মাগুরার সেই শিশুটি হেরে যেতে পারে না...
Published: 9th, March 2025 GMT
দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও প্রকাশ্য দিবালোকে চাঁদাবাজি নিয়েও অনেক কথা হচ্ছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতও প্রকট হচ্ছে। দ্রুতই দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে দেখছি আমরা।
এর মধ্যে একটা বিষয় খুব গভীরভাবে পুরো সমাজকে নাড়া দিয়েছে। যে বিষয়টা হয়তো আমাদের সমাজের অস্তিত্বের ওপর একধরনের কালো ছায়া ফেলছে।
নারীর ওপর নিপীড়ন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটে গিয়েছে, সেই ঘটনার প্রভাব ভবিষ্যতে আমাদের সমাজকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে, এটি নিয়ে বোধকরি ভাবার সময় এসেছে।
নিপীড়ককে থানা-হাজত থেকে ছাড়িয়ে নিতে যে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। এরপর সেই নিপীড়ককে গলায় মালা ও মাথায় পাগড়ি পরিয়ে যেভাবে হিরো বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আমরা মাগুরার ঘটনা জানতে পেরেছি।
আট বছরের বাচ্চা মেয়েটি, যে কিনা এখনো নারী-ই হয়ে উঠতে পারেনি। সেই বাচ্চা মেয়েটি বড় বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল। এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে ধর্ষণের (বোনের শ্বশুর ও জামাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে) শিকার হয়েছে।
হাসপাতালের স্ট্রেচারে অর্ধমৃত মেয়েটির ছটফট করার দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল, মেয়েটি ছটফট করছে, নাকি বাংলাদেশ নামের এই জনপদের পুরো সমাজ হাসপাতালের স্ট্রেচারে অর্ধমৃত হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় রয়েছে!
নারীর ওপর ধর্ষণ ও নির্যাতন কেন সমাজে এত বেড়ে গিয়েছে? এর কারণ কিন্তু খুব সহজেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা। যে সমাজে নিপীড়ককে শাস্তি না দিয়ে উল্টো পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ফুলের মালা পরিয়ে স্বাগত জানানো হয়। সেই সমাজে নারী কি আদৌ নিরাপদ?
এই ঘটনার পর ধর্ষক হিসেবে বাবা এবং ছেলের নাম বারবার আসছে। তবে ভুলে গেলে চলবে না, শিশুটির মা ও বোন নিজ মুখে বলেছে, ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির বোনের শাশুড়িরও হাত ছিল কিংবা সম্মতি ছিল। তাই যথাযথ তদন্ত করে ওই নারীকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।মাগুরার শিশুটির সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা কেবল বর্বরতার নিদর্শন নয়, এটি মানবতার বিরুদ্ধে একটা অপরাধ। মানুষ নামের কিছু পশু যখন এমন কাণ্ড ঘটায়; তখন পুরো সমাজের উচিত লজ্জা পাওয়া। প্রশ্ন করা, আমরা কোন পথে এগোচ্ছি? সভ্যতা থেকে আমরা কত হাজার মাইল দূরে দাঁড়িয়ে?
এটি কেবল একটা মেয়ের জীবনে ঘটে যাওয়া অপরাধ নয়, এটি আমাদের পুরো সমাজের অস্তিত্বের ওপর আঘাত। এমন সমাজে কোনো সভ্য মানুষের পক্ষে কি বসবাস করা সম্ভব? যারা এমন কাণ্ড ঘটায়, তারা তো সমাজে বসবাসের অযোগ্য। অথচ আমরা কী দেখতে পাই?
অপরাধীরা উল্টো বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে ঠিকই বের হয়ে যায়। আর কন্যা শিশু ও নারীরা হয় মরে কিংবা বেঁচে থেকে হাজারবার মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। নৈতিকতা, মূল্যবোধ বিষয়গুলো বোধকরি সমাজ থেকে খুব দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে। অপরাধীরা ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের সব স্তরে। এদের কেউ চুরি-ডাকাতি করছে। কেউ ছিনতাই করছে। কেউ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
এত সব অপরাধ চারদিকে ঘটেই চলেছে। অথচ দেখেও যেন দেখার কেউ নেই। তাহলে কী ক্যানসারের মতো এসব অপরাধ ক্রমে ছড়িয়ে পড়তেই থাকবে? এই সমাজে কি আমাদের মা-বোনেরা নিরাপদে চলাচল করতে পারবেন না?
এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে যদি অতি দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা না যায়। তাহলে এমন ঘটনা কিন্তু ঘটতেই থাকবে। তাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা খুব দ্রুত করতে হবে। ঘটনার রেশ থাকতে থাকতেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
এই ঘটনার পর ধর্ষক হিসেবে বাবা এবং ছেলের নাম বারবার আসছে। তবে ভুলে গেলে চলবে না, শিশুটির মা ও বোন নিজ মুখে বলেছে, ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির বোনের শাশুড়িরও হাত ছিল কিংবা সম্মতি ছিল। তাই যথাযথ তদন্ত করে ওই নারীকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
সরকারের উচিত ও দায়িত্ব এই ঘটনার দ্রুত বিচার করা। এসব ঘটনার যদি বিচার না হয়, তবে আমাদের মেয়েরা হেরে যাবে। হেরে যাবে পুরো সমাজ। যেই নারীরা একাত্তরে এই দেশের মুক্তির সংগ্রামে শামিল হয়েছিলেন। যে নারীরা চব্বিশের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে নেমে এসেছিলেন। সেই নারীরা যদি হেরে যান, তাহলে হেরে যাবে পুরো সমাজ। সমাজের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
দেশের আপামর জনগণকে এ লড়াইয়ে শামিল হতে হবে। আমাদের মেয়েরা হারবে না। কারণ, আমাদের মেয়েরা হেরে গেলে, হেরে যাবে বাংলাদেশ।
আমিনুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র ম ব যবস থ ই ঘটন র অপর ধ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।