স্টেগেনের ফেরার ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও জিতল ‘কামব্যাক কিং’ বার্সা
Published: 4th, May 2025 GMT
ইনজুরি কাটিয়ে টের স্টেগেন সাত মাস পর মাঠে ফেরলিন। অথচ গা গরম হওয়ার আগেই গোল হজম করে বসলেন। তবে এই জার্মান গোলরক্ষক অবশ্য শেষ পর্যন্ত হাসি মুখেই মাঠ ছাড়তে পেরেছেন। স্প্যানিশ লা লিগা ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও রাফিনহা এবং ফারমিন লোপেজ গোলে ২-১ ব্যবধানে রিয়াল ভায়াদোলিদকে হারায় বার্সেলোনা। ম্যাচ শেষে স্টেগেন জানালেন, তিনি মাঠে ফেরার জন্য মুখিয়ে ছিলেন।
এই মৌসুমে (২০২৪-২৫) লা লিগায় বার্সেলোনা এ নিয়ে পঞ্চমবার পিছিয়ে পড়েও ম্যাচ জিতল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সেলোনা এই মৌসুমে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচ জিতেছে ৮টি, যার মধ্যে শুধু ২০২৫ সালেই ৬টি।
অবনমন অঞ্চলে থাকা ভায়াদোলিদের বিপক্ষে এই জয়ের ফলে লা লিগা শিরোপার দিকে আরো একধাপ এগিয়ে গেল বার্সা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে এখন কাতালান জায়ান্টদের ৭ পয়েন্টের পার্থক্য। যদিও এক ম্যাচ কম খেলেছে লস ব্ল্যাঙ্কসরা। ৩৪ ম্যাচ শেষে বার্সার সংগ্রহ ৭৯ পয়েন্ট। রবিবার (৪ মে) রাতে সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে মাঠে নামবে রিয়াল।
আরো পড়ুন:
রেফারিকে বরফ ছুঁড়ে ছয় ম্যাচ নিষিদ্ধ রুডিগার
পাঁচ গোলের রোমাঞ্চকর ফাইনালে শেষ হাসি বার্সার
ভায়াদোলিদ ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটেই চমক জাগিয়ে এগিয়ে যায়। রাউল মোরোর পাস থেকে ইভান সানচেজের ডিফ্লেক্টেড একটি ক্রস জার্মান গোলরক্ষক স্টেগেনের পাশ দিয়ে জালে চলে যায়। বার্সেলোনা প্রথমার্ধে সমতা ফেরানোর চেষ্টা করলেও, ভায়াদোলিদের গোলরক্ষক আন্দ্রে ফেরেইরার দারুণ গোলকিপিংয়ে সেটা সম্ভব হয়নি। তিনি আনসু ফাতি ও লোপেজের শট ঠেকিয়ে দেন। বার্সা ছন্দ পেতেই হিমশিম খাচ্ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধে বার্সেলোনা ছন্দে ফিরে। ৫৪তম মিনিটে লামিনে ইয়ামালের ক্রস ফেরেইরা ঠেকাতে পারলেও ফিরতি বলে চমৎকার হাফভলিতে গোল করেন বদলি খেলোয়াড় রাফিনহা। এরপর ৬০তম মিনিটে জেরার্দ মার্টিনের নিখুঁত পাস থেকে লোপেজ দুর্দান্ত দূরপাল্লার শটে গোল করে বার্সেলোনাকে এগিয়ে দেন।
ম্যাচ শেষে স্টেগেন বলেন, “আমি এই ম্যাচটি খেলতে মুখিয়ে ছিলাম এবং জয় পাওয়াটা সবসময়ই ভালো। আমরা আমাদের ভালো ফর্ম ধরে রেখেছি, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যখন আপনি ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়েন, তখন যেকোনো দলের জন্যই সেটা কঠিন। তাদের (ভায়াদোলিদ) হারানোর কিছু ছিল না, কষ্ট করে খেলেছে। কিন্তু আমাদের যা দরকার ছিল, সেটা করেছি।”
ম্যাচটি অল্প সময়ের জন্য বন্ধ গয়ে গিয়েছিল। যখন ১৯ বছর বয়সী অভিষক্ত দানি রদ্রিগেজ চোটে মাঠে পড়ে থাকেন। পরে লামিন ইয়ামাল এই ত্রুণের বদলি হিসেবে নামেন। বার্সা মিডফিল্ডার গাভিকেও হারায় চোটের কারণে। যদিও ম্যাচ শেষে ফ্লিক এই চোটকে তেমন পাত্তা দিলেন না।
ফ্লিক বলেন, “আমি মনে করি গাভি ঠিক আছে। আমি আশা করি এটা গুরুতর চোট না। ম্যাচের পর সে বলেছে ঠিক আছে। তবে আমাদের আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
স্টেগেন সাত মাস পর চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরলেও ফ্লিক নিশ্চিত করেন যে, ইন্টার মিলান এবং আসন্ন এল ক্লাসিকোতে গোলপোস্টে ভয়চেক সেজনিই থাকবেন।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প য ন শ ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম বিশ্বকাপের নায়ক বার্নার্ড জুলিয়েন আর নেই
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট আবার হারালো তার এক সোনালি সন্তানকে। ১৯৭৫ সালের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম নায়ক, ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সেই স্টাইলিশ অলরাউন্ডার বার্নার্ড জুলিয়েন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ট্রিনিদাদের ভ্যালসাইনে ৭৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার প্রস্থান যেন এক যুগের অবসান; সেই এক সময়ের, যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুধু ক্রিকেট খেলত না, ক্রিকেট অধিকার করত। আর সেই দাপুটে সূচনার গল্পে জুলিয়েন ছিলেন এক অবিচ্ছেদ্য নাম।
আরো পড়ুন:
ভোট দেননি তামিম
বিসিবি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ
১৯৭৫, যে বছর ইতিহাস লিখেছিলেন জুলিয়েন:
বিশ্বকাপের প্রথম আসর, ১৯৭৫ সাল। কেউ জানত না এই নতুন ফরম্যাটের ক্রিকেট ভবিষ্যতে এমন ইতিহাস রচনা করবে। কিন্তু বার্নার্ড জুলিয়েন জানতেন, এটি তার নিজের পরিচয় তুলে ধরার মঞ্চ। বাঁহাতি এই সিমার বলকে নাচাতে পারতেন দু’দিকেই, হাতে ছিল দারুণ ব্যাটিং সেন্স আর ফিল্ডিংয়ে ছিলেন একদম চঞ্চল।
গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার পরিসংখ্যান- ৪ উইকেট ২০ রানে। এরপর সেমিফাইনালে নিউ জিল্যান্ডকে ভস্ম করে শিকার করেন ৪ উইকেট ২৭ রানে। দুটি ম্যাচই ছিল ক্লাইভ লয়েডের দলের ফাইনালে ওঠার ভিত্তি।
আর লর্ডসে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, জুলিয়েনের ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ২৬ রান, যা দলের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে বড় ভূমিকা রাখে। সেদিনের জয় দিয়েই শুরু হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাম্রাজ্যের উত্থান। যে সাম্রাজ্যের প্রথম সৈনিকদের একজন ছিলেন বার্নার্ড জুলিয়েন।
ক্লাইভ লয়েডের আবেগঘন স্মৃতিচারণ:
সহযোদ্ধা ও অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড তাকে স্মরণ করলেন গভীর ভালোবাসায়, “ও সবসময় শতভাগ দিতো, দায়িত্ব থেকে কখনো পিছু হটেনি। ব্যাট হাতে বা বল হাতে আমি সবসময় তার ওপর নির্ভর করতে পারতাম। সে ছিল প্রকৃত অর্থেই এক সম্পূর্ণ ক্রিকেটার।”
লয়েড আরও বলেন, “ওর মধ্যে ছিল আনন্দ, ছিল বিনয়। লর্ডসে একবার টেস্ট জেতার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দর্শকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম, অটোগ্রাফ দিয়েছিলাম। সেই আনন্দে সবার আগে ছিল জুলিয়েন। মানুষ তাকে ভালোবাসতো, সম্মান করতো, যেখানেই গেছি।”
ক্ষণজীবী কিন্তু উজ্জ্বল এক ক্যারিয়ার:
জুলিয়েনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ছিল মাত্র চার বছরের, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত। এই সময়ে তিনি খেলেছেন ২৪ টেস্ট ও ১২ ওয়ানডে। টেস্টে ৮৬৬ রান ও ৫০ উইকেট, ওয়ানডেতে ৮৬ রান ও ১৮ উইকেট; সংখ্যায় হয়তো বিশাল নয়, কিন্তু প্রভাব ছিল বিশুদ্ধ স্বর্ণের মতো।
তিনি ছিলেন সেই যুগের অংশ, যখন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে ছন্দ, সাহস আর গর্ব এক হয়ে উঠেছিল। যে সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের অপ্রতিরোধ্য প্রতীক।
শ্রদ্ধা জানাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড:
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি কিশোর শ্যালো বলেন, “বার্নার্ড জুলিয়েনকে সম্মান জানাতে গিয়ে আমরা শুধু একজন ক্রিকেটার নয়, এক অধ্যায়ের প্রতিফলনকেও স্মরণ করছি। তার জীবন প্রমাণ করে, উদ্দেশ্যনিষ্ঠ জীবন কখনো শেষ হয় না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। জুলিয়েন আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবেন, যে উত্তরাধিকার কখনো ম্লান হবে না।”
এক উত্তরাধিকারের নাম- বার্নার্ড জুলিয়েন:
বার্নার্ড জুলিয়েনের গল্প কেবল একজন ক্রিকেটারের নয়, এটি এক জাতির জেগে ওঠার গল্প। তিনি খেলেছিলেন এমন এক সময়, যখন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট শিখছিল নিজের ছন্দে নাচতে। আর সেই সুরে তিনি ছিলেন প্রথম তালবাদক।
আজ তিনি নেই, কিন্তু তার বলের সুইং, ব্যাটের দৃঢ়তা, মাঠে ছুটে যাওয়া সেই প্রাণচঞ্চল হাসি; সবই রয়ে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের স্মৃতির পাতায়।
ঢাকা/আমিনুল