সব ডোজ টিকা পায়নি দেশের ১৮ শতাংশ শিশু
Published: 4th, May 2025 GMT
দেশের সব শিশু সময়মতো টিকা পায় না। সরকারি ও ইউনিসেফের হিসাব বলছে, এক বছরের কম বয়সী ১৮ শতাংশ শিশু পূর্ণ ডোজ টিকা পায়নি। অন্যদিকে দেশের সব জেলার শিশুরা সমান হারে টিকা পায় না। টিকা পাওয়ার হার সবচেয়ে কম ঢাকা জেলার শিশুদের।
আজ রোববার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই তথ্য দেওয়া হয়। ‘বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ ২০২৫’ উদ্যাপন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইউনিসেফের সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার সিভিল সার্জন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একজন পরিচালক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের প্রতিনিধি এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক আবদুল্লাহ মুরাদ বলেন, সব শিশু টিকার আওতায় না আসার কিছু কারণ আছে। প্রথমত মাঠপর্যায়ে জনবল কম আছে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে নিরবচ্ছিন্ন টিকা সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে সফল কর্মসূচির একটি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল। ১৯৮৫ সালে ইপিআইয়ের আওতায় দুই শতাংশের কম শিশু ছিল। এখন তা ৮২ শতাংশ। ইপিআইতে এখন ১১টি টিকা দেওয়া হয়। ইপিআইয়ের সর্বশেষ মূল্যায়ন হয় ২০২৩ সালে। আজকের অনুষ্ঠানে সেই মূল্যায়নের তথ্য দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়, ২০২৫ সালের টিকাদান পরিস্থিতির মূল্যায়ন চলছে। দু–এক মাসের মধ্যে ফলাফল জানা যাবে।
মূল উপস্থাপনায় ইউনিসেফের টিকা বিশেষজ্ঞ লি শান্তা বলেন, দেশে এক বছরের কম বয়সী ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু পূর্ণ ডোজ টিকা পায়। অর্থাৎ ওই বয়সে যতগুলো টিকা পাওয়ার কথা সব টিকা তারা পায় (এর মধ্যে আছে: বিসিজি, পেন্টা, ওপিভি, পিসিভি, আইপিভি, এমআর)। টিকা পাওয়ার হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। গ্রামের ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু পূর্ণ ডোজ টিকা পায়, শহরে পায় ৭৯ শতাংশ শিশু।
শিশুদের টিকা পাওয়ার বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের তথ্যও দেন ইউনিসেফের ওই কর্মকর্তা। তাতে দেখা যায়, টিকার আওতায় থাকা শিশুদের হার সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে, সবচেয়ে কম ঢাকা বিভাগে। বরিশাল ও ঢাকা বিভাগে এই হার যথাক্রমে ৮৯ শতাংশ ও ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
দেশের জেলাগুলোর মধ্যে কার্যকর টিকা পাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি ভোলা জেলায়। এই জেলার ৯২ দশমিক ২ শতাংশ শিশু পূর্ণ ডোজ টিকা পায়। আর সবচেয়ে কম হারে টিকা পায় ঢাকা জেলার শিশুরা (ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এই হিসাবের বাইরে)। ঢাকা জেলার ৬৭ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু পূর্ণ ডোজ টিকা পায়।
এক বছরের কম বয়সী শিশুদের পূর্ণ ডোজ টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকার পরিস্থিতিও অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অবস্থা সবচেয়ে ভালো। এখানে ৯৩ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু পূর্ণ ডোজ টিকা পায়। অবস্থা সবচেয়ে খারাপ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। এখানে পূর্ণ ডোজ টিকার আওতায় আসা শিশু ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ।
ইউনিসেফের কর্মকর্তা লি শান্তা বলেন, টিকার জন্য এক ডলার বিনিয়োগ করলে ২৫ দশমিক ৪ ডলার ফেরত পাওয়া যায়। এর অর্থ হচ্ছে, টিকা না নিলে শিশুরা রোগে আক্রান্ত হয়। সেই রোগ নিরাময়ে ওই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনরা তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা ও সমস্যা তুলে ধরেন। নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন এ এফ এম মশিউর রহমান বলেন, পূর্ণ ডোজ টিকা না পাওয়া শিশুদের বিষয়ে মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সঞ্চালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশের মতো সুবিন্যস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশ্বের কম দেশেই আছে। তবে মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। সমন্বয়ের ঘাটতি দূর হলে আরও বেশি হারে শিশু টিকার আওতায় আসবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট ক র আওত য় ইউন স ফ র অন ষ ঠ ন র সবচ য় দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
