ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ব্যক্তিগত কথোপকথনে কান পাতার অভিযোগে অ্যাপলের ভার্চ্যুয়াল সহকারী সিরি নিয়ে করা এক মামলার নিষ্পত্তিতে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে অ্যাপল। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কেউ যদি সিরি–সমর্থিত যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন এবং ওই সময় গোপন বা ব্যক্তিগত কথোপকথনের সময় সিরি অনিচ্ছাকৃতভাবে সক্রিয় হয়ে থাকলে, তিনি ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই অভিযোগ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালে একটি যৌথ মামলা (ক্লাস অ্যাকশন) করা হয়। মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। তাতে সম্মত হয়ে অ্যাপল সাড়ে ৯ কোটি ডলার পরিশোধে রাজি হয়েছে। এ অর্থের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।

আবেদনের জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২ জুলাই। একজন ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ পাঁচটি যন্ত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রতি যন্ত্রের বিপরীতে সর্বোচ্চ ২০ ডলার করে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে; অর্থাৎ একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১০০ ডলার পর্যন্ত পেতে পারেন। তবে আবেদন করলেই ক্ষতিপূরণ মিলবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বৈধ আবেদনসংখ্যা ও যাচাই-বাছাইয়ের ওপর নির্ভর করেই চূড়ান্ত অর্থ প্রদান করা হবে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, সিরি অনিচ্ছাকৃতভাবে সক্রিয় হয়ে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত কথোপকথন রেকর্ড করত। সেই রেকর্ড অ্যাপলের নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় পক্ষের ঠিকাদারদের কাছে মান পরীক্ষার উদ্দেশ্যে পাঠানো হতো।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে অ্যাপল। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, অ্যাপল কখনোই সিরি ব্যবহারকারীদের তথ্য বিপণনের জন্য ব্যবহার করেনি, কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছে তা বিক্রি করা হয়নি, এমনকি বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যেও কখনো সরবরাহ করা হয়নি।

সূত্র: ম্যাশেবল ডটকম

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র জন য অ য পল

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালো মা’-এর সামাজিক নির্মাণ ও বর্তমান বাস্তবতা

ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি নারীর পূর্ণতা তাঁর মাতৃত্বে। অর্থাৎ, সন্তান জন্ম দিতে না পারলে তাঁর নারীসত্তা অপূর্ণ। সম্ভবত, সভ্যতা কিংবা ভদ্রতার খাতিরে ‘অপূর্ণ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় মা হতে অপারগ নারীকে যে করুণ এবং কখনো কখনো নিষ্ঠুর জীবনচিত্র দেখতে হয়, তা কখনোই ‘অপূর্ণতার’ বেলায় হওয়ার কথা নয়। ব্যাপারটা বোঝা যাবে পুরুষকে তাঁর বাবা হওয়ার ক্ষমতা বা সৌভাগ্য দিয়ে পূর্ণতার মাপকাঠিতে কতটা মাপা হয় সেই চিত্রটি দেখলেই। এখনো আমাদের দেশে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান না হওয়ার দায় ও ব্যর্থতা চাপানো হয় নারীর ওপর। আর যারা সন্তান জন্ম  দিতে পারেন, সেখানেই তাদের সাফল্যের চূড়ান্ত নয়। বরং সন্তান জন্ম নেওয়ার পর প্রতিটি নারী এক অনিবার্য লক্ষ্য অর্জনের মাঠে বিরামহীন প্রতিযোগিতায় নিক্ষেপিত হন। সেই প্রতিয়োগিতা ‘ভালো মা’ হওয়ার।

সমাজ পরিবর্তনের এই চরম সন্ধিক্ষণে আমাদের পূর্বের নির্মিত ভালো মায়ের ধারণা এবং বর্তমান অধিকার সচেতন কর্মজীবী নারীদের জীবন বাস্তবতা এক সাংঘর্ষিক জায়গায় উপনীত হয়েছে। ‘মা’ শব্দটি কেবল মাতৃত্ব প্রকাশ করে না। ভাষার রাজনীতিতে এটি এক ত্যাগী মূর্তি প্রকাশ করে– যিনি সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সব কষ্ট ভুলে যাবেন, সন্তানের জন্য ক্যারিয়ারের তোয়াক্কা করবেন না, নিজের কল্যাণ বা সুখ চিন্তা করা এখানে স্বার্থপরতার সামিল। এই বাস্তবতায়, বাইরের দুনিয়ায় কাজ করতে উদ্যমী ও যোগ্য নারীরা যখন নিজে মা হন তখন তার বাস্তবতা হয়ে যায় পুরো উল্টো। ছয়মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পরই ছোট্ট বাচ্চাকে রেখে তার হয়তো ছুটতে হয় অফিসে। বাসায় ফিরেও তিনি হয়তো ভাবছেন, সম্পূর্ণ এনার্জি নিয়ে বাচ্চাকে সময় দিতে পারছেন না।

