বাবা থাকলে জীবন কেমন হতো জানি না, তবে মা আমার সব শূন্যতা পূরণ করে দিয়েছেন
Published: 10th, May 2025 GMT
আমার বড় বোন যখন সবে ক্লাস টুয়ে পড়ে আর আমি মায়ের আঁচল ধরে হাঁটতে শিখছি, ঠিক তখনই আব্বু হঠাৎ মারা গেলেন। বাবার কোনো স্মৃতিই আমার নেই। যখন স্মৃতি জমতে শুরু করল, তখন বুঝলাম, সিঙ্গেল প্যারেন্ট হিসেবে মা আমাদের লালন–পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন, সমাজের সব সংকীর্ণতা, প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আমাদের দুই বোনকে সামলে রাখছেন। তিনি শুধু মা নন, হয়ে উঠলেন বাবা, অভিভাবক, বন্ধু, শিক্ষক—সব।
প্রতিদিন সকালে উঠে, আমাদের জন্য সবকিছু গুছিয়ে অফিসে ছুটতেন। বিকেলে ফিরতেন ক্লান্ত হয়ে, কিন্তু মুখে হাসি লেগেই থাকত। যেন তিনি আমাদের শেখাতে চান—কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, যদি মন থেকে চাও।
প্রাইমারি স্কুলে পড়ি তখন। ছোট্ট একটা ছেলেমানুষি ভুলে হয়তো মা একটু রেগে গিয়েছিলেন। স্কুলে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে তিনি আমাকে একটি চড় মারলেন। আমি চোখে জল নিয়ে, গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম স্কুলের পথে। মনে রাগ, কষ্ট আর অভিমান। বারবার খালি মনে হচ্ছিল, ‘মা কেন এমন করলেন?’
সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য স্কুলে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরই পেয়েছিলাম।
আমার মা, সংসারের হাজারটা দায়িত্ব সামলে সকালেই যার অফিসে যাওয়ার কথা, সেই মা হঠাৎ টিফিনের সময় আমাদের ক্লাসরুমে হাজির। হাতে খাবার নয়, মুখে হাসিও নয়, খালি চোখে একরাশ অপরাধবোধ। শুধু বললেন, ‘তুই ঠিক আছিস তো?’
ওই একটা প্রশ্নেই বুঝে গিয়েছিলাম—মা আমাকে মেরে নিজেকেই শাস্তি দিয়েছেন সারাটা সকাল। আমি যেভাবে গালে ব্যথা পেয়েছিলাম, মা ঠিক সেভাবেই ব্যথা পেয়েছিলেন মনে।
আরও পড়ুনএই মা প্রতিদিন ৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন যে কারণে২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মায়ের সঙ্গে ইসরাত জাহান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
চালকের কষ্ট তিন গুণ তাই গাড়ি ভাড়া দ্বিগুণ
শুক্রবার বিকেল ৩টা। নগরীর বহদ্দারহাট মোড়। বহদ্দরহাট মসজিদের পাশে সারি সারি ব্যাটারিচালিত ও প্যাডেলচালিত রিকশা। রয়েছে তিন-চারটি সিএনজি অটোরিকশা ও অটোটেম্পো। বহদ্দারহাট থেকে চাঁন মিয়া সড়ক হয়ে যেতে হয় শমসেরপাড়া। এখানে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট। মধ্যবয়সী স্বামীকে নিয়ে এ হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসার জন্য যেতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন এক নারী। দূরত্ব বড়জোর দেড় কিলোমিটার। এ দূরত্বে আগে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এখন রিকশা ভাড়া প্রায় তিন গুণ, ৮০ টাকা।
এত বেশি ভাড়া কেন দাবি করছেন– এমন প্রশ্নে রিকশাচালক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘একবার রাস্তাটা দেখেন। কী অবস্থা। এই রাস্তা দিয়ে তো রিকশা চালিয়ে যাওয়া যাবে না। টেনে টেনে নিয়ে যেতে হবে। কষ্ট করে নিয়ে যেতে হবে; তাই ভাড়াও বেশি লাগবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে এ রিকশাচালক বলেন, ‘একসময় প্যাডেলচালিত রিকশা চালাতাম। এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছি। শমসেরপাড়া হাসপাতালে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়ও যাত্রী আনা-নেওয়া করেছি। এখন তিন গুণ বেশি পরিশ্রম হয়। সময়ও লাগে বেশি। তাই ভাড়াও দুই গুণ নিচ্ছি।’
