ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি নারীর পূর্ণতা তাঁর মাতৃত্বে। অর্থাৎ, সন্তান জন্ম দিতে না পারলে তাঁর নারীসত্তা অপূর্ণ। সম্ভবত, সভ্যতা কিংবা ভদ্রতার খাতিরে ‘অপূর্ণ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় মা হতে অপারগ নারীকে যে করুণ এবং কখনো কখনো নিষ্ঠুর জীবনচিত্র দেখতে হয়, তা কখনোই ‘অপূর্ণতার’ বেলায় হওয়ার কথা নয়। ব্যাপারটা বোঝা যাবে পুরুষকে তাঁর বাবা হওয়ার ক্ষমতা বা সৌভাগ্য দিয়ে পূর্ণতার মাপকাঠিতে কতটা মাপা হয় সেই চিত্রটি দেখলেই। এখনো আমাদের দেশে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান না হওয়ার দায় ও ব্যর্থতা চাপানো হয় নারীর ওপর। আর যারা সন্তান জন্ম  দিতে পারেন, সেখানেই তাদের সাফল্যের চূড়ান্ত নয়। বরং সন্তান জন্ম নেওয়ার পর প্রতিটি নারী এক অনিবার্য লক্ষ্য অর্জনের মাঠে বিরামহীন প্রতিযোগিতায় নিক্ষেপিত হন। সেই প্রতিয়োগিতা ‘ভালো মা’ হওয়ার।

সমাজ পরিবর্তনের এই চরম সন্ধিক্ষণে আমাদের পূর্বের নির্মিত ভালো মায়ের ধারণা এবং বর্তমান অধিকার সচেতন কর্মজীবী নারীদের জীবন বাস্তবতা এক সাংঘর্ষিক জায়গায় উপনীত হয়েছে। ‘মা’ শব্দটি কেবল মাতৃত্ব প্রকাশ করে না। ভাষার রাজনীতিতে এটি এক ত্যাগী মূর্তি প্রকাশ করে– যিনি সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সব কষ্ট ভুলে যাবেন, সন্তানের জন্য ক্যারিয়ারের তোয়াক্কা করবেন না, নিজের কল্যাণ বা সুখ চিন্তা করা এখানে স্বার্থপরতার সামিল। এই বাস্তবতায়, বাইরের দুনিয়ায় কাজ করতে উদ্যমী ও যোগ্য নারীরা যখন নিজে মা হন তখন তার বাস্তবতা হয়ে যায় পুরো উল্টো। ছয়মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পরই ছোট্ট বাচ্চাকে রেখে তার হয়তো ছুটতে হয় অফিসে। বাসায় ফিরেও তিনি হয়তো ভাবছেন, সম্পূর্ণ এনার্জি নিয়ে বাচ্চাকে সময় দিতে পারছেন না।

এই ‘ভালো মা’ হওয়ার বিরামহীন চাপ নারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করে। অনেক মা মনে করেন, তারা যদি সন্তানের সঙ্গে অধিক সময় না কাটান, তবে তারা ‘ভালো মা’ হতে পারছেন না। এই মানসিকতা তাদের মধ্যে অপর্যাপ্ততা ও অপরাধবোধের অনুভূতি সৃষ্টি করে; যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ফেলে নেতিবাচক প্রভাব।

পাশাপাশি ‘মমি গিল্ট’ বা ভালো মা হওয়ার অপর্যাপ্ততার অনুভূতি কর্মজীবী মায়েদের মধ্যে এক সাধারণ সমস্যা। তারা মনে করেন, কর্মজীবন ও পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারলে তারা ‘ভালো মা’ হতে পারছেন না। এই অনুভূতি তাদের পেশাগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অগ্রগতি কমিয়ে দেয়। ‘ম্যাটার্নাল ওয়াল’ বা ‘মাদারহুড পেনাল্টি’র মতো কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্বজনিত বৈষম্য খুব সাধারণ ঘটনা। এই পরিস্থিতি করপোরেট থেকে শুরু করে শ্রমজীবী নারী পর্যন্ত বিস্তৃত।