এই ‘ভালো মা’ হওয়ার বিরামহীন চাপ নারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করে। অনেক মা মনে করেন, তারা যদি সন্তানের সঙ্গে অধিক সময় না কাটান, তবে তারা ‘ভালো মা’ হতে পারছেন না। এই মানসিকতা তাদের মধ্যে অপর্যাপ্ততা ও অপরাধবোধের অনুভূতি সৃষ্টি করে; যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ফেলে নেতিবাচক প্রভাব।

পাশাপাশি ‘মমি গিল্ট’ বা ভালো মা হওয়ার অপর্যাপ্ততার অনুভূতি কর্মজীবী মায়েদের মধ্যে এক সাধারণ সমস্যা। তারা মনে করেন, কর্মজীবন ও পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারলে তারা ‘ভালো মা’ হতে পারছেন না। এই অনুভূতি তাদের পেশাগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অগ্রগতি কমিয়ে দেয়। ‘ম্যাটার্নাল ওয়াল’ বা ‘মাদারহুড পেনাল্টি’র মতো কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্বজনিত বৈষম্য খুব সাধারণ ঘটনা। এই পরিস্থিতি করপোরেট থেকে শুরু করে শ্রমজীবী নারী পর্যন্ত বিস্তৃত।

আমাদের সমাজ পুরুষের কর্মক্ষেত্রে সফলতাকে সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, একজন মায়ের বেলায় সেটি বিবেচিত হয় না। মাতৃত্বকে একটি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ধারণা হিসেবে দাঁড় করতে না পারলে ‘মা’ হওয়া ধীরে ধীরে এই পৃথিবীর নারীদের কাছে ব্যক্তি অস্তিত্বের জন্য হুমকির নাম হয়ে দাঁড়াবে; যা ইতোমধ্যে প্রত্যক্ষ হওয়া শুরু হয়েছে। তাই শুধু নারীর কথা ভেবে নয়; বরং সামাজিক ভারসাম‍্যের কথা ভেবেই এই ‘ভালো মা’ ডিসকোর্সে পরিবর্তন আনা জরুরি।

এখন এই উপলব্ধির সময় এসেছে– ‘ভালো মা’ হওয়ার কোনো একক বা সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই। একজন মা তাঁর মতো করেই ভালো মা হতে পারেন, কর্মজীবী হলেও, না হলেও। একজন কর্মজীবি মায়ের ‘ভালো মা’ হবার মানদণ্ড গৃহিনী মায়ের সঙ্গে তুল্য না হোক। তারা উভয়েই তাদের মতো করে ‘ভালো মা’ হয় ঊঠুন। একইসঙ্গে সন্তান লালন-পালনে বাবার ভূমিকা জোরালোভাবে তুলে ধরা উচিত, যাতে সন্তানের ভালো ভবিষ্যত গড়ার পুরো বোঝা মায়ের উপর না পড়ে। শুধু মাতৃত্বকালীন ছুটি নয়, পিতাদেরও সন্তান জন্মের পর ছুটি দেওয়া দরকার, যাতে দায়িত্ব ভাগাভাগি হয়।

কর্মক্ষেত্রগুলোতে ‘ডে কেয়ার’ বা ‘চাইল্ড কেয়ার’ রাখার ব‍্যবস্থা শহরের একক পরিবারগুলোর জন‍্য স্বস্তিকর হতে পারে। কর্মজীবী মায়েদের জন্য সহমনা নারীদের নিয়ে সাপোর্ট গ্রুপ বা পরামর্শ কেন্দ্র থাকতে পারে, যাতে মানসিক চাপ কমানো যায়। পারিবারিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।

মাতৃত্ব হোক অপার ভালোবাসা ও ভয়হীন। পৃথিবীর সকল মা’কে জানাই ‘মা দিবস’-এর শুভেচ্ছা!

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পার্শ্ববর্তী দেশ সীমান্ত দিয়ে ইচ্ছামত লোক ঢোকাচ্ছে: রিজভী
  • রত্নগর্ভা মায়েরা পেলেন সম্মাননা
  • রত্নগর্ভা সম্মাননা পেলেন ৩৫ মা
  • মা দিবসে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের বিশেষ প্রচারণা
  • সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কীভাবে বিদেশে গেলেন, তদন্তে তিন উপদেষ্টার সমন্বয়ে কমিটি
  • মা মানে আত্মত্যাগ
  • ‘সীমান্তপথে ভারত পুশ-ইন করছে, কোথায় পাওয়ারফুল’ উপদেষ্টা খোদা বখস?’
  • সীমান্তপথে ভারত পুশ-ইন করছে, কোথায় ‘পাওয়ারফুল’ উপদেষ্টা খোদা বখস? 
  • ‘ভালো মা’-এর সামাজিক নির্মাণ ও বর্তমান বাস্তবতা