ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পাল্টাপাল্টি হামলা জোরদার হয়েছে। ফলে দেশ দুটির সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলো ছাড়তে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। এরই মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন অনেকে। যারা থাকছেন তারা আশ্রয় নিচ্ছেন বাংকারে। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধের আশঙ্কায় অনেকেই খাবার ও নিত্যপণ্য বেশি কিনে বাড়িতে মজুত করছেন। খবর রয়টার্সের

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থাপনায় এই হামলা চালায় ভারত। এই হামলার মধ্য দিয়ে দুই দেশের বর্তমান সংঘাতের শুরু। ভারতের দাবি, তারা পাকিস্তানের ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’য় হামলা চালিয়েছে। তবে এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে পাকিস্তান। 

গত ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার জবাবে পাকিস্তানে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। যদিও শুরু থেকে পেহেলগামের হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইসলামাবাদ।

এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন ও গোলার মাধ্যমে হামলা চালানোর অভিযোগ করেছে পারমাণবিক ক্ষমতাধর ভারত ও পাকিস্তান। প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে এখন যে সংঘাত চলছে, তিন দশকের কাছাকাছি সময়ের মধ্যে তা সবচেয়ে বড়। 

ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা অমনপ্রীত ধীল্লন। ২৬ বছর বয়সী অমনপ্রীত জানান, সীমান্ত থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে তাদের গ্রাম। সেখানকার অনেকেই নারী ও শিশুদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও এটা ভাবছি.

..আমাদের গ্রামেও হামলা হতে পারে।’

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি জেলার কয়েকজন বলেন, সেখানকার কয়েকটি বাড়িতে গোলা পড়েছে। তাই ভয়ে অনেক পারিবার রাতের বেলা বড় পাথরের আড়ালে কিংবা বাংকারে আশ্রয় নিচ্ছেন। 

উরির বারামুল্লা শহরের বাসিন্দা বশির আহমদের বয়স ৪৫ বছর ছুঁয়েছে। তিনি বলেন, ‘জীবনে কখনো এত তীব্র গোলাবর্ষণ দেখিনি। গত রাতে গোলাবর্ষণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ মানুষ শহর ও আশপাশের গ্রামগুলো ছেড়ে চলে গেছেন। কিছু মানুষ বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য এক দুঃস্বপ্ন।’ 

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় ড্রোন হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সেসব ড্রোন প্রতিরোধ করার কথা জানানো হয়। ভারতীয় ড্রোনের কারণে লাহোরে সাইরেন বেজে উঠলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। সেখানে অবস্থিত মার্কিন কনস্যুলেট নিজেদের কর্মীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

খাবার ও ওষুধ মজুত

গতকাল শুক্রবার লাহোরে স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানুষ খাবার, রান্নার জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার আর ওষুধ সংগ্রহ করছেন। এ পরিস্থিতিতে কৃত্রিমভাবে দাম না বাড়াতে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

লাহোরের ৩৪ বছর বয়সী বাসিন্দা আরুশা রামিজ বলেন, ‘আমি আমার পরিবারের জন্য এক মাসের মুদিপণ্য সংগ্রহ করে রেখেছি। মাংস, আটা, চা, তেল, ডাল কিনেছি। ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত অর্থও তুলে রেখেছি।’

লাহোরে একটি ফার্মেসি চালান মোহাম্মদ আসিফ। ৩৫ বছর বয়সী আসিফ বলেন, ‘অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে এখন গ্রাহক বেড়ে গেছে। অনেকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে রাখছেন। এ কারণে প্যারাসিটামল, অ্যান্টি-অ্যালার্জি, অ্যান্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।’

অনেকটা একই রকমের পরিস্থিতি ভারতে। পাঞ্জাবের অমৃতসরের বাসিন্দা পঙ্কজ শেঠ বলেন, ‘কাল বাজার খোলা থাকবে কি না, আমরা জানি না... আমার বাড়িতে সন্তান ও নাতি-নাতনিরা আছে। তাই আমাকে কিনে রাখতে হবে।’  

নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার অনেকেই আত্মীয়স্বজনের জিনিসপত্র নিয়ে যেতে অনুরোধ করছেন। অমৃতসরে নার্স হিসেবে কর্মরত নভনীত কউর বলেন, ‘আমার খালা থাকেন অ্যাটারি এলাকায়। তিনি আমাকে তার জন্য আটা নিয়ে যেতে বলেছেন। কারণ, সেখানে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।’

অমৃতসর থেকে সীমান্তবর্তী অ্যাটারির দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। নভনীত তার খালার পরিবারের জন্য আটার বস্তা নিয়ে সেখানে যাচ্ছিলেন।

