কর কমানোর পরিকল্পনা করুন, কীভাবে ও কত কর কমবে
Published: 12th, May 2025 GMT
চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আর মাত্র দেড় মাসের মতো আছে। গত বছরের ১ জুলাই থেকে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে করদাতার আয়-ব্যয়ের হিসাবের ভিত্তিতেই করারোপ করা হবে। কীভাবে করের পরিমাণ কমাবেন, এখনই পরিকল্পনা করতে হবে। সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে আপনি কর কমাতে পারেন। এ জন্য অবশ্য আপনাকে সংসার খরচ বাঁচিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।
তাই এখনো সময় আছে, বিনিয়োগের পরিকল্পনা করুন। করছাড় নিন। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে এই করছাড় আপনার কাজে লাগবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) করদাতাদের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। এতে রাষ্ট্রের সঞ্চয় যেমন হয়, তেমনি করদাতার আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। আবার করছাড় পেলে খরচও কমে করদাতারা। করদাতারা বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত নিয়ে করছাড় পেতে পারেন। বছর শেষে আপনার করের টাকার পরিমাণ বেশ কমে যাবে।
খাতগুলো কী কী
বিনিয়োগ করে করছাড় নেওয়ার জন্য নয়টি খাত আছে। এনবিআর এসব খাত ঠিক করে দিয়েছে। তার একটি হলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ, যা কমবেশি সব করদাতা জানেন। এটি কর কমানোর বেশ জনপ্রিয় খাত। অন্য খাতগুলো হলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা; জীবনবিমার প্রিমিয়াম; সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগ কর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমার তহবিলে চাঁদা; সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ডে চাঁদা; পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত যেকোনো সিকিউরিটিজ কেনা। আর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করলেও কর রেয়াত সুবিধা পাওয়া যাবে। ডিপিএসের ওপর বার্ষিক সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ওপর এই করছাড় দেওয়া আছে।
হিসাব করবেন কীভাবে
এ বছরের আয়কর নির্দেশিকায় অন্য বছরের চেয়ে কিছুটা ভিন্নভাবে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের একটি হিসাব পদ্ধতি দিয়েছে।
এবার দেখা যাক, কীভাবে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের এই হিসাব করবেন। এক, একজন করদাতার মোট আয়ের ৩ শতাংশ। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের সুদ আয় চূড়ান্ত করদায় বিবেচিত হওয়ায় করদাতার মোট আয় থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদ আয় বাদ দিতে হবে। দুই, মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, এখানে সরকার নির্ধারিত খাতের অনুদানের পরিমাণও যোগ করা যেতে পারে। তিন, সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। এ তিনটি হিসাবের মধ্যে যার পরিমাণ কম হবে, তা–ই বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত হিসেবে পাওয়া যাবে।
উদাহরণ
একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক, সঞ্চয়পত্রের সুদ বাদে (৫০ হাজার টাকা) মোসাম্মৎ কামরুন নাহার নামের করদাতার মোট আয় ৮ লাখ ৩৮ হাজার ২০০ টাকা। নারী করদাতা হিসেবে তিনি চার লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত সুবিধা পাবেন। তিনি যদি কোনো বিনিয়োগ না করতেন তাহলে তাঁর করের পরিমাণ দাঁড়াত ৪৩ হাজার ৮২০ টাকা। এখানে সঞ্চয়পত্রের সুদ হিসেবে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা আয়ের উৎসে কর ১০ শতাংশ বা ৫ হাজার টাকা যোগ করা হয়েছে।
এবার বিনিয়োগ করলে মোসাম্মৎ কামরুন নাহার কী পাবেন, তা দেখা যাক। ধরা যাক, তিনি বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র কেনা, ভবিষ্য তহবিলে চাঁদা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসহ সব মিলিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
এবার হিসাব করা যাক, এক, কামরুন নাহারের মোট আয়ের ৩ শতাংশ হলো ২৫ হাজার ১৪৬ টাকা। দুই, কামরুন নাহারের মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগের পরিমাণ ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এর ১৫ শতাংশ হলো ৩২ হাজার ৪০০ টাকা। তিন, সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। এ তিনটি হিসাবের মধ্যে সবচেয়ে কম হলো ২৫ হাজার ১৪৬ টাকা। এটিই বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের পরিমাণ।
