‘ভালো মা’-এর সামাজিক নির্মাণ ও বর্তমান বাস্তবতা
Published: 11th, May 2025 GMT
ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি নারীর পূর্ণতা তাঁর মাতৃত্বে। অর্থাৎ, সন্তান জন্ম দিতে না পারলে তাঁর নারীসত্তা অপূর্ণ। সম্ভবত, সভ্যতা কিংবা ভদ্রতার খাতিরে ‘অপূর্ণ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় মা হতে অপারগ নারীকে যে করুণ এবং কখনো কখনো নিষ্ঠুর জীবনচিত্র দেখতে হয়, তা কখনোই ‘অপূর্ণতার’ বেলায় হওয়ার কথা নয়। ব্যাপারটা বোঝা যাবে পুরুষকে তাঁর বাবা হওয়ার ক্ষমতা বা সৌভাগ্য দিয়ে পূর্ণতার মাপকাঠিতে কতটা মাপা হয় সেই চিত্রটি দেখলেই। এখনো আমাদের দেশে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান না হওয়ার দায় ও ব্যর্থতা চাপানো হয় নারীর ওপর। আর যারা সন্তান জন্ম দিতে পারেন, সেখানেই তাদের সাফল্যের চূড়ান্ত নয়। বরং সন্তান জন্ম নেওয়ার পর প্রতিটি নারী এক অনিবার্য লক্ষ্য অর্জনের মাঠে বিরামহীন প্রতিযোগিতায় নিক্ষেপিত হন। সেই প্রতিয়োগিতা ‘ভালো মা’ হওয়ার।
সমাজ পরিবর্তনের এই চরম সন্ধিক্ষণে আমাদের পূর্বের নির্মিত ভালো মায়ের ধারণা এবং বর্তমান অধিকার সচেতন কর্মজীবী নারীদের জীবন বাস্তবতা এক সাংঘর্ষিক জায়গায় উপনীত হয়েছে। ‘মা’ শব্দটি কেবল মাতৃত্ব প্রকাশ করে না। ভাষার রাজনীতিতে এটি এক ত্যাগী মূর্তি প্রকাশ করে– যিনি সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সব কষ্ট ভুলে যাবেন, সন্তানের জন্য ক্যারিয়ারের তোয়াক্কা করবেন না, নিজের কল্যাণ বা সুখ চিন্তা করা এখানে স্বার্থপরতার সামিল। এই বাস্তবতায়, বাইরের দুনিয়ায় কাজ করতে উদ্যমী ও যোগ্য নারীরা যখন নিজে মা হন তখন তার বাস্তবতা হয়ে যায় পুরো উল্টো। ছয়মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পরই ছোট্ট বাচ্চাকে রেখে তার হয়তো ছুটতে হয় অফিসে। বাসায় ফিরেও তিনি হয়তো ভাবছেন, সম্পূর্ণ এনার্জি নিয়ে বাচ্চাকে সময় দিতে পারছেন না।
এই ‘ভালো মা’ হওয়ার বিরামহীন চাপ নারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করে। অনেক মা মনে করেন, তারা যদি সন্তানের সঙ্গে অধিক সময় না কাটান, তবে তারা ‘ভালো মা’ হতে পারছেন না। এই মানসিকতা তাদের মধ্যে অপর্যাপ্ততা ও অপরাধবোধের অনুভূতি সৃষ্টি করে; যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ফেলে নেতিবাচক প্রভাব।
পাশাপাশি ‘মমি গিল্ট’ বা ভালো মা হওয়ার অপর্যাপ্ততার অনুভূতি কর্মজীবী মায়েদের মধ্যে এক সাধারণ সমস্যা। তারা মনে করেন, কর্মজীবন ও পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারলে তারা ‘ভালো মা’ হতে পারছেন না। এই অনুভূতি তাদের পেশাগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অগ্রগতি কমিয়ে দেয়। ‘ম্যাটার্নাল ওয়াল’ বা ‘মাদারহুড পেনাল্টি’র মতো কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্বজনিত বৈষম্য খুব সাধারণ ঘটনা। এই পরিস্থিতি করপোরেট থেকে শুরু করে শ্রমজীবী নারী পর্যন্ত বিস্তৃত।
আমাদের সমাজ পুরুষের কর্মক্ষেত্রে সফলতাকে সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, একজন মায়ের বেলায় সেটি বিবেচিত হয় না। মাতৃত্বকে একটি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ধারণা হিসেবে দাঁড় করতে না পারলে ‘মা’ হওয়া ধীরে ধীরে এই পৃথিবীর নারীদের কাছে ব্যক্তি অস্তিত্বের জন্য হুমকির নাম হয়ে দাঁড়াবে; যা ইতোমধ্যে প্রত্যক্ষ হওয়া শুরু হয়েছে। তাই শুধু নারীর কথা ভেবে নয়; বরং সামাজিক ভারসাম্যের কথা ভেবেই এই ‘ভালো মা’ ডিসকোর্সে পরিবর্তন আনা জরুরি।
এখন এই উপলব্ধির সময় এসেছে– ‘ভালো মা’ হওয়ার কোনো একক বা সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই। একজন মা তাঁর মতো করেই ভালো মা হতে পারেন, কর্মজীবী হলেও, না হলেও। একজন কর্মজীবি মায়ের ‘ভালো মা’ হবার মানদণ্ড গৃহিনী মায়ের সঙ্গে তুল্য না হোক। তারা উভয়েই তাদের মতো করে ‘ভালো মা’ হয় ঊঠুন। একইসঙ্গে সন্তান লালন-পালনে বাবার ভূমিকা জোরালোভাবে তুলে ধরা উচিত, যাতে সন্তানের ভালো ভবিষ্যত গড়ার পুরো বোঝা মায়ের উপর না পড়ে। শুধু মাতৃত্বকালীন ছুটি নয়, পিতাদেরও সন্তান জন্মের পর ছুটি দেওয়া দরকার, যাতে দায়িত্ব ভাগাভাগি হয়।
কর্মক্ষেত্রগুলোতে ‘ডে কেয়ার’ বা ‘চাইল্ড কেয়ার’ রাখার ব্যবস্থা শহরের একক পরিবারগুলোর জন্য স্বস্তিকর হতে পারে। কর্মজীবী মায়েদের জন্য সহমনা নারীদের নিয়ে সাপোর্ট গ্রুপ বা পরামর্শ কেন্দ্র থাকতে পারে, যাতে মানসিক চাপ কমানো যায়। পারিবারিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
মাতৃত্ব হোক অপার ভালোবাসা ও ভয়হীন। পৃথিবীর সকল মা’কে জানাই ‘মা দিবস’-এর শুভেচ্ছা!
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সম জ ম দ বস ব স তবত র জন য আম দ র হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
‘সীমান্তপথে ভারত পুশ-ইন করছে, কোথায় পাওয়ারফুল’ উপদেষ্টা খোদা বখস?’
বাংলাদেশের সীমান্তপথে ভারতীয় নাগরিকদের পুশ-ইন চলছে অথচ সরকার এ বিষয়ে একটি কথাও বলছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন সরকারের ‘পাওয়ারফুল’ উপদেষ্টা খোদা বখস কোথায় আছেন?
আজ রোববার দুপুরে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরামের আয়োজনে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘শুনেছি একজন খুব শক্তিশালী উপদেষ্টা রয়েছেন- খোদা বখস। তিনি নাকি স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সব কিছু দেখেন এবং খুবই ক্ষমতাবান। আবার শোনা যায়, তিনি নাকি বিএনপিকে খুব একটা পছন্দ করেন না। নিজের মতো করে সব গুছিয়ে রাখেন। তাহলে এত ক্ষমতাবান উপদেষ্টা থাকার পরও আজ সীমান্তে ভারতীয় নাগরিকদের পুশ-ইনের মতো ঘটনা ঘটছে কেন? সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার—এসব সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে লোক ঢোকানো হচ্ছে, সরকার কিছু বলছে না। কোথায় খোদা বখস? কোথায় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়?’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘কোথায় সরকার? তারা তো পুশ-ইন বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এগুলো তো বিরাট অন্যায়। কোথা থেকে এই রাষ্ট্রীয় অপরাধগুলো করা হচ্ছে? । বাংলাদেশের জনগণকে কি এত দুর্বল জাতি ভাবছেন? মুক্তিযুদ্ধের দেশ, যে জাতি ৩০ লাখ শহীদ আর দেড় হাজার শিশু-কিশোরের রক্ত দিয়েছে, সে জাতিকে উপেক্ষা করে সীমান্ত দিয়ে লোক ঢুকানো হবে আর সরকার কিছুই বলবে না? তাহলে তো শেখ হাসিনা যেমন করেছেন আপনারাও তাই করছেন। আমাদের সীমান্তে লোক হত্যা করলে শেখ হাসিনা একটা প্রতিবাদও করতেন না, বর্তমান সরকারও আজ নিরুত্তর।’
রিজভীর অভিযোগ, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তারা ব্যর্থ। “সরকার সংস্কারের কথা বলেছিল, জনগণ তা মেনে নিয়েছিল। বলা হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু এখনও সে বিষয়ে সরকার নীরব। কেন এই নিশ্চুপতা?”—জানতে চান তিনি।
রিজভী অভিযোগ করেন, ‘একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি, যিনি খুনের মামলার আসামি, তিনি দেশে ছিলেন—এনএসআই ও ডিজিএফআই ক্লিয়ারেন্স ছাড়া তিনি বিদেশে গেলেন কীভাবে? তার তো লাল পাসপোর্ট রয়েছে। সেটি বাতিল করা হয়নি কেন?’
তিনি ওই রাষ্ট্রপতিকে ফ্যাসিবাদের প্রতিনিধি আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তিনি শেখ হাসিনার মানসিকতার প্রতিচ্ছবি ছিলেন। তাহলে এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে দেশ ছাড়লেন? সরকারের জানা ছিল না?’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত, বৌদ্ধ ফোরামের নেতা সুশীল বড়ুয়া, পার্থ প্রতিম বড়ুয়া অপু প্রমুখ।