ঈদুল ফিতরের বোনাস ও বকেয়া বেতনের দাবিতে বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
Published: 12th, May 2025 GMT
ময়মনসিংহের ভালুকায় বন্ধ থাকা একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের বোনাস এবং চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের চূড়ান্ত পাওনা পরিশোধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। আজ সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকার কাঁঠালী এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করেন রোর ফ্যাশন লিমিটেড নামক পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, ভালুকা পৌরসভার কাঁঠালী এলাকায় অবস্থিত রোর ফ্যাশন লিমিটেডের কারখানাটিতে শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী মিলে ১ হাজার ৩৫৭ জন কর্মরত ছিলেন। অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ঋণ নিয়ে কারখানাটি পরিচালিত হচ্ছিল। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কারখানাটি ব্যাংকঋণের লভ্যাংশ পরিশোধ করতে পারছিল না। দুই দফা লভ্যাংশের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংক কারখানাটিকে সহযোগিতা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এদিকে কারখানার শ্রমিকেরা গত বছরের নভেম্বর থেকে বকেয়া বেতনের জন্য আন্দোলন শুরু করেন।
একপর্যায়ে গত ৯ ডিসেম্বর থেকে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দফায় দফায় আন্দোলন ও বিজিএমইএ কার্যালয়ের সামনেও তিন দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকেরা। কিন্তু কোনো কার্যকর সমাধান পাওয়া যায়নি।
শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন কারখানা কর্তৃপক্ষকে চলতি মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ আজ সোমবার পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেয়। তবে আজ কোনো টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। এ অবস্থায় শ্রমিকেরা আজ দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বকেয়া থাকা বেতন, ঈদুল ফিতরের বোনাস এবং চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া শ্রমিকদের চূড়ান্ত পাওনার জন্য বিক্ষোভ করলে সেনাবাহিনী, ভালুকা মডেল থানা–পুলিশ, ভরাডোবা হাইওয়ে পুলিশ ও শিল্প পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
কারখানাটিতে মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের মালিকানা রয়েছে—এমনটি জানেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে কারখানাটির সঙ্গে শিখরের সম্পৃক্ততা না থাকলেও তাঁর এক আত্মীয়ের সুবাদে এখানে এক-দুবার দাওয়াতে এসেছিলেন বলে জানান কারখানাটির তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) বিভাগের প্রধান ফরহাদ আহমেদ। কারখানাটির মালিকের নাম মামুনুল ইসলাম উল্লেখ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ব্যাংকের লভ্যাংশের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ব্যাংক আমাদের সব সহায়তা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু শ্রমিক আন্দোলনের কারণে আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। আমরা কারখানাটি চালুর জন্য চেষ্টা করছি। কারখানাটির কিছু মেশিন বিক্রি করেও শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।’
ফরহাদ আহমেদ আরও বলেন, কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করলে আইন অনুযায়ী শ্রমিকেরা তিন মাসের বেতন প্রাপ্য হবেন। এ জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। কিন্তু তাঁরা কারখানাটি চালু করতে চান। কারখানাটি চালু করতে পারলে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কারখানাটি যেন আর না দাঁড়াতে পারে, তার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
শিল্প পুলিশ-৫–এর পুলিশ সুপার (এসপি) আল-মামুন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য আজ সময় বেঁধে দেওয়া হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ টাকা দিতে পারেনি। এখানে ২০০-২৫০ জন শ্রমিক থাকলেও কিছু দুষ্টু লোক শ্রমিকদের ভেতরে ঢুকে শ্রমিকদের রাস্তায় নিয়ে আসেন।
এসপি আল-মামুন আরও বলেন, কারখানাটির সমস্যা নিয়ে জেলা প্রশাসন সভা করে পাওনা পরিশোধ করে দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ে বকেয়া পরিশোধ করতে না পারলে কারখানাটি জিনিসপত্র বিক্রি করে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মালিকপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, তারা কারখানাটি চালু করতে চায়। ব্যাংকঋণ নিয়ে তারা শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করে দেবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর শ ধ করত বন ধ ক র জন য সময় ব
এছাড়াও পড়ুন:
ধাক্কা দিয়ে ফেলে শিক্ষার্থী হত্যা, গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, বাস ভাঙচুর
গাজীপুর মহানগরীর মাস্টারবাড়ি এলাকায় বাসচালকের সহকারীর ধাক্কায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন নিহত শিক্ষার্থীর সহপাঠী ও এলাকার লোকজন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা তাকওয়া পরিবহনের একটি মিনিবাস ভাঙচুর করেন। অবরোধে যান চলাচল বন্ধ হয়ে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে বিচারের আশ্বাস পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা মহাসড়ক ছেড়ে দিলেও যানজটের প্রভাব রয়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরের মাস্টারবাড়ি এলাকায় ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে বাসচালকের সহকারীর ধাক্কায় সড়কে পড়ে সিয়াম (১৯) নামের এক কলেজছাত্র নিহত হন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। সিয়াম গাজীপুর সদর উপজেলার বাউপাড়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি রোভার স্কাউট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদে চলাচলের জন্য অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুনধাক্কা দিয়ে সড়কে ফেলে দিলেন চালকের সহকারী, বাসচাপায় কলেজছাত্র নিহত২২ ঘণ্টা আগেগাজীপুর মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে যান চলাচল শুরু হয়েছে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।