লোকবল না থাকায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রথম শ্রেণির আবহওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি কোন কাজে আসছে না খাগড়াছড়িবাসীর। মাত্র একজন কর্মচারী দিয়ে কোনোমতে চলছে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বৃষ্টিপাত, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কৃষক ভাইদের কৃষি পূর্বাভাস দেওয়া, আদ্রতাসহ তিন ঘণ্টা অন্তর আবহাওয়ার তথ্য ঢাকা আবহাওয়া অফিসে প্রেরণ ও পার্বত্য অঞ্চলে আবহাওয়া উপযোগী চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে স্থাপন করা হয় এটি।

জনবল সংকটের কারণে দীর্ঘ ১১ বছরের পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি কেন্দ্রটি। ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র এক জন। বেলুন মেকার রয়েছেন প্রেষণে। তাকে দিয়ে বর্তমানে ৬ ঘণ্টা পর পর আবহাওয়ার বার্তা ঢাকা অফিসে প্রেরণ করা হয়। তার একার পক্ষে এতবড় কেন্দ্রটি চালানো সম্ভব নয়। 

২০১৪ সালে আবহাওয়া ভবনের দুটি পাকা ভবন নির্মাণসহ আবহাওয়া পরিমাপক যন্ত্র বসানো হয়। এরপর কেবল উচ্চ পর্যবেক্ষক ও পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়। সেই দুইজনও বদলী হয়ে চলে যান অন্যত্র। তবে তারা কবে যোগদান করেছেন, আবার কবে চলে গেছেন তার কোন প্রমাণ পত্রও নেই। জনবল না থাকায় অযত্নে পড়ে আছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও ভবনের আসবাবপত্র। ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে অধিকাংশ যন্ত্রপাতি।

তৎকালীন সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০০৯ সালে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৪ সালে। দীর্ঘ ১১ বছরেও পূর্নাঙ্গভাবে চালু হয়নি কেন্দ্রটি।

দীঘিনালার স্থানীয় সাংবাদিক মো.

আল আমিন ও পোমাং পাড়ার হরি মোহন ত্রিপুরা বলেন, “দ্রুত জনবল নিয়োগ করে আবহাওয়া পূর্বভাস, বৃষ্টিপাতের পরিমাপ ও তাপমাত্রা নির্ধারণসহ কৃষকদের আবহাওয়া পূর্বাভাস দেয়ার জন্য এটি দ্রুত চালু করার দাবি জানাচ্ছি।”

একই দাবি করেছেন বোয়ালখালী ইউনিয়সের চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা। 

এ বিষয়ে জানতে অত্র অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম আবহাওয়া ও ভূ-প্রাকৃতিক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক নুরু করিমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে কথা বলতে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার অনুমতি নেই। সে কারণে তিনি কোন তথ্য দিতে পারছেন না।

দীঘিনালার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ বলেন, “দীর্ঘদিন যাবৎ আবহাওয়া অফিসসহ অনেক দপ্তরে কর্মকর্তা নেই। হয়তো শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।”

ঢাকা/রূপায়ন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।

যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
  • যে হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ, বিদ্যুৎ–সংযোগ কিছুই নেই
  • আসাদুজ্জামান নূরের চারটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দের আদেশ