‘সবাই চুপ, যা আছে বের করে দে’– বলেই দু’তিনজনকে মেরে একজনকে ছুরিকাঘাত করে চোখের পলকে বাসযাত্রীদের ফোন ও ওয়ালেট নিয়ে গেল ছিনতাইকারীরা।
গতকাল বুধবার সকালে উত্তরায় অফিসগামী মানুষের ভিড়ের মধ্যে প্রকাশ্যে এসব ঘটতে দেখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিসা মুমু। তাঁর ফেসবুক পোস্ট থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে তিনি ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন।
খোদ রাজধানীতে এমন ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এর এক দিন আগে উত্তরায় সন্ত্রাসী ও বখাটেরা একজন নারী ও একজন পুরুষকে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নাফিসা মুমুর পোস্ট থেকে জানা যায়, গতকাল সকাল ৮টার দিকে তিনি উত্তরা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রথমে রিকশায় যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাস বেছে নেন। কিন্তু বাসে ওঠার দুই মিনিট পর পরিস্থিতি বদলে যায়। বাসটি যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর আরও ৫-৬ জন যুবক সাধারণ যাত্রীর মতো ওঠে। হঠাৎ তারা ছুরি বের করে চিৎকার করে সব কিছু বের করে দিতে বলে। মুহূর্তের মধ্যে তারা বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, ওয়ালেটসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। দুই মিনিটের মধ্যে ছিনতাইকারীরা তাদের কাজ সেরে দ্রুত বাস থেকে নেমে যায়।
পরে যোগাযোগ করা হলে সমকালকে তিনি জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতক পাস করেছেন তিনি। মাঝে কিছু দিন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে শিক্ষানবিশি করেছেন। উত্তরায় এক আত্মীয়র বাসায় থাকেন। গতকাল একটি অফিসে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে যাচ্ছিলেন। হাউস বিল্ডিং এলাকায় আসার পর ২২-২৩ বছরের একটি ছেলে তার গা ঘেষে দাঁড়ায়। তাকে সরে দাঁড়াতে বলেন। ছেলেটির চাহনি ও চেহারা দেখে নেশাগ্রস্ত মনে হয়। তিনি তখন অজানা আশঙ্কায় ফোনটা কটির ভেতর লুকিয়ে রাখেন। এর পর খুব দ্রুত বাসে ওই ঘটনা ঘটে। তিনি তখন চালকের পেছনের দিকে সিটে ছিলেন। যখন ওরা ছুরি বের করছিল, তখন কেউ ভয়ে কথা বলেনি। তাঁর ফোন চাইলে তিনি বলেন– ‘ফোন নেই, হারিয়ে ফেলেছি।’ এর পর ওরা কোনো জোরাজুরি করেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশকে জানাইনি। অন্য কেউ জানিয়েছে কিনা বলতে পারছি না।’
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদ আলী সমকালকে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় এসে কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ করেনি। এ ছাড়া বিভিন্ন সূত্রে ঘটনা জানার পর সেখানে ফোর্স পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানার ওসি শামীম আহমেদ বলেন, ‘এটা গণছিনতাই কিনা তা এখনও নিশ্চিত নই। শোনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসের চালক ও ভুক্তভোগী কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া কেউ থানায় এসে অভিযোগ দেয়নি এবং ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ব্যক্তিকেও শনাক্ত করতে পারিনি। ভুক্তভোগী নারীকে পেলে সব তথ্য জানা যাবে।’
ভিক্টর পরিবহন বাসের মালিক ও চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসের কোনো তথ্য পাইনি। এ ছাড়া ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এমন কিছু পাওয়া যায়নি।’
এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি সাভারের যাত্রীবাহী বাসে ছিনতাই হয়। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে অন্তত ৩ জন আহত হন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুলিশ টাউন এলাকায় শুভযাত্রা পরিবহনের একটি বাসে এ ঘটনা ঘটে।
বাসের একাধিক যাত্রী জানান, মানিকগঞ্জ থেকে গাবতলীগামী বাসটি সাভারের পুলিশ টাউন এলাকায় থামলে চাকু হাতে দু’জন ওঠে। তারা যাত্রীদের মোবাইল ফোন, ম্যানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা কয়েকজন নারীর গলা থেকে চেইন ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাইকারীরা বাসের পেছনের দিকে গেলে যাত্রীদের কয়েকজন তাদের বাধা দেয়। এ সময় ছিনতাইকারীরা কয়েকজন যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা বাস থেকে নেমে পালিয়ে যায় বলে জানান কয়েকজন যাত্রী।
এদিকে ২০ ডিসেম্বর সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলন্ত বাসে যাত্রীদের জিম্মি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা বাসে উঠে ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বাধা দিতে গিয়ে এক যাত্রী ছুরিকাঘাতে আহত হন। সাভারের বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) সামনে থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন ফটক এলাকা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীদের ছুরির আঘাতে আহত মো.
এ ছাড়া ১৭ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলে রাজশাহীগামী একটি বাসে ডাকাতি ও দুইজন নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে বাসটির চালক বাবলু, সুপারভাইজার মাহাবুব আলম ও সহকারী সুমন ইসলামকে আটক করেছিল নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শেষ হলো বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক মহড়া ‘টাইগার শার্ক’
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া ‘টাইগার শার্ক’ সফলভাবে শেষ করেছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি, পারস্পরিক সমন্বয় এবং দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পরিচালিত এই মহড়ার মাধ্যমে দুই পক্ষের প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব জোরদার হয়েছে।
শনিবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী অঙ্গীকারের প্রতিফলন টাইগার শার্ক মহড়া। এই মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা একসঙ্গে চিকিৎসা প্রশিক্ষণ, টহল, লক্ষ্যভেদ অনুশীলন, সাঁতার, ডুবসাঁতার এবং ক্লোজ কোয়ার্টারস কমব্যাটসহ বিভিন্ন সমন্বিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত) ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, ‘এই যৌথ সামরিক মহড়া নিরাপদ, শক্তিশালী ও আরও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিকে পুনর্ব্যক্ত করে। এটি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্বেরও প্রতীক।’
কৌশলগত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি টাইগার শার্কে অন্তর্ভুক্ত ছিল বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের বিনিময়, যৌথ পরিকল্পনা সেশন এবং কৃত্রিম অনুশীলন পরিবেশে প্রশিক্ষণ। এসব কার্যক্রম ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত কৌশল গঠনে সহায়তা করা।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম যুদ্ধ কমান্ড, যা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম তদারকি করে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে।