টিনের বেড়ার একটি খুপরি ঘর। সেই ঘরে যন্ত্রণায় কাতরান অসুস্থ স্বামী-স্ত্রী। ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার কসবা গ্রামের একটি হতদরিদ্র পরিবারে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়।

টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে ঘরে ছটফট আর কান্না করছিলেন শমসের আলী (৫৯) ও পারভীন বিবি (৪৫) দম্পতি। শমসের ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। সেই টাকায় সংসার চালাতেন। স্ত্রীর স্তন ক্যানসারের চিকিৎসাও এই টাকাতেই যতটুকু পারতেন, তা দিয়ে করতেন। দেড় বছর আগে কাজ করা অবস্থায় হঠাৎ বাঁ পায়ে আঘাত পান শমসের। সেই আঘাত থেকে পায়ে ক্ষত তৈরি হয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে তা ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

শমসের আলী বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করে বাড়িতে থেকে নিয়মিত পায়ের ক্ষতের ড্রেসিং করছেন। এর পর থেকে তিনি আর কাজ করতে পারছেন না। বাড়িতে বিছানায় দিন কাটছে।

এই দম্পতির দুই মেয়ে। দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে। তাঁরা স্বামীর বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে মা-বাবার খোঁজখবর নেন, খাবার পাঠান। কিন্তু চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই।

আলাপকালে পারভীন বিবি বলেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। সে সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক দ্রুত চিকিৎসা ও কেমোথেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেন। মাত্র দুটি থেরাপি নেওয়ার পরই জমানো টাকা শেষ হয়ে যায়। চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিছানার পাশ থেকে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখিয়ে কাঁদতে থাকেন পারভীন বিবি। তিনি বলেন, অসহনীয় যন্ত্রণা অনুভব করেন। ব্যথা হলে সহ্য করতে পারেন না। যন্ত্রণায় ছটফট করেন।

অসুস্থ এই দম্পতি জানালেন, দুজনই এখন শয্যাশায়ী। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না।

অসুস্থ এই দম্পতির বিষয়ে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগে তাঁদের চিকিৎসার জন্য সামান্য পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়েছে।

শমসের আলী বলেন, প্রতিদিন ওষুধ কেনা, ড্রেসিংসহ দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। তিন বেলা ভালো করে খেতেই পারেন না। এরপর তো চিকিৎসা করাবেন! মৃত্যুর অপেক্ষা করা ছাড়া তাঁদের আর কিছুই করার নেই। তাঁদের সহায়তা করার জন্য দেশের মানুষের প্রতি আকুল আবেদন জানান তিনি।

প্রতিবেশী হাফিজুর রহমান বলেন, পরিবারটির দুর্দশা দেখে চোখে পানি আসে। তাঁদের কান্নাকাটিতে প্রতিবেশীরা ঘরে থাকতে পারেন না। অসুস্থ এই দম্পতির চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের কাছে গেছেন কয়েকবার। অসুস্থ এই দম্পতির জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য শমস র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার রাস্তায় টেসলা, রোলস–রয়েস, পোরশেসহ ২৫০০ বিলাসবহুল গাড়ি

রাজধানী ঢাকার রাস্তায় চলে বিশ্বের আলোচিত টেসলা গাড়ি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে ছয়টি টেসলা গাড়ির নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে। শুধু টেসলা নয়; রোলস-রয়েস, ফেরারি, বেন্টলি, পোরশের মতো বিলাসবহুল অভিজাত গাড়ি এখন ঢাকার রাস্তার বুক চিড়ে চড়ে বেড়ায়।

অন্যদিকে রেঞ্জ রোভার, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জের মতো অভিজাত গাড়িও ঢাকার রাস্তায় অহরহ দেখা যায়। এ গাড়িগুলো যেন দেশের ধনীদের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে গেছে।

সব মিলিয়ে দেশে এখন আড়াই হাজারের বেশি এমন বিলাসবহুল ও দামি গাড়ি আছে। এই গাড়িগুলোর দাম ১ কোটি থেকে ১২ কোটি টাকা। দেশের একশ্রেণির অতিধনী ব্যবসায়ীরা এসব বিলাসবহুল গাড়ি চালান।

গাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, এমন বিলাসবহুল দামি গাড়ির গ্রাহকের সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজারের মতো। কেউ কেউ একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন।

দেশে বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ ও আউডি (অনেকে অডি বলেন) ব্র্যান্ডের গাড়ি। রাজধানীর ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামের রাস্তায় এমন দামি গাড়ি মাঝেমধ্যে দেখা যায়।

এক দশক আগেও রাস্তায় বিলাসবহুল গাড়ি অনেক কম দেখা যেত। গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারা ও বসুন্ধরার মতো অভিজাত এলাকায় এখন প্রায়ই দেখা মিলে রেঞ্জ রোভার, মার্সিডিজ ও বিএমডব্লিউর মতো বিলাসবহুল গাড়ি। সাধারণত রাতের দিকে অভিজাত এলাকায় এমন গাড়ির আনাগোনা বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে গত ১০ বছরে আড়াই হাজারের বেশি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে দেশে শুধু রোলস-রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়ি আমদানি হয়েছে ১২টি। আর গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআরটিএ) ৮টি রোলস-রয়েস নিবন্ধিত হয়েছে।

গত জুলাই মাসে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পরে রোলস-রয়েসের ‘স্পেক্টার’ মডেলের গাড়ি। যার দাম ফিচারভেদে প্রায় ১১ থেকে ১২ কোটি টাকা। তখন এই দামি গাড়ি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়।

টেসলা ব্র্যান্ডের ‘মডেল এস’ গাড়ি

সম্পর্কিত নিবন্ধ