আমাদের সমাজ পুরুষের কর্মক্ষেত্রে সফলতাকে সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, একজন মায়ের বেলায় সেটি বিবেচিত হয় না। মাতৃত্বকে একটি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ধারণা হিসেবে দাঁড় করতে না পারলে ‘মা’ হওয়া ধীরে ধীরে এই পৃথিবীর নারীদের কাছে ব্যক্তি অস্তিত্বের জন্য হুমকির নাম হয়ে দাঁড়াবে; যা ইতোমধ্যে প্রত্যক্ষ হওয়া শুরু হয়েছে। তাই শুধু নারীর কথা ভেবে নয়; বরং সামাজিক ভারসাম‍্যের কথা ভেবেই এই ‘ভালো মা’ ডিসকোর্সে পরিবর্তন আনা জরুরি।

এখন এই উপলব্ধির সময় এসেছে– ‘ভালো মা’ হওয়ার কোনো একক বা সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই। একজন মা তাঁর মতো করেই ভালো মা হতে পারেন, কর্মজীবী হলেও, না হলেও। একজন কর্মজীবি মায়ের ‘ভালো মা’ হবার মানদণ্ড গৃহিনী মায়ের সঙ্গে তুল্য না হোক। তারা উভয়েই তাদের মতো করে ‘ভালো মা’ হয় ঊঠুন। একইসঙ্গে সন্তান লালন-পালনে বাবার ভূমিকা জোরালোভাবে তুলে ধরা উচিত, যাতে সন্তানের ভালো ভবিষ্যত গড়ার পুরো বোঝা মায়ের উপর না পড়ে। শুধু মাতৃত্বকালীন ছুটি নয়, পিতাদেরও সন্তান জন্মের পর ছুটি দেওয়া দরকার, যাতে দায়িত্ব ভাগাভাগি হয়।

কর্মক্ষেত্রগুলোতে ‘ডে কেয়ার’ বা ‘চাইল্ড কেয়ার’ রাখার ব‍্যবস্থা শহরের একক পরিবারগুলোর জন‍্য স্বস্তিকর হতে পারে। কর্মজীবী মায়েদের জন্য সহমনা নারীদের নিয়ে সাপোর্ট গ্রুপ বা পরামর্শ কেন্দ্র থাকতে পারে, যাতে মানসিক চাপ কমানো যায়। পারিবারিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।

মাতৃত্ব হোক অপার ভালোবাসা ও ভয়হীন। পৃথিবীর সকল মা’কে জানাই ‘মা দিবস’-এর শুভেচ্ছা!

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সম জ ম দ বস ব স তবত র জন য আম দ র হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া কীভাবে করব

ইসলামে অসুস্থতা একটি পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়, যা মুমিনের ধৈর্য ও আল্লাহর উপর ভরসাকে শক্তিশালী করে। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করা একটি ফজিলতপূর্ণ আমল, যা রোগীর জন্য শান্তি ও সুস্থতা নিয়ে আসে এবং দোয়াকারীর জন্য আল্লাহর রহমত অর্জনের মাধ্যম।

মহানবী (সা.) অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ দোয়া ও আমল শিখিয়েছেন, যা হাদিসে বর্ণিত আছে।

রোগীকে দেখতে গিয়ে তার জন্য দোয়া করা এবং মনোবল বাড়ানো সুন্নাহ। রোগীকে ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করতে উৎসাহিত করা উচিত।অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া

ইসলামে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করার ব্যাপারে নবীজি (সা.) কয়েকটি নির্দিষ্ট দোয়া শিখিয়েছেন। এই দোয়াগুলো রোগী নিজে পড়তে পারেন বা অন্য কেউ রোগীর জন্য পড়তে পারেন। নিচে কয়েকটি প্রধান দোয়া উল্লেখ করা হলো:

১. নবীজি (সা.)-এর শেখানো দোয়া

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) অসুস্থ ব্যক্তির জন্য এই দোয়া পড়তেন:

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বান নাস, আযহিবিল বাস, ইশফি আনতাশ শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিফাউক, শিফাআন লা ইউগাদিরু সাকামা।

অর্থ: হে আল্লাহ! মানুষের প্রভু, রোগ দূর করো, সুস্থতা দাও, তুমিই সুস্থতা দানকারী। তোমার সুস্থতা ছাড়া কোনো সুস্থতা নেই, এমন সুস্থতা দাও যা কোনো রোগ রাখে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৪৩)

পড়ার নিয়ম:

রোগীর ডান হাত দিয়ে তার কপাল বা শরীরের ব্যথার স্থানে হাত রেখে এই দোয়া পড়া।

তিনবার বা সাতবার পড়া উত্তম।

রোগী নিজে পড়তে পারেন বা অন্য কেউ রোগীর জন্য পড়তে পারেন।

আরও পড়ুননববিবাহিতদের জন্য তিনটি দোয়া২১ জুলাই ২০২৫

২. সুরা ফাতিহা পড়া

সুরা ফাতিহা রোগ নিরাময়ের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে আছে, সুরা ফাতিহা শিফা বা নিরাময়ের জন্য পড়া যায়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন সাহাবি সুরা ফাতিহা পড়ে একজন রোগীকে সুস্থ করে দিয়েছিলেন, এবং নবীজি (সা.) এটি অনুমোদন করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৬)

যখন তুমি কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করো, ফেরেশতারা বলে, ‘আমিন, তোমার জন্যও তা–ই হোক।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭৩২

পড়ার নিয়ম:

সুরা ফাতিহা সাতবার পড়ে রোগীর শরীরে ফুঁ দেওয়া।

রোগীর কপালে বা ব্যথার স্থানে হাত রেখে পড়া উত্তম।

৩. সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস

এই তিনটি সুরা (সুরা ইখলাস: ১১২, সুরা ফালাক: ১১৩, সুরা নাস: ১১৪) অসুস্থতা থেকে সুস্থতা ও সুরক্ষার জন্য পড়া হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) অসুস্থ হলে এই তিনটি সুরা পড়তেন এবং শরীরে ফুঁ দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ৫,০১৭)

তিনটি সুরা তিনবার করে পড়া।

পড়ার পর হাতে ফুঁ দিয়ে রোগীর শরীরে মুছে দেওয়া।

৪. সাধারণ দোয়া

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নিজের ভাষায়ও দোয়া করা যায়। উদাহরণ: ‘হে আল্লাহ! আমার/তার রোগ দূর করো, সুস্থতা দান করো, তুমি সব ক্ষমতার মালিক।’ নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ইবাদতের মূল।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭১)

নিজের ভাষায় দোয়া করার সময় আন্তরিকতা ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা জরুরি।

আরও পড়ুনসন্তানকে বদ দোয়া করবেন না২১ এপ্রিল ২০২৫অসুস্থ ব্যক্তির জন্য আমল

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, তার জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন: তুমি পবিত্র হও, তোমার পথ পবিত্র হোক এবং তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৬৮)

রোগীকে দেখতে গিয়ে তার জন্য দোয়া করা এবং মনোবল বাড়ানো সুন্নাহ। রোগীকে ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করতে উৎসাহিত করা উচিত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে মুমিন ধৈর্যের সঙ্গে অসুস্থতা সহ্য করে, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৬৫২)

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ রোগী দুর্বল অবস্থায় থাকে এবং তার দোয়া আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পায়।

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করার ফজিলত অপরিসীম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করো, ফেরেশতারা বলে, ‘আমিন, তোমার জন্যও তা–ই হোক।’’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭৩২)

এছাড়া, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ রোগী দুর্বল অবস্থায় থাকে এবং তার দোয়া আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পায়।

দোয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা গ্রহণ করা, কারণ নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি রোগের জন্য চিকিৎসা রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৬৭৮)

দোয়া করার সময় শিরক বা অপ্রমাণিত পদ্ধতি এড়ানো দরকার। শুধু কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া ব্যবহার করব আমরা।

আরও পড়ুনদোয়া কীভাবে করতে হয়২০ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে নিয়ে আসেন না কেন: দুদক চেয়ারম্যান
  • দাম্পত্য–জীবনে মতভেদ হলে ইসলামের নির্দেশনা
  • এনসিসি ব্যাংকের পরিচালকের শেয়ার গ্রহণের ঘোষণা
  • জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বদলে যেতে পারে শিক্ষার্থীর জীবন
  • পুরো আসনের ফল বাতিল করতে পারবে ইসি, ফিরছে ‘না’ ভোট 
  • লালমনিরহাটে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
  • মৌচাকে হাসপাতালের পার্কিংয়ে প্রাইভেটকারে ২ মরদেহ 
  • তুরস্কে ভূমিকম্পে একজন নিহত, ধসে পড়েছে ১৬টি ভবন
  • তুরস্কে শক্তিশালী ভূমিকম্পে একজনের মৃত্যু, আহত ২৯
  • অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া কীভাবে করব