জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যত আইফোন বিক্রি হবে, তার বেশির ভাগ ভারতে তৈরি
Published: 4th, May 2025 GMT
চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া আরও কয়েক বছর আগেই শুরু করেছে অ্যাপল। এবার বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন আবহের মধ্যেই অ্যাপলের সিইও টিম কুকের ঘোষণা, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যত আইফোন বিক্রি হবে, তার বেশির ভাগই যাবে ভারত থেকে।
এখানেই শেষ নয়, টিম কুক আরও বলেছেন, আইপ্যাড, ম্যাক, অ্যাপল ওয়াচ ও এয়ার পডের মতো পণ্যের মূল উৎস দেশ হবে ভিয়েতনাম। অর্থাৎ তারা এসব পণ্যের উৎপাদনও চীন থেকে সরিয়ে আনবে।
ডয়চে ভেলের সংবাদে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর চীনের সঙ্গে যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন, তার পর থেকেই অ্যাপল ভারতে উৎপাদন শুরু করে। আরও অনেক পশ্চিমা কোম্পানি চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিচ্ছে। সেই সুযোগে ভারত অ্যাপলকে নিজ দেশে নিয়ে আসে। প্রথমে ফক্সকন ভারতে আইফোন উৎপাদন শুরু করে। এবার চীন-আমেরিকা শুল্কযুদ্ধের আবহে ব্যবসায়িক মানচিত্রে ভারতের গুরুত্ব আরও বাড়ল
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, আইফোনের অন্যতম বৃহৎ বাজার ভারত। ব্যবসা বৃদ্ধির সুযোগও আছে সেখানে। তবে ঘরের মাটিতে বিক্রির জন্য এখানে সেগুলো তৈরি করে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা মূলত দাম কম রাখার কৌশল। অর্থাৎ অন্তত এ ক্ষেত্রে চীন-যুক্তরাষ্ট্র শুল্কযুদ্ধের সুফল তুলছে ভারত। অ্যাপলের ব্যবসায় বাড়ছে গুরুত্ব।
কুক আরও জানিয়েছেন, জুন ত্রৈমাসিকে চীন থেকে যে পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবে, তার বেশির ভাগে ন্যূনতম ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে। অন্যান্য পণ্য ও পরিষেবায় আরোপিত হবে ১২৫ শতাংশ। অর্থাৎ মোট ১৪৫ শতাংশ। তিনি আরও জানান, চীন, ভারত ও ভিয়েতনামে যে হারে শুল্ক আছে, তাতে অ্যাপলের পণ্য আমেরিকায় আমদানি খরচ ৯০ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত থাকায় সেই দেশ থেকে রপ্তানিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। অ্যাপলের মুনাফা বাড়াতে ভারত হতে পারে তুরুপের তাস।
এদিকে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার আগে মার্চের শেষ সপ্তাহে মাত্র তিন দিনের মধ্যে আইফোন ও অন্যান্য সামগ্রী বোঝাই পাঁচটি বিমান ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গেছে অ্যাপল। ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া ট্রাম্পের ১০ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক (অতিরিক্ত) এড়াতেই জরুরি ভিত্তিতে এসব পণ্য আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুধু ভারত থেকেই নয়, চীনের কারখানা থেকেও যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি ভিত্তিতে পণ্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স
বাস্তবতা হলো, ১৪৫ শতাংশ শুল্কে চীনে উৎপাদিত আইফোনের দাম উঠবে প্রায় আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত। ফলে অ্যাপল এখন ভারতেই যে সিংহভাগ আইফোন উৎপাদনের চেষ্টা করবে, তা অবাস্তব কিছু নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য পল র উৎপ দ আইফ ন
এছাড়াও পড়ুন:
চবির বিশেষ ভোজের টোকেনে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ‘অতিথি’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন আবাসিক হলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এতে আবাসিকদের শিক্ষার্থী বলা হচ্ছে এবং অনাবাসিকদের অতিথি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, আবাসিকদের জন্য টাকার পরিমাণ কম ধরলেও অনাবাসিকদের জন্য বেশি ধরা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ ফরহাদ হোসেন হলে উন্নত ভোজের টোকেন আবাসিকদের জন্য ১০০ টাকা ধরা হয়েছে। অপরদিকে, অতিথিদের জন্য ধরা হয়েছে ১৭০ টাকা; এই অতিথিরা হলেন হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। শামসুন নাহার হলে আবাসিকদের জন্য ৮০ টাকা, অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা। মিল পদ্ধতি চালু থাকা আমানত হলে আবাসিকদের জন্য ফ্রি হলেও অনাবাসিকদের জন্য ৭০ টাকা। তবে সোহরাওয়ার্দী হলে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্যই ১৫৫ টাকা ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল শাবিপ্রবি প্রশাসন
চবিতে বিপ্লবী ছাত্র ঐক্যের আত্মপ্রকাশ
এদিকে, বিজয়-২৪ হলের প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্য ৮০ টাকা উল্লেখ করলেও দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা ধরা হয়েছে। এভাবে অন্যান্য হলগুলোতেও একই অবস্থার কথা জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জারিফ মাহমুদ বলেন, “৫ আগস্টের ফিস্ট নিয়ে হলে হলে বিশেষ খাবারের আয়োজন করছে, সেখানে আবাসিক-অনাবাসিক আলাদা করেছে। আমার প্রশ্ন হলো, প্রশাসনদের ছাত্র বা সন্তান কি শুধু আবাসিকরা? আমরা যারা অনাবাসিক, তারা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ে এসেছি?”
তিনি প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা আমাদের হলে সিট দিতে পারেননি, এটা আপনাদের ব্যর্থতা। এই আবাসিক-অনাবাসিক পরিচয় বন্ধ করুন। আয়োজন করলে সবার জন্য সমান করে আয়োজন করুন। আর সেটা না পারলে আয়োজন বন্ধ করুন।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম শাহ ফেসবুকে লেখেন, “কোনো একটা বিশেষ দিন এলেই দেখা যায়, হল প্রশাসনগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে দাঁড় করানোর ভণ্ডামি। ৫ তারিখে আয়োজনকে ঘিরে তারা আবার সেই অতিথি টার্ম সামনে নিয়ে আসছে। ফরহাদ হলে অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ ভোজের আয়োজনের টোকেন আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা এবং অতিথিদের জন্য ১৭০ টাকা। বাকি হলগুলোতে বোধহয় তাই করেছে। কিন্তু এই অতিথিগুলোও তো বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী।”
তিনি বলেন, “বাহির থেকে যে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসবে, তাদের থেকে ৭০ টাকা করে বেশি না নিলে তো হল প্রশাসন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে না। আর আপনাদের যদি সামর্থ্য নাই থাকে, কাউকেই খাওয়ায়েন না। কিন্তু ৫ আগস্টের দিনকে কেন্দ্র করে করা অনুষ্ঠানে প্রিভিলেজড-আনপ্রিভিলেজড বিষয়টা জিইয়ে রাখাটা নিতান্ত নোংরামি লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এটা নিয়ে ভাবা উচিত।”
এ বিষয়ে শহিদ মো. ফরহাদ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “এ সিদ্ধান্তটি শুধু ফরহাদ হলের জন্য নয়, অন্যান্য হলেও এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। মূলত উন্নত ভোজের আয়োজনটি আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য করা হয়েছে। তারপরেও কোনো অনাবাসিক শিক্ষার্থী বা কারো বন্ধুবান্ধব অংশ নিতে চাইলে পারবে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে সব হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী