দালালের বিরুদ্ধে মামলা করায় বাদী ও সাক্ষীকে হুমকি
Published: 9th, February 2025 GMT
মাদারীপুরে মানব পাচারকারী দালালের বিরুদ্ধে মামলা করায় বাদীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্বামী ফারুক মাতুব্বরের কোনো হদিস না পাওয়ায় দালালের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন লিপি আক্তার। তাঁর অভিযোগ, এ মামলা করায় তাঁকে ও সাক্ষীকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন আসামি খাইরুন নেছা।
ভুক্তভোগী পরিবারটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাদারীপুর শহরের সবুজবাগ এলাকার মৃত একরাম আলী মাতুব্বরের ছেলে ফারুক মাতুব্বরের সঙ্গে ১৪ লাখ টাকায় স্পন্সর ভিসার মাধ্যমে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি হয় দালাল খাইরুন নেছা ও দাদন ব্যাপারী দম্পতির। ইতালির উদ্দেশে ২০২৪ সালের ৩ জুন বাড়ি থেকে বের হন ফারুক। ৭ লাখ টাকা নগদ নিয়ে প্রথমে তাঁকে বাংলাদেশ থেকে ভারতের মুম্বাই নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ৪ জুন নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরে। তার পর মিসর হয়ে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ফারুকের ওপর অমানবিক নির্যাতন করে ভিডিও কলে তা পরিবারকে দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। পরিবার নিরুপায় হয়ে শিউলী আক্তার নামের এক নারীর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কয়েক দফায় আট লাখ টাকা পাঠায়। সর্বশেষ গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ফারুক। এর পর থেকে তাঁর কোনো সন্ধান না পেয়ে দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দালাল নানা টালবাহানা শুরু করে। স্থানীয়দের মাধ্যমে দালালকে ফারুকের সন্ধান দিতে বললেও দালাল তাতে কর্ণপাত করেনি। এর পর নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মাদারীপুর আদালতে মামলা করেন। মামলায় সদর উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের দাদন ব্যাপারীকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া তার স্ত্রী খাইরুন নেছাসহ আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর ২২ জানুয়ারি দাদন ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
দাদন ব্যাপারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর ফারুকের পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন দাদনের স্ত্রী ও মামলার অন্যতম আসামি খাইরুন নেছা। তাঁর স্বামী জামিন পেলে যে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও শাসানো হয়। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খাইরুন নেছা।
মামলার বাদী লিপি আক্তার বলেন, ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাঁর স্বামীর সন্ধান দিতে পারছে না দালাল। ধারণা করা হচ্ছে, নির্যাতন করে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। স্বামীর সন্ধান ও দালালের বিচারের পাশাপাশি আসামি পক্ষের হুমকি-ধমকির পর নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চান তিনি।
মামলার সাক্ষী জাহিদুল ইসলাম বলেন, সত্য ঘটনার সাক্ষী হওয়ায় দালাল তাঁর লোকজন নিয়ে তাঁকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তিনি বলেন, শিউলী আক্তার নামের একজনের ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠিয়েছেন খাইরুন নেছা, যার রসিদ আদালতে দেওয়া হয়েছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে খাইরুন নেছা দাবি করেন, পারিবারিক বিরোধের কারণে তাঁর স্বামীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া তারা কোনো টাকা নেননি।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
যে মসজিদে নামাজে থাকতে কিবলা পরিবর্তন হয়
মসজিদটি মদিনা শহরের পশ্চিম প্রান্তে খালিদ বিন ওয়ালিদ সড়কে অবস্থিত কিবলাতাঈন মসজিদ, মানে দুই কেবলার মসজিদ। বনু সালামা অঞ্চলে হওয়ার সুবাদে এই মসজিদের প্রথম নাম ছিল ‘মসজিদে বনু সালামা’।
