পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় বীভৎস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘাতক যতই প্রভাবশালী হোক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের। এই হত্যাকাণ্ড জাহেলি যুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আহমদ আবদুল কাদের এসব কথা বলেন। দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

খুনিদের শাস্তির দাবি জানিয়ে আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ডে যে রোমহর্ষ ও বীভৎস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা জাহেলি যুগের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। একজন জীবন্ত মানুষকে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রস্তারাঘাতে হত্যা করা হচ্ছে, আর লোকজন দাঁড়িয়ে তা দেখছে। সন্ত্রাসীদের হাতে কোনো মারণাস্ত্র না থাকলেও নির্মম ঘটনায় কেউ বাধা দিতে এগিয়ে আসেনি। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ঘাতক যতই প্রভাবশালী হোক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড–পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ত ভূমিকা হতাশাজনক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার দুই দিন পর প্রশাসনের টনক নড়ে। ইতিমধ্যে মূল অপরাধীদের বাদ দিয়ে মামলার অভিযোগ এসেছে। যৌথ বাহিনীর টহল চললেও এখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না।’

আধিপত্যবাদী ও চাঁদাবাজদের নিপীড়ন জনগণ আর সহ্য করবে না বলে মন্তব্য করেন আহমদ আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ঘাতক ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই স্থানীয় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় উঠে এসেছে। এভাবে প্রায় এক বছর নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বে বিএনপিসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।

আহত ও জখম হয়েছে অসংখ্য সাধারণ মানুষ। ৫ আগস্ট–পরবর্তীতে এগুলো কখনো মেনে নেওয়া যায় না। হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি রাজনীতির কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ হতে হয়েছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। তাই আধিপত্যবাদী ও চাঁদাবাজদের সাবধান হয়ে যেতে হবে। জনগণ আগের মতো নিপীড়ন মুখ বুঝে আর সহ্য করবে না। দেশপ্রেমিক ইসলামি শক্তি ঐক্যবদ্ধ আছে। আমরা সবার মধ্যে সুস্থ রাজনীতির চর্চা দেখতে চাই।’

খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে দলটির নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক শায়খুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী উত্তর সভাপতি মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি রায়হান আলী প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহমদ আবদ ল ক দ র হত য ক ণ ড মজল স র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই ঘোষণাপত্র সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে একমত নয় বিএনপি

জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে একমত নয় বিএনপি। এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঘোষণাপত্রের পুরোটা না নিয়ে জুলাই-আগস্ট ছাত্র গণ–অভ্যুত্থানের চেতনাটুকু ধারণ করে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য চতুর্থ তফসিলে শুধু ‘জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪’ আনা যেতে পারে। অন্যদিকে সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে জুলাই ঘোষণাপত্রের স্বীকৃতি ও কার্যকারিতা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১১তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। তখন কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের কার্যকারিতা শেষ। সে ঘোষণাপত্র চতুর্থ তফসিলে এসে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, প্রতিটি আইন কিন্তু সংবিধানে উল্লেখিত নয়। বলা হলো, এটা তফসিলে থাকবে, এটাই লেজিটিমেসি (বৈধতা), স্বীকৃতি। তিনি আরও বলেন, ঘোষণাপত্র লিটারেচার হিসেবে, ডকুমেন্টারি হিসেবে আর্কাইভে থাকে, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত থাকে না। ’৭২–এর সংবিধানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে সংযুক্ত না করা এটা প্রমাণ করে, কোনো ঘোষণাপত্র সংবিধানের অংশ হয় না। ঘোষণাপত্র হলো ঘোষণাপত্র, এটার রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকে, এটা আর্কাইভে থাকে। এটাকে জাতি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে উল্লেখ করে, স্মরণ করে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমরা গণ–অভ্যুত্থান ২০২৪–এর গুরুত্ব, মর্যাদা, মহিমা ধারণ করি। আমরা এটাকে স্বীকৃতি দিই, সারা জাতি এটাকে স্বীকৃতি দেয়। এটাকে আমরা যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র সম্পর্কে একটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ওপর দায়িত্ব বর্তেছে, সরকার এখানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়ে এ ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা ইতিপূর্বে সে রকম একটা প্রস্তাব পাওয়ার পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুজন উপদেষ্টার কাছে আমি নিজেই আমাদের দলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত অনুসারে ঘোষণাপত্রের বিষয়ে আমাদের মতামতসংবলিত একটা ড্রাফট (লিখিত বক্তব্য) হস্তান্তর করেছিলাম। কিন্তু আমরা তার কোনো ফিডব্যাক পাইনি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সরকারের একজন উপদেষ্টা আমাদের মহাসচিবের (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) সঙ্গে যোগাযোগ করে জুলাই ঘোষণাপত্রসংক্রান্ত তাদের একটা প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা আগে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তার কিছু কিছু বিষয় এটার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা দলের সর্বোচ্চ ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করে এক দিনের মধ্যে আমাদের দলের মতামত একটি ডাফ্রট করে সরকারের সেই উপদেষ্টার কাছে প্রেরণ করেছি। এখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হয়, আলাপ-আলোচনা কী হয়, সেটার জন্য অপেক্ষা করছি।’

বিএনপি জুলাই ঘোষণাপত্রকে চতুর্থ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আর্টিকেল ১০৬ অনুসারে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগ এবং কর্মকাণ্ডের বৈধতা চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে।’

বিএনপি বিচার বিভাগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বাইরে রাখার পক্ষে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বিএনপি দুই-তিনটি বিকল্প নিয়ে ভাবছে। যেখানে বিচারপতিদের কেবল শেষ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এসব প্রস্তাব এখনো দলের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আগামী বৈঠকে তা উপস্থাপিত হতে পারে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত করে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতির মধ্য থেকে কাউকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাবে প্রায় ঐকমত্য হয়েছে—যদি না সংশ্লিষ্ট বিচারপতির বিরুদ্ধে ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তদন্ত চলমান থাকে। বিএনপি এই প্রস্তাবকে সমর্থন করছে। কারণ, এটি নির্বিচার নিয়োগের ঝুঁকি কমাবে।

জরুরি অবস্থাসংক্রান্ত বিধানের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, সংবিধানের ১৪১(খ) ও ১৪১(গ) অনুচ্ছেদ সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্য হয়েছে যেন এই ক্ষমতা রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করা না যায়। ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দটি যুক্তিসংগত ভিত্তি হিসেবে সরিয়ে দেওয়া এবং তার বদলে সাংবিধানিক সংকট, মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কারণ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। আরও একটি প্রস্তাব হলো প্রধানমন্ত্রীর এককভাবে নয়, বরং পূর্ণ মন্ত্রিসভার অনুমোদনের মাধ্যমে জরুরি অবস্থা জারির বিধান নিশ্চিত করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফতুল্লা বাজারে এমপি প্রার্থী ইলিয়াস আহমদের গণসংযোগ
  • চাঁদাবাজদের দখলে এখন দেশের প্রতিটি বাজার, দোকানপাট, পরিবহন ও নির্মাণ খাত: মামুনুল হক
  • কক্সবাজারে ইউপি সদস্য খুন: ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • টেলিযোগাযোগ খাতে ‘অতিরিক্ত লেয়ার ইনজেক্ট’ করা হয়েছিল: ফয়েজ তৈয়্যব
  • সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা, ৫ জন প্রবাসী
  • সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
  • সিলেটে অনেক শহীদের পরিবার চরম বিপাকে
  • ইসলামী ছাত্র মজলিস নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠি
  • জুলাই ঘোষণাপত্র সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে একমত নয় বিএনপি