির সাতটি জাহাজের অনুমোদন বাতিল করে দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন বাতিলের ফলে এসব জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ওঠানো–নামানো হবে না বা জাহাজ জেটিতে ভিড়তে দেওয়া হবে না। সিএমএ–সিজিএমকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, বন্দরে জাহাজ পরিচালনার অনুমতিপত্রে সারচার্জ আদায় করা যাবে না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছিল। এই শর্ত ভঙ্গ করায় সাময়িকভাবে প্রতিষ্ঠানটির সাতটি জাহাজের অনুমোদন বাতিলের কথা জানানো হয়।
শিপিং এজেন্ট বা ব্যবসায়ীরা শুরুতে এই বাড়তি মাশুল পরিশোধ করবে। পণ্যের দামের সঙ্গে এই বাড়তি মাশুল যুক্ত হলে পণ্যের দাম বাড়বে। দিন শেষে ভোক্তার কাঁধে পড়বে এই বাড়তি মাশুলের বোঝাআমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামবাতিল করে দেওয়া সাতটি জাহাজের মধ্যে দুটি জাহাজ ইতিমধ্যে কনটেইনার নিয়ে বন্দর জলসীমায় নোঙর করেছে। তবে অনুমোদন বাতিল করায় এসব জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য বন্দর থেকে অনুমোদন পায়নি। এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে ফ্রান্সের কোম্পানিটি সারচার্জ প্রত্যাহার করেছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এমএসসিও কনটেইনারপ্রতি ১০০ ডলার সারচার্জ আদায়ের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে বন্দরের চাপে তারা চট্টগ্রাম বন্দর প্রান্তর কোনো মাশুল আদায় করবে না বলে বন্দরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।
ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্সক লাইনের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০ ফুট কনটেইনারে কোম্পানিটি টার্মিনাল হ্যান্ডলিং চার্জ বা টিএইচসি আগে আদায় করত ১২০ ডলার। গতকাল থেকে তারা এই চার্জ আদায় করবে ১৬৫ ডলার। সেই হিসাবে প্রতি কনটেইনারে ৪৫ ডলার মাশুল বাড়িয়েছে তারা। তবে ৪০ ফুট লম্বা কনটেইনারে এই মাশুল ২০৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩১০ ডলারে উন্নীত করেছে। গতকাল থেকে তারা এই বাড়তি মাশুল আদায়ের কথা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গতকাল (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) প্রতিষ্ঠানটি বাড়তি মাশুল প্রত্যাহারের কথা জানায়নি।
একইভাবে দেশীয় শিপিং কোম্পানি এইচআর লাইনস প্রতি একক কনটেইনারে ২৫ থেকে ৩০ ডলার সারচার্জ আরোপ করে। দেশীয় এই কোম্পানি চট্টগ্রাম থেকে স্বল্প দূরত্বে কনটেইনার পরিবহন করে। তারাও সারচার্জ প্রত্যাহার করেনি। বন্দরের হিসাবে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এই চার শিপিং লাইন মোট কনটেইনারের বড় অংশই পরিবহন করেছে।
জানতে চাইলে বন্দরসচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল থেকে নতুন ট্যারিফ কার্যকর হয়েছে। সারচার্জ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাহাজ কোম্পানিগুলোকে সারচার্জ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি কোম্পানি তাদের সারচার্জ প্রত্যাহার করেছে। শিপিং কোম্পানিগুলোকে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি।
বন্দর দিয়ে কনটেইনার পরিবহন করছে অন্তত তিন শতাধিক বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে শীর্ষ ১০টি কোম্পানিই সিংহভাগ কনটেইনার পরিবহন করে।
চাপ পড়বে ভোক্তার কাঁধে
বন্দর খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন, যে নামেই আদায় হোক, শিপিং কোম্পানিগুলো বন্দরের নতুন মাশুল আমদানি–রপ্তানিকারকের কাছ থেকে আদায় করে নেবে। তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করতে না পারলে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে তারা তা আদায় করবে। সে ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়বে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯৯ শতাংশ কনটেইনার পণ্য পরিবহন হওয়ায় এই প্রভাব বেশি হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও জাপানভিত্তিক ওশেন নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস (ওয়ান) লাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাইয়াজ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, শিপিং এজেন্টদেরই মূলত বন্দরের বাড়তি মাশুল পরিশোধ করতে হবে। সেটা তারা প্রথমে পরিশোধ করলেও পরে তা গ্রাহক অর্থাৎ আমদানি–রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে ভাড়া হিসেবে আদায় করে নেবে।
চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শিপিং এজেন্ট বা ব্যবসায়ীরা শুরুতে এই বাড়তি মাশুল পরিশোধ করবেন। পণ্যের দামের সঙ্গে এই বাড়তি মাশুল যুক্ত হলে পণ্যের দাম বাড়বে। দিন শেষে ভোক্তার কাঁধে পড়বে এই বাড়তি মাশুলের বোঝা।