জলাধার ভরাট ও গাছপালা কমতে থাকায় খুলনা অঞ্চলে উত্তরোত্তর বাড়ছে তাপমাত্রা। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও সংসার খরচ চালাতে ভারী কাজ করতে হচ্ছে তাদের। বিশেষজ্ঞরা এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিদ্যমান জলাধারগুলো সংরক্ষণের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। তারা মনে করেন, গাছ কাটা বন্ধের পাশাপাশি নতুন করে গাছও রোপণ করতে হবে।
গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর বন বিভাগ অফিসের সামনের সড়কে পাওয়া যায় রিকশাচালক শুকুর আলীকে। তীব্র গরমে যাত্রী টেনে কাহিল হয়ে সেখানে বসে ঝিমাচ্ছিলেন তিনি। শুকুর আলী বলেন, ‘তিন দিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়তিছে। রোদে রিকশা চালায়ে কাহিল হয়ে যাচ্ছি, গলা শুকোয় যাচ্ছে। একটু রোদ কুমলি তারপর আবার রিকশা চালাতি যাব।’ 
৩টার দিকে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ঘাটে ট্রলার থেকে ইট নামাতে নামাতে ঘেমে-নেয়ে একাকার শ্রমিকেরা। শ্রমিক ইয়াকুব আলী ও আব্দুল খালেকের কাছে এই গরম অসহ্য। তবু উপায় নেই। কাজ না করলে যে খাবার জুটবে না তাদের। অন্য শ্রমিক জয়নাল শেখ বলেন, ‘আজকেও অনেক গরম পড়িছে। রোদি কাজ করতি অনেক কষ্ট হচ্ছে। বারবার গলা শুকোয় যাচ্ছে, পানি খাতি হচ্ছে।’
খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, সোমবার খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শনিবার ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই অবস্থায় সবারই হাঁসফাঁস অবস্থা। দুপুরে নগরীর শামসুর রহমান রোড, পুরাতন যশোর রোড, খানজাহান আলী রোডসহ কয়েকটি সড়কে যানবাহন ও লোক চলাচল ছিল কম। রাস্তা থেকে তাপ উঠছে, বাতাসে যেন আগুনের হলকা। পথচারীদের কাউকে ছাতা মাথায় দিয়ে হাঁটতে দেখা যায়। মোড়ে মোড়ে শরবত ও ডাব বিক্রি হচ্ছে। যদিও শরবতের দোকানে তেমন লোক নেই। ডাবের দোকানে ২-১ জন গেলেও দাম শুনে বিরক্ত হয়ে চলে যাচ্ছেন তারা। বিক্রেতারা একেকটি ডাবের দাম চাইছেন ১০০-১৫০ টাকা।
রিকশাচালক আব্দুল ওহাব বলেন, ‘কয় বছর ধরে যত দিন যাচ্ছে গরম তত বাড়তিছে। রোদি গা পুড়ে যাচ্ছে। একজন যাত্রী টানার পর ছায়ায় বইসে কিছুক্ষণ জিড়েই (বিশ্রাম) নিতি হচ্ছে। তার উপর রাত্তিরি আবার কারেন্ট থায়ে না। ঠিকমতো ঘুমাতিও পারিনে।’ 
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সাবেক ইনচার্জ মো.

আমিরুল আজাদ বলেন, খুলনায় অনেক জলাশয় ভরাট করে অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। অনেক নদী-খাল শুকিয়ে গেছে। পাশাপাশি গাছপালা কেটে ফেলার কারণেও গরম বেড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পুকুর-জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি নদী ও খাল অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করা, নতুন গাছপালা লাগানোর পরামর্শ তাঁর। 
খুলনায় অনেক জলাধার ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এসব জলাশয় তাপ শোষণ করে নিত জানিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, আগে অনেক গাছপালা ছিল, সেগুলো অক্সিজেন সরবরাহের পাশাপাশি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করত। এখন গাছপালা কমে যাওয়ায় বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে। সে কারণে এখন গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তিনি জানান, খুলনায় আগের তুলনায় এসি ব্যবহার বেড়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এটিও একটি কারণ। এ ছাড়া লবণাক্ততা বেড়েছে। এ কারণে বাতাসে আর্দ্রতা ও লবণের পরিমাণ বেড়েছে। তাই গরমও বেশি লাগছে। 
ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরীর ভাষ্য, গরম কমাতে হলে নগরীতে জলাধার বাড়াতে হবে। যেগুলো আছে, সেগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। বৃক্ষ নিধন বন্ধের পাশাপাশি নতুন গাছ লাগাতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গরম জল ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