রাতে বাংকারে

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি এলাকাগুলোয় যারা বসবাস করেন, তাদের ঝুঁকি আর আতঙ্ক যেন আরও বেশি। স্থানীয় লোকজন জানান, এরই মধ্যে অনেকে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে গেছেন। যারা আছেন, রাতে গোলাবর্ষণ শুরু হলে বাংকারে চলে যান।

পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সরকারপ্রধানের কার্যালয় জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি দুটি এলাকা থেকে চার শতাধিক মানুষকে সরকারি তত্ত্বাবধানে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। 

৪৩ বছর বয়সী মঞ্জুর আহমেদ থাকেন পাকিস্তানের নীলম উপত্যকার জুরা বান্দি গ্রামে। তিনি বলেন, ‘আশপাশের পাথুরে পাহাড়ে আমরা বাংকার খুঁড়েছি। মুজাফফরাবাদে ভারতের হামলার পর থেকে আমরা এসব বাংকারে থাকছি।’ স্থানীয় পুলিশও নিশ্চিত করেছে, এখানকার বেশির ভাগ মানুষ রাতে বাংকারে আশ্রয় নেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বছর বয়স র জন য অন ক ই ন র পদ র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

সোনারগাঁয়ে অটো চুরির অপবাদ দিয়ে নির্যাতন, ৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ  

সোনারগাঁও সাদিপুর ইউপি নানাখী পূর্ব পাড়া গুলনগর এলাকায় অটো চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে রুমে বন্দী করে হাত পা বেঁধে মেরে আহত করে ৪ লাখ টাকা দাবি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমনকি হাত পা ও মুখ বেধে জোর পূর্বক  খালী ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নিয়েছে এলাকার কিছু স্বার্থন্নেষী কুচক্রী মহল। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মোঃ সজিব মিয়ার স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার বাদী হয়ে ৫ জনকে বিবাদী ও ৮/১০ জনকে অজ্ঞাত করে স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।


থানা অভিযোগ সূত্রমতে, বাদী সুমাইয়ার স্বামী সবুজ মিয়া গাড়ি মেরামতের কাজ করে। তাই গত ০৩-০৫-২৫ইং তারিখ সন্ধার দিকে সজিব মিয়ার দুই বন্ধু তার বাড়িতে বেড়াতে আসে। নিজের বাসায় থাকার জায়গা না থাকায় পাশের বাড়ির বন্ধু নাসিরের বাড়িতে রাত্রী যাপন করে।

একই তারিখে দিবাগত রাতে গুলনগর এলাকার হাজ্বী  মোসলেম মিয়ার গ্যারেজ হইতে কয়েকটি অটো চুরি হয়।

পরদিন ৪ মে সকাল আনুমানিক ১০ঘটিকার সময় বিবাদী(১) হাজ্বী মোসলেম উদ্দিন(৬০) পিতা অজ্ঞাত(২) মোঃ তাওলাদ হোসেন (৪০), (৩) রুবেল (৩৮) উভয় পিতা মোসলেম উদ্দিন (৪) বিল্লাল হোসেন (৪২), পিতা- বেনু মিয়া(৫) মোঃ ফারুক(৩৮),পিতা অজ্ঞাত সহ আরো অজ্ঞাতনামা ৮/১০  জন।

উভয় ঠিকানা গুলনগর, সাদিপুর, সোনারগাঁ, নারায়নগঞ্জ।বিবাদীগন পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাদীর স্বামী মোঃ সজিব ও নাছিরকে রাস্তা হইতে ধরে নিয়ে ১নং বিবাদী মোসলেম উদ্দিনের বসত ঘরের রুমে নিয়ে আটক করে।

এরপর বিবাদীগন উপরোক্ত অটো চুরির অপবাদ দিয়ে হাত-পা ও চোঁখ বেধে স্টিলের পাইপ ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত আহত করে অটো চুরি করেছে বলে স্বীকার করতে বলে। তাতে সজিবের হাতে, পায়ে, পিঠে ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নিলাফোলা ও জখম হয়।

এমনকি বিবাদীরা নাছিরের পিতা হাজ্বী আব্দুল রহিমকে ডেকে নিয়ে কয়েকটি অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে তিন লক্ষ্য পঞ্চাশ হাজার (৩৫০,০০০/) ও  আলাদা অন্য স্ট্যাম্পে পঞ্চাশ হাজার (৫০০০০/) টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ  বিবাদীদের দিবে বলে স্বাক্ষর রাখে।

একই তারিখ বিকেল অনুমান ৩ ঘটিকার সময় ছাড়িয়া দেয়। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় সজলকে গুরতর / মুমূর্ষু  অবস্থায়  উদ্ধার করে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করে। সজল মিয়া বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

এ বিষয়ে বিবাদী মোসলেম উদ্দিনের সাথে কথা বলতে চাইলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সজলের স্ত্রী সুমাইয়ার দাবী সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যেন বিবাদীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