বিনিয়োগ না করলে কামরুন নাহারের করের পরিমাণ ৪৩ হাজার ৮২০ টাকা। বিনিয়োগ করায় এখন ২৫ হাজার ১৪৬ টাকা বাদ দেবেন। রেয়াতের পর কামরুন নাহারের করের পরিমাণ হবে ১৮ হাজার ৬৭৪ টাকা। তিনি যেহেতু সঞ্চয়পত্রের আয়ের ওপর উৎসে কর ৫ হাজার টাকা দিয়ে ফেলেছেন, তাই তাঁর ১৩ হাজার ৬৭৪ টাকা দিলেই চলবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কর র ম ট আয় করদ ত র কর র প র কর র তহব ল করছ ড়
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যবিত্তের ভরসা সঞ্চয়পত্র: কোনটিতে কত মুনাফা
বিনিয়োগের জন্য মধ্যবিত্তের অন্যতম পছন্দ সঞ্চয়পত্র। এ বিনিয়োগ নিরাপদ ও মুনাফার হারও বেশি। ব্যাংকে টাকার রাখার চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। এমন চিন্তা থেকে অনেকেই সঞ্চয়পত্র কেনেন। অনেকে সংসার খরচের একটা অংশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে জোগান দেন। ফলে সঞ্চয়পত্র এখন সামাজিক সুরক্ষার অংশও হয়ে গেছে।
বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চার ধরনের সঞ্চয় আছে। এগুলো হলো পরিবার সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। এসব সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারও কাছাকাছি। তবে সঞ্চয়পত্রভেদে ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। আছে শর্ত। তাই মুনাফার হারের পাশাপাশি অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে সঞ্চয়পত্র কিনতে হবে। ভাবতে হবে, কোনটি আপনার জন্য বেশি লাভজনক।
মুনাফা কত
এবার দেখা যাক, কোন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কত। এখানে বলা প্রয়োজন, গত জুলাই মাস থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়েছে সরকার।
দেশে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের যত ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। এ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছরের মেয়াদপূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ করা হয়েছে।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পঞ্চম বছর শেষে, অর্থাৎ মেয়াদপূর্তিতে মুনাফা ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার সবচেয়ে বেশি।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এ ছাড়া তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙলে মুনাফা কমে যায়। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র না ভাঙাই ভালো।
কে কত বিনিয়োগ করতে পারবেন
সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক নারীরাই কিনতে পারবেন। তবে যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ এবং ৬৫ ও তদূর্ধ্ব বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিকের পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ আছে।
একক নামে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। কিনতে পারবেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ও মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী বা স্ত্রী বা সন্তান।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কেনায় সীমা হলো ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৩০ লাখ টাকা অথবা যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভবিষ্য তহবিলে মোট স্থিতির ৫০ শতাংশ। তবে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকার কেনা যাবে।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কেনায় সীমা হলো ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৩০ লাখ টাকা অথবা যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা হলো ভবিষ্য তহবিলে মোট স্থিতির ৫০ শতাংশ। তবে তা হবে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে এই সীমা ফার্মের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা এবং অটিস্টিক সহায়ক প্রতিষ্ঠান, দুস্থ ও অনাথ শিশুদের নিবন্ধিত আশ্রয় প্রতিষ্ঠান (অনাথ আশ্রম, শিশু পরিবার, এতিমখানা ইত্যাদি) এবং প্রবীণদের জন্য নিবন্ধিত আশ্রয়কেন্দ্রের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা।
কোথায় পাওয়া যায়
জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা, বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ও ডাকঘর থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো যায়।