ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, বুধ ও বৃহস্পতিবার রাতে তাদের সামরিক পরিকাঠামোগুলোকে নিশানা করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।

‘অপারেশন সিন্দুর’-এর নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিং-এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, ‌‌‘পাকিস্তান থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ ড্রোন পাঠানো হয়েছিল। লেহ থেকে শুরু করে গুজরাত পর্যন্ত ৩৬টি জায়গায় হামলা হয়েছে। ভারতীয় সামরিক বাহিনী অনেকগুলো ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।’

তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতে এ রকম কোনো হামলার কথা অস্বীকার করেছিলেন।

কর্নেল সোফিয়া কুরেশির কথায়, ‘আকাশপথে এত ব্যাপক সংখ্যায় অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্য ছিল সম্ভবত আমাদের বিমান-প্রতিরোধী ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখা এবং গোয়েন্দা তথ্য জোগাড় করা।’

যেসব ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে, সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে যে এই ড্রোনগুলো তুরস্কে তৈরি।

‘পাকিস্তানের তরফ থেকে সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি চালানো হচ্ছে। এই গোলাগুলিতে কয়েকজন ভারতীয় সেনাসদস্য হতাহত হয়েছে। ভারতে পাল্টা হামলায় পাকিস্তানের বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে,’ জানিয়েছেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি।

তবে ঠিক কতজন ভারতীয় সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দেননি তিনি।

ওই সংবাদ ব্রিফিং-এ ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং জানান, সাতই মে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ যখন বিনা প্ররোচণায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়, তখনও তারা বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ করে নি। এর অর্থ হল ভারতের ওপরে হামলা হলে যে দ্রুত আকাশ পথে প্রতিরোধ করা হবে, সেটা জানা সত্ত্বেও একটি বেসামরিক বিমানকে ঢাল হিসাবে তারা ব্যবহার করেছিল।

ফ্লাইটরাডার২৪ -এর একটি স্ক্রিনশট দেখিয়ে তিনি দাবি করেন, ‘ভারতে আকাশপথ কিন্তু সব বেসামরিক বিমানের জন্য ঘোষণা দিয়েই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাই ভারতের দিকে আকাশে কোনো বেসামরিক বিমান ছিল না।’

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ অবশ্য বৃহস্পতিবার রাতেই জানিয়েছিলেন, ‘আমরা এটা অস্বীকার করছি। আমরা এখন পর্যন্ত কিছুই করিনি। যখন পাকিস্তান হামলা করবে তখন সবাই জানতে পারবে।’ সূত্র: বিবিসি

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