খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার সঙ্গে ছাত্রদল জড়িত নয়
Published: 19th, February 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে ছাত্রদল জড়িত নয় বলে দাবি করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই দাবি করে ছাত্রদল কুয়েট শাখা। একই সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন থেকে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মো.
ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘সেই মিছিলের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে যখন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে মিছিলটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কতিপয় মিছিলকারী তাঁদের দিকে অতর্কিতে তেড়ে গিয়ে হামলা করেন। ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী, তাঁদের ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্তা করা হয়। এর জবাবে সেই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সেই মিছিলকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান। দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে, কুয়েটের গেট হয়ে উঠে এক রণক্ষেত্র। ঘণ্টাখানেক ধরে সেই এলাকায় চলে সহিংসতা। সেই সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে (যুবদল) ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। তবে তাঁদের কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণও তাঁদের নেই।’
আরও পড়ুনচিকিৎসাধীন ভিসির পদত্যাগের দাবিতে কুয়েট চিকিৎসাকেন্দ্রের বাইরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান১ ঘণ্টা আগেসংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদল নেতারা বলেন, ওই সহিংসতায় ছাত্রদলের সমর্থকেরা কেবল ভুক্তভোগী বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তাঁদের তিনজনই কুয়েটের সম্মান কোর্সের নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং যেহেতু কুয়েটে ছাত্রদলের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি এবং এখন পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি, সেহেতু তাঁরা তিনজন ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নন। তাই তাঁদেরকে কেন্দ্র করে ঘটা কোনো ঘটনা ‘ছাত্রদলের হামলা’ শীর্ষক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হবে সর্বৈবভাবে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি কাজ।
আরও পড়ুনথমথমে কুয়েট, রামদা হাতে ভাইরাল যুবদল নেতাকে বহিষ্কার৩ ঘণ্টা আগেছাত্রদল নেতারা দাবি করেন, ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু না হলেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শে উজ্জ্বীবিত শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত বলে তাঁরাসহ আরও কিছু শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত করেন ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারের পেছনে লুকানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির ধারক–বাহক ইসলামী ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মীরা ও ক্যাম্পাসে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছাত্রদল কুয়েট ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও এসব গুপ্ত ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে ওই ‘মব’ মিছিলটির আগের ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে ক্যাম্পাসে বিশাল ব্যানার টানানো হয় এবং মিছিল থেকে বিনা উসকানিতে ছাত্রদলের উল্লিখিত সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, এসব ঘটনা চলাকালে এবং পরে কোনরূপ তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় জনতার সঙ্গে কুয়েট শিক্ষার্থীদের এই ন্যক্কারজনক সহিংসতাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ছাত্রদলের হামলা’ বলে পুরো ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে যত বেশি তথ্য উন্মোচিত হচ্ছে, তত আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ন্যক্কারজনক এই ঘটনার সত্য রূপ পুরোই ভিন্ন।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া, সহসভাপতি হাবিবুল বাশার ও সাফি ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমসহ স্থানীয় খুলনার ছাত্রদলের নেতারা।
আরও পড়ুনকুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা১৫ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র দ র ওপর ঘটন র স র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার
স্বাধীনতার পর যারাই দেশ চালিয়েছে, তারা সবাই হিন্দুদের ব্যবহার করে শুধু নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার।
আজ শুক্রবার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাধীনতা চত্বরে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটির উদ্যোগে হিন্দু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়ন ও ডুমুরিয়া-ফুলতলাসহ দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে এখন প্রয়োজন ইসলামি সরকার। যাঁরা দাঁড়িপাল্লার জোয়ার দেখে ভয়-হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকিতে হিন্দুরা আর ভয় পাবে না। হিন্দুদের বাধা দিলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫৪ বছর যারা দেশ চালিয়েছে তারা সন্ত্রাস, দখলদারি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে হিন্দুদের শোষণ করেছে। জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের নির্মূল করা হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনতে চাই। লাঙলের শাসন দেখেছি, ধানের শীষের শাসন দেখেছি, নৌকার শাসনও দেখেছি। একটি দলই বাকি—জামায়াতে ইসলামী, তার প্রতীক দাঁড়িপাল্লা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে, আগামীতেও সেই বার্তা জনগণ দেবে।’
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দেড় হাজার শহীদ ও ৪০ হাজার আহতের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি দেব প্রসাদ মন্ডলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি আবুল খায়ের, শোভনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন, শরাফপুর সর্বজনীন পূজা মন্দিরের গোঁসাই সাধু প্রমথ গাইন, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহসভাপতি হরিদাস মন্ডল, কানাই লাল কর্মকার ও প্রশান্ত কুমার মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ গৌতম কুমার মন্ডল, পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার, মাগুরখালী ইউনিয়ন সহসভাপতি সুজিৎ কুমার সরকার, ধামালিয়া ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুন্ডু, রুদাঘয়া ইউনিয়ন সভাপতি বিপ্লব সরকার, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন সভাপতি কার্তিক চন্দ্র সরকার, খর্ণিয়া ইউনিয়ন সভাপতি নারায়ণ রাহা, মাগুরঘোনা ইউনিয়ন সভাপতি বিশ্বনাথ দাস, সাহস ইউনিয়ন সভাপতি তন্ময় মন্ডল, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি নিরঞ্জন রায়, রংপুর ইউনিয়ন সভাপতি তরুন কুমার মন্ডল, শোভনা ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির মহিলা সম্পাদক প্রিয়ংকা মন্ডল, মাগুরখালী ইউনিয়ন সভাপতি প্রদীপ কুমার সরকার, আটলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অনিমেষ মন্ডল, গুটুদিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মনোরঞ্জন মন্ডল, শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি স্বদেশ হালদার, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অরুন কুমার আচার্য প্রমুখ।
হিন্দু সম্মেলন ঘিরে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে বর্ণিল মিছিল এসে জমায়েত হয়। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল ডুমুরিয়া সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
হিন্দু সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লার পক্ষে হোক। আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করতে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
মতুয়া সংঘের সভাপতি সুদীপ্ত কুমার সুন্দর মন্ডল বলেন, ‘আমরা আর সংখ্যালঘু বলে পরিচয় শুনতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার হিন্দুদের দাবিতে কাজ করেনি। এবার প্রমাণ হবে, হিন্দু মানেই একটি নির্দিষ্ট দল নয়।’