‘একটু রোদ কুমলি তারপর রিকশা চালাতি যাব’
Published: 12th, May 2025 GMT
জলাধার ভরাট ও গাছপালা কমতে থাকায় খুলনা অঞ্চলে উত্তরোত্তর বাড়ছে তাপমাত্রা। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও সংসার খরচ চালাতে ভারী কাজ করতে হচ্ছে তাদের। বিশেষজ্ঞরা এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিদ্যমান জলাধারগুলো সংরক্ষণের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। তারা মনে করেন, গাছ কাটা বন্ধের পাশাপাশি নতুন করে গাছও রোপণ করতে হবে।
গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর বন বিভাগ অফিসের সামনের সড়কে পাওয়া যায় রিকশাচালক শুকুর আলীকে। তীব্র গরমে যাত্রী টেনে কাহিল হয়ে সেখানে বসে ঝিমাচ্ছিলেন তিনি। শুকুর আলী বলেন, ‘তিন দিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়তিছে। রোদে রিকশা চালায়ে কাহিল হয়ে যাচ্ছি, গলা শুকোয় যাচ্ছে। একটু রোদ কুমলি তারপর আবার রিকশা চালাতি যাব।’
৩টার দিকে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ঘাটে ট্রলার থেকে ইট নামাতে নামাতে ঘেমে-নেয়ে একাকার শ্রমিকেরা। শ্রমিক ইয়াকুব আলী ও আব্দুল খালেকের কাছে এই গরম অসহ্য। তবু উপায় নেই। কাজ না করলে যে খাবার জুটবে না তাদের। অন্য শ্রমিক জয়নাল শেখ বলেন, ‘আজকেও অনেক গরম পড়িছে। রোদি কাজ করতি অনেক কষ্ট হচ্ছে। বারবার গলা শুকোয় যাচ্ছে, পানি খাতি হচ্ছে।’
খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, সোমবার খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শনিবার ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই অবস্থায় সবারই হাঁসফাঁস অবস্থা। দুপুরে নগরীর শামসুর রহমান রোড, পুরাতন যশোর রোড, খানজাহান আলী রোডসহ কয়েকটি সড়কে যানবাহন ও লোক চলাচল ছিল কম। রাস্তা থেকে তাপ উঠছে, বাতাসে যেন আগুনের হলকা। পথচারীদের কাউকে ছাতা মাথায় দিয়ে হাঁটতে দেখা যায়। মোড়ে মোড়ে শরবত ও ডাব বিক্রি হচ্ছে। যদিও শরবতের দোকানে তেমন লোক নেই। ডাবের দোকানে ২-১ জন গেলেও দাম শুনে বিরক্ত হয়ে চলে যাচ্ছেন তারা। বিক্রেতারা একেকটি ডাবের দাম চাইছেন ১০০-১৫০ টাকা।
রিকশাচালক আব্দুল ওহাব বলেন, ‘কয় বছর ধরে যত দিন যাচ্ছে গরম তত বাড়তিছে। রোদি গা পুড়ে যাচ্ছে। একজন যাত্রী টানার পর ছায়ায় বইসে কিছুক্ষণ জিড়েই (বিশ্রাম) নিতি হচ্ছে। তার উপর রাত্তিরি আবার কারেন্ট থায়ে না। ঠিকমতো ঘুমাতিও পারিনে।’
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সাবেক ইনচার্জ মো.
খুলনায় অনেক জলাধার ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এসব জলাশয় তাপ শোষণ করে নিত জানিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, আগে অনেক গাছপালা ছিল, সেগুলো অক্সিজেন সরবরাহের পাশাপাশি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করত। এখন গাছপালা কমে যাওয়ায় বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে। সে কারণে এখন গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তিনি জানান, খুলনায় আগের তুলনায় এসি ব্যবহার বেড়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এটিও একটি কারণ। এ ছাড়া লবণাক্ততা বেড়েছে। এ কারণে বাতাসে আর্দ্রতা ও লবণের পরিমাণ বেড়েছে। তাই গরমও বেশি লাগছে।
ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরীর ভাষ্য, গরম কমাতে হলে নগরীতে জলাধার বাড়াতে হবে। যেগুলো আছে, সেগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। বৃক্ষ নিধন বন্ধের পাশাপাশি নতুন গাছ লাগাতে হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এবি পার্টিতে যোগ দেওয়ায় জামায়াত নেতা বহিষ্কার
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা মো. আব্দুল্লাহ বাদশা আমার বাংলাদেশ পার্টিতে (এবি পার্টি) যোগ দেওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার (১২ আগস্ট) রাতে নালিতাবাড়ী উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে, এবি পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর সোমবার রাতেই জাতীয় নির্বাচনে শেরপুর-২ আসনে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন মাওলানা মো. আব্দুল্লাহ বাদশা।
জামায়াত ইসলামীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নালিতাবাড়ী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মাওলানা মো. আব্দুল্লাহ বাদশাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সোমবার এক জরুরি বৈঠকে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জামায়াতে ইসলামী নালিতাবাড়ী পৌর শাখার সেক্রেটারি আব্দুল মোমেন বলেছেন, অন্য দলে যোগ দেওয়ায় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে মো. আবদুল্লাহ বাদশাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মো. আবদুল্লাহ বাদশা বলেছেন, “আমি এবি পার্টিতে যোগ দিয়েছি। দল (এবি পার্টি) আমাকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। যেহেতু, আমি এবি পার্টির প্রার্থী, সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিষ্কার করতেই পারে।”
ঢাকা/তারিকুল/রফিক