গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাকুলিয়া এখন পুরুষশূন্য গ্রাম
Published: 8th, May 2025 GMT
কিশোরীকে উদ্ধারে আসা পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার পর পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বাকুলিয়া গ্রাম। গণগ্রেপ্তার আতঙ্কে গা-ঢাকা দিয়েছেন তারা। গ্রামবাসীর ওপর পুলিশের হামলার অভিযোগ তুলে গতকাল বুধবার ওই গ্রামের নারীরা মানববন্ধন করেছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন পাশের খয়েরতলা গ্রামের নারীরাও।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, সম্প্রতি বাকুলিয়া গ্রামের ইমাদুল ইসলামের স্ত্রীর ভাগনে সুজন হোসেন যশোরের এক কিশোরীকে পরিবারের অমতে বিয়ে করে সেখানে নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় মেয়েটির পরিবার যশোর কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই থানার পুলিশ সদস্যরা কালীগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় সোমবার মেয়েটিকে উদ্ধারে বাকুলিয়া যান। ওই গ্রামের ইমাদুলের বাড়ি থেকে কিশোরীকে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় কিছু নারী-পুরুষ তাঁকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের মারধরের শিকার হন যশোর কোতোয়ালি থানার এএসআই তাপস কুমার পাল, কনস্টেবল রাবেয়া খাতুন ও ফারজানা খাতুন। সংবাদ পেয়ে কালীগঞ্জ থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সেখান থেকে আহত পুলিশ সদস্য ও কিশোরীকে থানায় নিয়ে যায়।
বুধবার সকালে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বাকুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘ওই দিন পুলিশ সাদা পোশাকে গ্রামে এসেছিল। তারা অকারণে আমাদের বাড়ির নারী-পুরুষদের মারধর করে। এতে মাছুরা খাতুন নামের একজন রক্তাক্ত হন।’
অন্য নারীদের ভাষ্য, পুলিশ মামলা দিয়ে গ্রামের নিরীহ লোকজনকে আটক করছে। এই ভয়ে তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাড়িছাড়া। তারা এমন হয়রানির ঘটনায় পুলিশের বিচার দাবি করেন।
বুধবার বাকুলিয়া গ্রামে ইমাদুল ইসলামসহ কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে কোনো পুরুষকে পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী জানান, পুলিশ গ্রামের যাকে-তাকে আটক করছে। এ ভয়েই পুরুষরা বাইরে বাইরে থাকছেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদারের ভাষ্য, হামলার ঘটনায় সোমবার রাতে যশোর চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই শওকত হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৬০-৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা ওই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। নিরীহ কোনো মানুষকে হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা: রাঙামাটি ও বান্দরবানে প্রতিবাদ
বান্দরবানের থানচির তিন্দু ইউনিয়নে খেয়াং সম্প্রদায়ের এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে রাঙামাটি ও বান্দরবানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকেলে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরের সামনে আয়োজিত এই মানববন্ধনে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এতে রাঙামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুজন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা শাখার সহ-সভাপতি কবিতা চাকমা, মারমা ষ্টুডেন্টস কাউন্সিলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ক্যচিংনু মারমা, তংচংগ্যা ষ্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরামের জেলা শাখার সভাপতি অলনা তংচংগ্যা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবতকালে সংঘটিত পাহাড়ি নারীর ওপর নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এসব ঘটনা বার বার ঘটছে। পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়িত না হওয়ায় আজ পাহাড়ি নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এদিকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা এক বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, থানচিতে খেয়াং নারীকে হত্যার ঘটনায় প্রাথমিক সুরহতাল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। যা সত্য ঘটনাকে আড়াল করে অপরাধীদের রক্ষার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি করেন।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে বান্দরবানে খেয়াং নারীকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হযেছে। সকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রেস কনফারেন্স ও বিকেলে আদিবাসী ছাত্র সমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসনের প্রেস কনফারেন্সে পুলিশ সুপার শহীদুল্লাহ কাওছার বলেন, নিহতের স্বামী সুমন খেয়াং বাদী হয়ে থানচি থানায় মামলা করেছেন।
জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, এটি হত্যাকাণ্ড নাকি অন্য কিছু তা তদন্তের পর বলা যাবে।
মঙ্গলবার বিকেলে আদিবাসী ছাত্র সমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় খেয়াং সম্প্রদায়ের ছাত্র সমাজ, ম্রো, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরাসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের ছাত্ররা। এতে বক্তব্য প্রদান করেন লেলুং খুমী, অংচমং মারমা, ডনাইপ্রু নেলী, জন ত্রিপুরা প্রমুখ।