চবির বিশেষ ভোজের টোকেনে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ‘অতিথি’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন আবাসিক হলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এতে আবাসিকদের শিক্ষার্থী বলা হচ্ছে এবং অনাবাসিকদের অতিথি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, আবাসিকদের জন্য টাকার পরিমাণ কম ধরলেও অনাবাসিকদের জন্য বেশি ধরা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ ফরহাদ হোসেন হলে উন্নত ভোজের টোকেন আবাসিকদের জন্য ১০০ টাকা ধরা হয়েছে। অপরদিকে, অতিথিদের জন্য ধরা হয়েছে ১৭০ টাকা; এই অতিথিরা হলেন হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। শামসুন নাহার হলে আবাসিকদের জন্য ৮০ টাকা, অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা। মিল পদ্ধতি চালু থাকা আমানত হলে আবাসিকদের জন্য ফ্রি হলেও অনাবাসিকদের জন্য ৭০ টাকা। তবে সোহরাওয়ার্দী হলে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্যই ১৫৫ টাকা ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল শাবিপ্রবি প্রশাসন
চবিতে বিপ্লবী ছাত্র ঐক্যের আত্মপ্রকাশ
এদিকে, বিজয়-২৪ হলের প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্য ৮০ টাকা উল্লেখ করলেও দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা ধরা হয়েছে। এভাবে অন্যান্য হলগুলোতেও একই অবস্থার কথা জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জারিফ মাহমুদ বলেন, “৫ আগস্টের ফিস্ট নিয়ে হলে হলে বিশেষ খাবারের আয়োজন করছে, সেখানে আবাসিক-অনাবাসিক আলাদা করেছে। আমার প্রশ্ন হলো, প্রশাসনদের ছাত্র বা সন্তান কি শুধু আবাসিকরা? আমরা যারা অনাবাসিক, তারা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ে এসেছি?”
তিনি প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা আমাদের হলে সিট দিতে পারেননি, এটা আপনাদের ব্যর্থতা। এই আবাসিক-অনাবাসিক পরিচয় বন্ধ করুন। আয়োজন করলে সবার জন্য সমান করে আয়োজন করুন। আর সেটা না পারলে আয়োজন বন্ধ করুন।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম শাহ ফেসবুকে লেখেন, “কোনো একটা বিশেষ দিন এলেই দেখা যায়, হল প্রশাসনগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে দাঁড় করানোর ভণ্ডামি। ৫ তারিখে আয়োজনকে ঘিরে তারা আবার সেই অতিথি টার্ম সামনে নিয়ে আসছে। ফরহাদ হলে অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ ভোজের আয়োজনের টোকেন আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা এবং অতিথিদের জন্য ১৭০ টাকা। বাকি হলগুলোতে বোধহয় তাই করেছে। কিন্তু এই অতিথিগুলোও তো বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী।”
তিনি বলেন, “বাহির থেকে যে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসবে, তাদের থেকে ৭০ টাকা করে বেশি না নিলে তো হল প্রশাসন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে না। আর আপনাদের যদি সামর্থ্য নাই থাকে, কাউকেই খাওয়ায়েন না। কিন্তু ৫ আগস্টের দিনকে কেন্দ্র করে করা অনুষ্ঠানে প্রিভিলেজড-আনপ্রিভিলেজড বিষয়টা জিইয়ে রাখাটা নিতান্ত নোংরামি লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এটা নিয়ে ভাবা উচিত।”
এ বিষয়ে শহিদ মো. ফরহাদ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “এ সিদ্ধান্তটি শুধু ফরহাদ হলের জন্য নয়, অন্যান্য হলেও এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। মূলত উন্নত ভোজের আয়োজনটি আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য করা হয়েছে। তারপরেও কোনো অনাবাসিক শিক্ষার্থী বা কারো বন্ধুবান্ধব অংশ নিতে চাইলে পারবে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে সব হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী