সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি আত্মহত্যা করেনি, বরং তারা খুন হয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন ২ জন। তবে ডিএনএতে অস্পষ্টটায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। টাস্কফোর্সের তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

হাইকোর্টের আদেশে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তদন্তে দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত কারণে খুনের তথ্য পায়নি টাস্কফোর্স। ভিসেরা রিপোর্টেও চেতনানাশক বা বিষজাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি। রান্না ঘরে থাকা ছুরি ও বটি দিয়ে হত্যা করা হয় তাদের। ক্ষত নিয়েও অনেকক্ষণ জীবিত ছিলেন তারা। আগে থেকে বাসায় কেউ ছিল না, আর জোর করে কেউ প্রবেশ করেনি।

আরো পড়ুন:

বগুড়ায় ২ সাংবাদিকের ওপর হামলা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ডুরার নতুন সভাপতি আবির, সম্পাদক জহির

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ঘটনাস্থলে ৪ জনের ডিএনএ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৩ জন পুরুষ ও একজন নারী। যাদের মধ্যে ২ জন সাগর-রুনি, তবে অন্য দুজনের ডিএনএ কোনোভাবেই শনাক্ত করতে পারেনি টাস্কফোর্স। তাই হত্যার মোটিভ ও খুনে কারা জড়িত সে বিষয়টিও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করা যায়নি।

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতের চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তভার পড়ে টাস্কফোর্সের ওপর। পরে নতুন করে ৭ সাংবাদিকসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাস্কফোর্স।

সম্প্রতি জমা দেওয়া সংস্থাটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে খুন হন সাগর-রুনি। এছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি জানায়, প্রথমে সাগর ও পরে ছুরিকাঘাত করা হয় রুনিকে। হত্যার আগে সন্তান মেঘকে নিয়ে একই খাটে শুয়ে ছিলেন তারা।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, হত্যায় সাগর বাধা দিতে পারে- এমন ধারণায় তার হাত-পা বাঁধা হয়। রুনি নারী হিসেবে দুর্বল চিন্তা করে তার হাত-পা বাঁধার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। ‘ব্ল্যাড পেটার্ন’ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয়, আগে মারা গেছেন রুনি। আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে সমীকরণ মিলিয়ে টাস্কফোর্স বলছে, সাগরের মৃত্যু হয়েছে পরে।

গত ২২ এপ্রিল হাইকোর্টে দাখিল করা টাস্কফোর্সের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সেদিন (হত্যার রাতের পরদিন সকাল) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। এর আগে গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়দের পায়ের ছাপে ধ্বংস হয়ে যায় আলামত। তবে রান্না ঘরের বারান্দা সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ও সাড়ে ৮ ইঞ্চির ভাঙা অংশটি সম্পূর্ণ নতুন ছিল। তা দিয়ে সহজে মানুষ ঢুকতে ও বের হতে পারে। যদিও সেখানকার পূর্ণাঙ্গ ফুটপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি।

এদিকে, সিআইডির সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে টাস্কফোর্স জানায়, একসঙ্গে ২ বা ৩ জনের ডিএনএ থাকলে শনাক্ত করা সম্ভব। সংখ্যায় এর বেশি হলে শনাক্ত করা কঠিন। নমুনায় ৫ থেকে ৬ জনের ডিএনএ থাকায় তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে, রুনির অফিসিয়াল নথি ঘেঁটেও তার সঙ্গে কারো শত্রুতার প্রমাণ পায়নি টাস্কফোর্স। আলোচিত বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড নিয়ে রিপোর্টের জেরে এ হত্যারও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সাগরের মালিকানাধীন এনার্জি বাংলা ডটকমে কোনো সংবাদের জেরে, পেশাগত কারণেও এই হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র মেলেনি।

এছাড়া পারিবারিক কলহের কারণে একজনকে হত্যার পর অন্যজনের আত্মহত্যার তথ্য-প্রমাণও পায়নি টাস্কফোর্স। ক্রাইমসিন পর্যালোচনা, আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে টাস্কফোর্স জানিয়েছে, ২ জনকেই হত্যা করা হয়েছে, আত্মহত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাগর ও রুনি। ঘটনার সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম। মামলার আসামিরা হলেন-রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির ২ নিরাপত্তারক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের বন্ধু তানভীর রহমান খান। 

ঢাকা/এম/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

বাগ্‌যুদ্ধে খেপে রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠানোর নির্দেশ দিলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুটি পারমাণবিক সাবমেরিনকে অবস্থান বদলে রাশিয়ার কাছাকাছি মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন। সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের মন্তব্যে চটে গিয়ে এ নির্দেশ দেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দিয়ে ট্রাম্প জানান, এ সপ্তাহে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভের ‘খুবই উসকানিমূলক মন্তব্যের’ পরিপ্রেক্ষিতে সাবমেরিন দুটির অবস্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে।

এর ঠিক এক দিন আগেই মেদভেদেভ সতর্ক করে বলেন, ‘কল্পিত ডেড হ্যান্ড কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্পের সচেতন থাকা উচিত।’ মূলত রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধকালীন পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন।

উল্লেখ্য, ‘ডেড হ্যান্ড’ এমন একটি স্বয়ংক্রিয় প্রতিশোধমূলক পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থা, যা আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন গড়ে তোলে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, যদি যুক্তরাষ্ট্র বা কোনো প্রতিপক্ষ প্রথম আঘাতে সোভিয়েত নেতৃত্ব ও কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল ধ্বংস করে দেয়, তবু যেন রাশিয়ার পক্ষ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চূড়ান্ত প্রতিশোধ নেওয়া যায়।

আর মেদভেদেভের এ মন্তব্যেই চটেছেন ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন যথাযথ স্থানে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছি। বোকামিপূর্ণ ও উত্তেজক ওই সব মন্তব্য এর চেয়েও বেশি কিছু।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও লিখেন, ‘শব্দগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়ই অপ্রত্যাশিত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমি আশা করি, এটি এমন ঘটনাগুলোর একটি হবে না।’

আরও পড়ুনইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে রাশিয়াকে ১০-১২ দিনের সময়সীমা ট্রাম্পের২৯ জুলাই ২০২৫

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় মেদভেদেভের সঙ্গে তুমুল বাগ্‌যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মেদভেদেভ বর্তমানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসনের অধীন রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পুতিন ও মেদভেদেভ খুবই ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন মেদভেদেভ। তখন পুতিন ছিলেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। পরে ২০১২ সালে পুতিন প্রেসিডেন্ট পদে ফেরেন। মেদভেদেভ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। তিনি এ পদে ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছিলেন।

আরও পড়ুনট্রাম্পের বক্তব্যে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের’ ঝুঁকি বাড়ছে২৮ মে ২০২৫

ইউক্রেনে চলমান রুশ হামলা নিয়ে নিজের ক্রমবর্ধমান হতাশা জানাতে গিয়ে ট্রাম্প প্রায়ই রাশিয়ার ‘যুদ্ধবাজ নেতা’ মেদভেদভকে নিশানা করছেন। দুই নেতা নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত করে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। একই সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনার পারদও ক্রমেই চড়ছে।

আরও পড়ুনপুতিনকে ঘাতক বলতে চাই না, তিনি একজন কঠিন মানুষ: ট্রাম্প১৫ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাগ্‌যুদ্ধে খেপে রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠানোর নির্দেশ দিলেন ট্রাম্প