মসজিদে কিবলাতাইন ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সময় কেবলা বদলের আদেশ দেওয়া হয়। নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে ওহি পাওয়ার পর নবীজি (সা.) মসজিদে আকসার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে কাবামুখী হন এবং বাকি নামাজ শেষ করেন। প্রথমে কিবলা ছিল মসজিদে আকসা, সবাই সেদিকে ফিরে নামাজ পড়তেন। এ সময় পরে কাবা শরিফকে কিবলা নির্ধারণ করা হয়। তাই এই মসজিদকে দুই কেবলার মসজিদ বলে।
মসজিদের ভেতরের মূল অংশ অক্ষত রেখে চারদিকে দালান করে মসজিদটি বাড়ানো হয়েছে। স্মৃতিস্বরূপ মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকের কেবলার জায়গাটি দুইতলা বরাবর রেখে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন মসজিদে নববি ভ্রমণ করা যাবে ঘরে বসেই৩০ জানুয়ারি ২০২৩অতীতের সব নবী-রাসুলের কেবলা ছিল বায়তুল মোকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসা। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে মদিনায় হিজরতের প্রায় ১৬ মাস পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। মুসলমানদের কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে হওয়ার কারণে ইহুদিরাও এই বলে অপপ্রচার করে বেড়াত যে, আমাদের ও মুসলমানদের কেবলা যেহেতু এক ও অভিন্ন, অতএব ধর্মের ক্ষেত্রেও মুসলমানদের উচিত আমাদেরই অনুসরণ করা।
এসব কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হৃদয়ের সুপ্ত বাসনা ছিল, কাবা যদি মুসলমানদের কেবলা হতো। মুসলমানদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত করার লক্ষে রাসুল (সা.) কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে উপলব্ধি করছিলেন। নবী করিম (সা.) ব্যাকুল চিত্তে আকাশের দিকে বারবার তাকাতেন, অহির মাধ্যমে এর অনুমোদনের প্রত্যাশায়।
হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসে মতান্তরে রজব মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাসুল (সা.) বেশ কয়েকজন সাহাবি নিয়ে বিশর ইবনে বারা (রা.)-এর দাওয়াতে যোগ দিতে বনু সালামায় পৌঁছে জোহরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে আসেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি সময়ে জিবরাইল (আ.) অহি নিয়ে অবতীর্ণ হন, ‘আমি লক্ষ করি তুমি আকাশের দিকে বারবার তাকাও। তাই তোমাকে এমন এক কিবলার দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছি যা তুমি পছন্দ করবে। সুতরাং তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফেরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন কাবার দিকে মুখ ফেরাও। আর যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে এ তাদের প্রতিপালক-প্রেরিত সত্য। তারা যা করে তা আল্লাহর অজানা নেই।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪)
আরও পড়ুনমক্কার পর পবিত্রতম শহর মদিনা৩০ জুন ২০২৪আল্লাহর নির্দেশ রাসুল (সা.) ও সাহাবিরা বাকি দুই রাকাত কাবা শরিফের দিকে ফিরে আদায় করেন।
দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে বনি সালামা অঞ্চলের মসজিদটি রাসুল (সা.) ও সাহাবিরা নির্মাণ করেন। পরে খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) ১০০ হিজরিতে পুনর্নিমাণ করেন। শুজায়ি শাহিন আল জামালি ৮৯৩ হিজরিতে ছাদ বৃদ্ধি করেন এবং তুরস্কের উসমানি খলিফা সুলাইমান আল কানুনি ৯৫০ হিজরিতে আগের তুলনায় বৃহৎ আয়তনে মসজিদটি নতুন করে নির্মাণ করেন।
নবী করিম (সা.)-এর যুগ থেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত এই মসজিদে দুটি মেহরাব তথা ইমামের দাঁড়ানোর স্থান ছিল। যার একটি বায়তুল মোকাদ্দাসমুখী, অন্যটি কাবাঘরমুখী। পরে সংস্কারের সময় বায়তুল মোকাদ্দাসমুখী মিম্বরটি ভেঙে কাবামুখি মেহরাবটি অবশিষ্ট রাখা হয়। তবে, ওই মেহরাব বরাবর দুই তলায় একটি মেহরাবের নমুনা বানিয়ে রাখা হয়েছে।
এ মসজিদে কয়েক হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটিতে সুদৃশ্য দুটি গম্বুজ ও দুটি মিনার রয়েছে। মিনারগুলো দূর থেকে দেখা যায়। হজ ও ওমরাহ পালনকারীরা মসজিদটি দেখতে ভিড় করেন। এখানে এসে নফল নামাজ আদায় করেন।
আরও পড়ুনমক্কা–মদিনা ছাড়া সর্বত্রগামী দজ্জাল০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