বহুদিন ধরে চলা গুঞ্জনটাই অবশেষে সত্যি হলো। কার্লো আনচেলত্তিকে অবশেষে পেল ব্রাজিল। দেশটির ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) আজ নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আনচেলত্তিকে জাতীয় দলের কোচ পদে নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সিবিএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এখন থেকে ফুটবল ইতিহাসে সর্বকালের সেরা দলটির নেতৃত্ব দেবেন বিশ্বের সবচেয়ে সফল কোচ। কার্লো আনচেলত্তি, ঐতিহাসিক সব সাফল্যের সমার্থক। ব্রাজিল জাতীয় দলের নতুন কোচ হিসেবে আজ তাঁর নাম ঘোষণা করেছেন সিবিএফ সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ। ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে থাকবেন এবং আগামী মাসে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পেরু ও ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচে কোচের ভূমিকায় থাকবেন।’
আরও পড়ুনরিয়াল-আনচেলত্তি সমঝোতা, ব্রাজিলের কোচ হতে বাধা নেই তাঁর০৫ মে ২০২৫সিবিএফের পোস্টে রয়েছে সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজের কথাও, ‘ব্রাজিলের নেতৃত্ব দিতে কার্লো আনচেলত্তিকে নিয়ে আসা কৌশলগত পদক্ষেপের চেয়েও বেশি কিছু। এটা বিশ্বের প্রতি ঘোষণা যে আমরা শীর্ষস্থান ফিরে পেতে সংকল্পবদ্ধ। তিনি ইতিহাসের সেরা কোচ, এখন গ্রহের সেরা দলের দায়িত্ব নেবেন। আমরা একসঙ্গে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের গৌরবময় অধ্যায়গুলো রচনা করব।’
২০২৩ সাল থেকে আনচেলত্তির পিছু ছুটছিল ব্রাজিল। ইতালিয়ান এই কোচ তখন সিবিএফের প্রস্তাবে আগ্রহ দেখাননি। এ বছর মার্চে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আর্জেন্টিনার কাছে হারের পর ব্রাজিলের কোচ পদ থেকে ছাঁটাই হন দরিভাল জুনিয়র। তখন আবারও আলোচনায় উঠে আসেন আনচেলত্তি। সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, আবারও আনচেলত্তির পিছু ছুটতে শুরু করেছে ব্রাজিল। ইতিহাসে একমাত্র কোচ হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচবার চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী আনচেলত্তির নাগাল শেষ পর্যন্ত পেল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তবে সিবিএফ আনচেলত্তিকে জাতীয় দলের নতুন কোচ হিসেবে ঘোষণা করলেও তাঁর বর্তমান দল রিয়াল এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
রিয়াল কোচের দায়িত্বে থাকা আনচেলত্তি মৌসুম শেষে মাদ্রিদের ক্লাবটি ছাড়বেন। ২৫ মে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে রিয়াল। ২৬ মে থেকে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেবেন ৬৫ বছর বয়সী আনচেলত্তি। রিয়ালে দুই মেয়াদে ১৫টি শিরোপাজয়ী এই কোচ গত মৌসুমে ক্লাবটিকে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতালেও এবার বড় কোনো শিরোপা জেতাতে পারেননি। উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা আন্তমহাদেশীয় কাপ জিতিয়য়েছেন।
এ মৌসুমে লা লিগায় আর তিন ম্যাচ খেলবে রিয়াল। শীর্ষে থাকা বার্সার সঙ্গে ৭ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে দুইয়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
আরও পড়ুনবক্সার, রেফারি, আর্জেন্টাইন—৬০ বছর পর ব্রাজিলের ‘বিচিত্র’ বিদেশি কোচদের তালিকায় আনচেলত্তি১০ মে ২০২৫আনচেলত্তির বিদায়ের পর জাবি আলোনসোর রিয়ালের নতুন কোচ হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। জাবি এরই মধ্যে বায়ার লেভারকুসেন ছাড়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন। ইএসপিএনকে সূত্র জানিয়েছে, জাবিকে নতুন কোচ বানাতে আলোচনার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে রিয়াল।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আগামী ৬ জুন ইকুয়েডরের মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। এরপর ১১ জুন তাদের প্রতিপক্ষ প্যারাগুয়ে। ১৪ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাই টেবিলে চতুর্থ ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে খেলা এরই মধ্যে নিশ্চিত করলেও ব্রাজিলকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিশ্বকাপের পরিবর্তিত কাঠামো অনুযায়ী দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট পাবে ছয়টি দেশ। সপ্তম দলটিকে প্লে অফ খেলে আসতে হবে।
ব্রাজিল ফুটবলে দীর্ঘ মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া প্রথম বিদেশি কোচ হবেন আনচেলত্তি। এর আগে তিনজন বিদেশি কোচ দেখা গেছে ব্রাজিল জাতীয় দলে। তাদের মধ্যে দুজন ছিলেন সহকারী কোচের দায়িত্বে এবং শেষের জন মাত্র এক ম্যাচের জন্য ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ পদে ছিলেন।
১৯২৫ কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল জাতীয় দলের ফিল্ড কোচের দায়িত্বে ছিলেন উরুগুয়ের র্যামন প্লাতেরো। কোপায় চার ম্যাচ ব্রাজিলের কোচ পদে ছিলেন তিনি, মেয়াদ ছিল ২০ দিন। ১৯৪৪ সালে উরুগুয়ের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচে মাত্র চার দিন ব্রাজিলের সহকারী কোচ পদে ছিলেন পর্তুগালের জোরেকা। এরপর ১৯৬৫ সালে উরুগুয়ের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে কোচের পদ সামলান আর্জেন্টিনার ফিলপো নুনেজ। ওই এক দিনই তিনি ব্রাজিল কোচের দায়িত্বে ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র জ ল জ ত য় দল ব শ বক প ব ছ ই ল র নত ন ক জ ত য় দল র ল র ক চ পদ আর জ ন ট নত ন ক চ স ব এফ ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’