চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আর মাত্র দেড় মাসের মতো আছে। গত বছরের ১ জুলাই থেকে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে করদাতার আয়-ব্যয়ের হিসাবের ভিত্তিতেই করারোপ করা হবে। কীভাবে করের পরিমাণ কমাবেন, এখনই পরিকল্পনা করতে হবে। সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে আপনি কর কমাতে পারেন। এ জন্য অবশ্য আপনাকে সংসার খরচ বাঁচিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।

তাই এখনো সময় আছে, বিনিয়োগের পরিকল্পনা করুন। করছাড় নিন। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে এই করছাড় আপনার কাজে লাগবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) করদাতাদের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। এতে রাষ্ট্রের সঞ্চয় যেমন হয়, তেমনি করদাতার আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। আবার করছাড় পেলে খরচও কমে করদাতারা। করদাতারা বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত নিয়ে করছাড় পেতে পারেন। বছর শেষে আপনার করের টাকার পরিমাণ বেশ কমে যাবে।

খাতগুলো কী কী

বিনিয়োগ করে করছাড় নেওয়ার জন্য নয়টি খাত আছে। এনবিআর এসব খাত ঠিক করে দিয়েছে। তার একটি হলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ, যা কমবেশি সব করদাতা জানেন। এটি কর কমানোর বেশ জনপ্রিয় খাত। অন্য খাতগুলো হলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা; জীবনবিমার প্রিমিয়াম; সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগ কর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমার তহবিলে চাঁদা; সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ডে চাঁদা; পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত যেকোনো সিকিউরিটিজ কেনা। আর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করলেও কর রেয়াত সুবিধা পাওয়া যাবে। ডিপিএসের ওপর বার্ষিক সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ওপর এই করছাড় দেওয়া আছে।

হিসাব করবেন কীভাবে

এ বছরের আয়কর নির্দেশিকায় অন্য বছরের চেয়ে কিছুটা ভিন্নভাবে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের একটি হিসাব পদ্ধতি দিয়েছে।

এবার দেখা যাক, কীভাবে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের এই হিসাব করবেন। এক, একজন করদাতার মোট আয়ের ৩ শতাংশ। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের সুদ আয় চূড়ান্ত করদায় বিবেচিত হওয়ায় করদাতার মোট আয় থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদ আয় বাদ দিতে হবে। দুই, মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, এখানে সরকার নির্ধারিত খাতের অনুদানের পরিমাণও যোগ করা যেতে পারে। তিন, সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। এ তিনটি হিসাবের মধ্যে যার পরিমাণ কম হবে, তা–ই বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত হিসেবে পাওয়া যাবে।

উদাহরণ

একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক, সঞ্চয়পত্রের সুদ বাদে (৫০ হাজার টাকা) মোসাম্মৎ কামরুন নাহার নামের করদাতার মোট আয় ৮ লাখ ৩৮ হাজার ২০০ টাকা। নারী করদাতা হিসেবে তিনি চার লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত সুবিধা পাবেন। তিনি যদি কোনো বিনিয়োগ না করতেন তাহলে তাঁর করের পরিমাণ দাঁড়াত ৪৩ হাজার ৮২০ টাকা। এখানে সঞ্চয়পত্রের সুদ হিসেবে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা আয়ের উৎসে কর ১০ শতাংশ বা ৫ হাজার টাকা যোগ করা হয়েছে।

এবার বিনিয়োগ করলে মোসাম্মৎ কামরুন নাহার কী পাবেন, তা দেখা যাক। ধরা যাক, তিনি বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র কেনা, ভবিষ্য তহবিলে চাঁদা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসহ সব মিলিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

এবার হিসাব করা যাক, এক, কামরুন নাহারের মোট আয়ের ৩ শতাংশ হলো ২৫ হাজার ১৪৬ টাকা। দুই, কামরুন নাহারের মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগের পরিমাণ ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এর ১৫ শতাংশ হলো ৩২ হাজার ৪০০ টাকা। তিন, সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। এ তিনটি হিসাবের মধ্যে সবচেয়ে কম হলো ২৫ হাজার ১৪৬ টাকা। এটিই বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের পরিমাণ।

বিনিয়োগ না করলে কামরুন নাহারের করের পরিমাণ ৪৩ হাজার ৮২০ টাকা। বিনিয়োগ করায় এখন ২৫ হাজার ১৪৬ টাকা বাদ দেবেন। রেয়াতের পর কামরুন নাহারের করের পরিমাণ হবে ১৮ হাজার ৬৭৪ টাকা। তিনি যেহেতু সঞ্চয়পত্রের আয়ের ওপর উৎসে কর ৫ হাজার টাকা দিয়ে ফেলেছেন, তাই তাঁর ১৩ হাজার ৬৭৪ টাকা দিলেই চলবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কর র ম ট আয় করদ ত র কর র প র কর র তহব ল করছ ড়

এছাড়াও পড়ুন:

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া কীভাবে করব

ইসলামে অসুস্থতা একটি পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়, যা মুমিনের ধৈর্য ও আল্লাহর উপর ভরসাকে শক্তিশালী করে। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করা একটি ফজিলতপূর্ণ আমল, যা রোগীর জন্য শান্তি ও সুস্থতা নিয়ে আসে এবং দোয়াকারীর জন্য আল্লাহর রহমত অর্জনের মাধ্যম।