ইকরাম হোসেন নামে শমসেরপাড়ার এক বৃদ্ধ বাসিন্দা জানান, বহদ্দারহাট মোড় থেকে শমসেরপাড়া পর্যন্ত কিছুদিন আগেও টেম্পো ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এখন সড়কের অবস্থা খারাপের কারণে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
নগরীর বহদ্দারহাট মোড় থেকে হাজীরপুল প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা। অনেকটাই ঘিঞ্জি এই এলাকায় বসবাস করেন হাজার হাজার মানুষ। এসব মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা হচ্ছে চাঁন মিয়া সড়ক। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। তার মধ্যে অবশ্য রিকশার সংখ্যাই বেশি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সড়কটির ভয়াবহ চিত্র। এমনিতে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। তার ওপর সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। সড়কে কার্পেটিংয়ের চিহ্নমাত্র নেই। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোড়-বড় গর্ত। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, অবস্থা এতটাই খারাপ যে, সড়কের দুরবস্থা ও জলাবদ্ধতার কারণে অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
চাঁন মিয়া সড়কের ফরিদাপাড়া এলাকার দোকান ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বহদ্দাহাট ও আশপাশের এলাকা। এমন এলাকায় এ রকম ভয়াবহ ভাঙাচোরা রাস্তা মানা যায় না। মানুষের কষ্টের সীমা নেই। বিত্তবানরা এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এলাকার বেশির ভাগ মানুষ নিম্ন ও মধ্যবিত্তের। তারা অসহায়, দুর্ভোগ সঙ্গী করে দিন পার করছেন।’
দীর্ঘদিন পর বহদ্দারহাট মোড় থেকে সড়কটিতে ইটের কার্পেটিং করছে সিটি করপোরেশন। কিছু শ্রমিক সড়কে সামান্য বালুর আস্তরণ দিয়ে তার ওপর ইট বসাচ্ছেন। কয়েক দিন ধরে এই কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকশ’ মিটার ইটের কার্পেটিং করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, বৃষ্টি হতেই কার্পেটিং দেবে যাচ্ছে। কাদা আর বালু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত হলেই কার্পেটিং করা সড়কটি আগের চেহারায় ফিরে যাবে।
চাঁন মিয়া সড়কে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক বছর পর এই সড়কটিতে সিটি করপোরেশনের নজর পড়েছে। কিন্তু যেভাবে সড়কটি ইটের কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল উপযোগী করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি সুফল পাওয়া যাবে না। ইটগুলো উঠে গিয়ে, ভেঙে চুরমার হয়ে সড়কটিকে আরও নাজুক করে দেবে। সময় নিয়ে ভালোভাবে পাথরের কার্পেটিং করা ছাড়া এটিকে যানবাহন চলাচল উপযোগী করা যাবে না।’
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে কোমরসমান পানিতে তলিয়ে যায় বহদ্দারহাট মোড়সহ আশপাশের এলাকা। নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বৃষ্টির পানি আটকে যায় মোড়টিতে। এতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা নিরসনে নালার প্রশস্ততা বাড়ানো এবং এই নালাকে দুটি খালের (চশমা ও মীর্জা খাল) সঙ্গে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নালার ওপর নির্মিত সিটি করপোরেশনের বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে রাত-দিন সমানে কাজ চলছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় এ কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড। এই প্রকল্পের কাজের কারণে চাঁন মিয়া সড়কে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। তাই দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।