কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গত এক মাসে ১০০ পরিবারের বসতবাড়িসহ ফসলি জমি নদে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েকশ পরিবার। হুমকিতে রয়েছে স্থানীয় বাজার, আবাদি জমি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ায় রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের সুখেরবাতি, সোনাপুর, ঘুঘুমারী ও নামাজেরচর এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক মাসে ১০০ পরিবারের বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদে বিলীন হয়েছে। বসতভিটা বিলীন হওয়ায় অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, এসব এলাকার ভাঙন ঠেকাতে এখন পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যদিও জিও ব্যাগ ফেলা হয়, তাও নামমাত্র জিও ব্যাগ ফেলে দায় সারে কর্তৃপক্ষ।
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল ভাঙন কবলিত এলাকা সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর পরিদর্শন করেছেন রংপুর পানি উন্নয়ন (পাউবো) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব। পরে আবারও ১৮ এপ্রিল ওইসব ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা বিডব্লিউডিবি ডিজাইন সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী ফাইয়াজ জালাল উদ্দিন, ডিজাইন সার্কেলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান। কিন্তু তারা পরিদর্শন করে যাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, বছরের পর বছর নদী ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। অথচ কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার।
নদী ভাঙনের শিকার শিল্পী খাতুনের পরিবার। তিনি জানান, এক সপ্তাহে আগে তাঁর বসতভিটা নদে বিলীন হয়ে গেছে। নিজের কোনো জমি না থাকায় অন্যের জমিতে ঠাঁই নিয়ে বাস করছেন। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি।
নদী ভাঙনের শিকার নাজমা খাতুন বলেন, তাঁর বাবার বাড়িতে বসবাস করতেন। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে ওই বাড়ি। পরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। আর তাঁর দাদার বাড়িতে রয়েছেন বাবা আমজাদ আলী।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সাজেদা খাতুন জানান, তিন দিন আগে তাঁর বসতভিটা নদে বিলীন হয়ে গেছে। তাঁর যেটুকু আবাদি জমি ছিল, তাও নদে বিলীন হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের ভাষ্য, প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তীব্র ভাঙন। এতে বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন। তাদের চোখের সামনেই সবকিছু নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার ছিল না। তারা এখন বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, জিও ব্যাগ ও বান্ডালের টেন্ডার বাতিল করেছে বোর্ড। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থ সংকটের কারণে টেন্ডার বাতিল করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ল ন হয় বসতভ ট পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে টেকনাফে মশালমিছিল, সড়ক অবরোধ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীকে পরিবর্তনের দাবিতে মশালমিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর অনুসারীরা।
আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে টেকনাফ পৌর এলাকার জিরো পয়েন্টের শাপলা চত্বর থেকে মশালমিছিল শুরু হয়, রাত আটটার দিকে শেষ হয় পৌরসভার বাসস্টেশনের ঝরনা চত্বর সড়কে। কর্মসূচি চলার সময় আধা ঘণ্টার মতো টেকনাফের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
শাহজাহান চৌধুরী কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও এই আসনের চারবারের সংসদ সদস্য। ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ। অন্যদিকে মনোনয়নবঞ্চিত মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক। ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে শাহজাহান চৌধুরী বিএনপির প্রার্থী মনোনীত হন।
বিক্ষোভকারীরা দলের ঘোষিত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর মনোনয়ন পরিবর্তনের আহ্বান জানান। মিছিলে মশাল হাতে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর পক্ষে স্লোগান দেন তাঁর অনুসারীরা।
গত অক্টোবর মাসে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ টেকনাফ ও উখিয়াতে বেশ কয়েকটি বড় সমাবেশ করেন। সম্প্রতি এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীকে দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলে ‘বেঁকে’ বসেন আব্দুল্লাহর সমর্থকেরা। গত দুই দিন আব্দুল্লাহর সমর্থকেরা টেকনাফের সড়কে কলাগাছ রোপণ করে দলের প্রার্থী বদলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আজ রাতে মশালমিছিল করে সড়ক অবরোধ করলেন।
আব্দুল্লাহর অনুসারী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সেলিম বলেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে শাহাজাহান চৌধুরীকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হলে আবদুল্লাহকে মনোনয়ন দিতে হবে।
রাতের মশালমিছিল প্রসঙ্গে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি।
জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বড় দল হিসেবে যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। কিন্তু জনপ্রিয়তা, অভিজ্ঞতা এবং গ্রহণযোগ্যতা যাছাই করে একজনকেই প্রার্থী ঘোষণা করতে হয়। সে বিবেচনায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে এবারও দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। সবার উচিত ধানের শীষের পক্ষে কাজ করা। কিন্তু রাতের বেলায় মশালমিছিল নিয়ে সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ বাড়ানো শুভ লক্ষণ নয়।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর সমর্থকদের করা রাতের মশালমিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। কোথাও ভাঙচুর কিংবা হামলার ঘটনা নেই।
আরও পড়ুনকোন আসনে বিএনপির প্রার্থী কে, দেখে নিন০৩ নভেম্বর ২০২৫