মহানবী (সা.) অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ দোয়া ও আমল শিখিয়েছেন, যা হাদিসে বর্ণিত আছে।

রোগীকে দেখতে গিয়ে তার জন্য দোয়া করা এবং মনোবল বাড়ানো সুন্নাহ। রোগীকে ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করতে উৎসাহিত করা উচিত।অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া

ইসলামে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করার ব্যাপারে নবীজি (সা.) কয়েকটি নির্দিষ্ট দোয়া শিখিয়েছেন। এই দোয়াগুলো রোগী নিজে পড়তে পারেন বা অন্য কেউ রোগীর জন্য পড়তে পারেন। নিচে কয়েকটি প্রধান দোয়া উল্লেখ করা হলো:

১. নবীজি (সা.)-এর শেখানো দোয়া

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) অসুস্থ ব্যক্তির জন্য এই দোয়া পড়তেন:

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বান নাস, আযহিবিল বাস, ইশফি আনতাশ শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিফাউক, শিফাআন লা ইউগাদিরু সাকামা।

অর্থ: হে আল্লাহ! মানুষের প্রভু, রোগ দূর করো, সুস্থতা দাও, তুমিই সুস্থতা দানকারী। তোমার সুস্থতা ছাড়া কোনো সুস্থতা নেই, এমন সুস্থতা দাও যা কোনো রোগ রাখে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৪৩)

পড়ার নিয়ম:

রোগীর ডান হাত দিয়ে তার কপাল বা শরীরের ব্যথার স্থানে হাত রেখে এই দোয়া পড়া।

তিনবার বা সাতবার পড়া উত্তম।

রোগী নিজে পড়তে পারেন বা অন্য কেউ রোগীর জন্য পড়তে পারেন।

আরও পড়ুননববিবাহিতদের জন্য তিনটি দোয়া২১ জুলাই ২০২৫

২. সুরা ফাতিহা পড়া

সুরা ফাতিহা রোগ নিরাময়ের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে আছে, সুরা ফাতিহা শিফা বা নিরাময়ের জন্য পড়া যায়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন সাহাবি সুরা ফাতিহা পড়ে একজন রোগীকে সুস্থ করে দিয়েছিলেন, এবং নবীজি (সা.) এটি অনুমোদন করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৬)

যখন তুমি কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করো, ফেরেশতারা বলে, ‘আমিন, তোমার জন্যও তা–ই হোক।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭৩২

পড়ার নিয়ম:

সুরা ফাতিহা সাতবার পড়ে রোগীর শরীরে ফুঁ দেওয়া।

রোগীর কপালে বা ব্যথার স্থানে হাত রেখে পড়া উত্তম।

৩. সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস

এই তিনটি সুরা (সুরা ইখলাস: ১১২, সুরা ফালাক: ১১৩, সুরা নাস: ১১৪) অসুস্থতা থেকে সুস্থতা ও সুরক্ষার জন্য পড়া হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) অসুস্থ হলে এই তিনটি সুরা পড়তেন এবং শরীরে ফুঁ দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ৫,০১৭)

তিনটি সুরা তিনবার করে পড়া।

পড়ার পর হাতে ফুঁ দিয়ে রোগীর শরীরে মুছে দেওয়া।

৪. সাধারণ দোয়া

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নিজের ভাষায়ও দোয়া করা যায়। উদাহরণ: ‘হে আল্লাহ! আমার/তার রোগ দূর করো, সুস্থতা দান করো, তুমি সব ক্ষমতার মালিক।’ নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ইবাদতের মূল।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭১)

নিজের ভাষায় দোয়া করার সময় আন্তরিকতা ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা জরুরি।

আরও পড়ুনসন্তানকে বদ দোয়া করবেন না২১ এপ্রিল ২০২৫অসুস্থ ব্যক্তির জন্য আমল

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, তার জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন: তুমি পবিত্র হও, তোমার পথ পবিত্র হোক এবং তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৬৮)

রোগীকে দেখতে গিয়ে তার জন্য দোয়া করা এবং মনোবল বাড়ানো সুন্নাহ। রোগীকে ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করতে উৎসাহিত করা উচিত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে মুমিন ধৈর্যের সঙ্গে অসুস্থতা সহ্য করে, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৬৫২)

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ রোগী দুর্বল অবস্থায় থাকে এবং তার দোয়া আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পায়।

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করার ফজিলত অপরিসীম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করো, ফেরেশতারা বলে, ‘আমিন, তোমার জন্যও তা–ই হোক।’’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭৩২)

এছাড়া, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ রোগী দুর্বল অবস্থায় থাকে এবং তার দোয়া আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পায়।

দোয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা গ্রহণ করা, কারণ নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি রোগের জন্য চিকিৎসা রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৬৭৮)

দোয়া করার সময় শিরক বা অপ্রমাণিত পদ্ধতি এড়ানো দরকার। শুধু কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া ব্যবহার করব আমরা।

আরও পড়ুনদোয়া কীভাবে করতে হয়২০ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