বৈঠকে পুতিনকে চান জেলেনস্কি, কী বলছে রাশিয়া
Published: 13th, May 2025 GMT
তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে সরাসরি আলোচনায় বসতে যাচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আগামী বৃহস্পতিবার ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতি চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিয়েভের ভাষ্য, বৈঠকে পুতিন উপস্থিত না থাকার অর্থ এটাই যে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্য যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের শুরুর দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হয়েছিল। দীর্ঘ বিরতির পর বৃহস্পতিবার আবার দুই পক্ষ আলোচনা টেবিলে বসতে যাচ্ছে। এই প্রচেষ্টায় বড় ভূমিকা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের।
তবে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আদৌ পুতিন উপস্থিত থাকবেন কি না, তা নিশ্চিত করেনি ক্রেমলিন। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অংশ নিতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জেলেনস্কির প্রধান কর্মকর্তা আন্দ্রি ইয়ারমাক বলেন, পুতিন যদি তুরস্কে আসার বিষয়টি নাকচ করেন, তাহলে চূড়ান্ত একটি সংকেত পাওয়া যাবে যে তিনি এই যুদ্ধ থামাতে চান না। এটাও বোঝা যাবে যে রাশিয়া কোনো ধরনের আলোচনায় আগ্রহী নয় এবং তারা প্রস্তুত নয়।
আরও পড়ুনআলোচনার জন্য পুতিনের সঙ্গে জেলেনস্কির বসা উচিত: ট্রাম্প১১ মে ২০২৫ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিদ্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে, তার প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এই মুহূর্তে এতটুকুই আমরা বলতে পারছি। আপাতত এর বেশি কিছু আমরা বলব না।’ রুশ প্রতিনিধিদলে কে কে থাকছেন, তা–ও উল্লেখ করেননি তিনি।
এদিকে আজ মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেছেন ট্রাম্প। গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি আসলে সেখানে (ইস্তাম্বুল) যাওয়ার কথা ভাবছি। এর সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমি মনে করি।’
এর আগে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন পুতিন। সোমবার থেকে ৩০ দিনের শর্তহীন যুদ্ধবিরতি শুরুর যে প্রস্তাব কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা দিয়েছিল, তার পাল্টা হিসেবে ওই প্রস্তাব দেন তিনি। তবে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি মস্কো।
আরও পড়ুনতুরস্কে পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাতে রাজি জেলেনস্কি ২০ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইউরেনিয়াম সরাতে পারেনি ইরান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথাও সরিয়ে নিয়েছে—এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্যের কথা তাঁর জানা নেই। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হেগসেথ এ কথা বলেন। হেগসেথের কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথার প্রতিধ্বনি। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে।
গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বোমারু বিমানগুলো ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার ওপর হামলা চালায়, যেখানে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের এক ডজনের বেশি ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করা হয়।
এ হামলার ফলাফল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে বোঝা যায় এটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কতটা পিছিয়ে দিতে পেরেছে।
হেগসেথ বলেন, ‘আমি এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য দেখিনি বা জানি না, যা বলছে যেসব জিনিস যেখানে থাকার কথা ছিল, সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে বা অন্য কোথাও নেওয়া হয়েছে।’
■ প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ইরানে হামলাকে সফল বলে আখ্যায়িত করেন। ■ যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সফলতাকে সাংবাদিকেরা খাটো করছেন বলে দাবি হেগসেথের।সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের পুরোটা পর্যবেক্ষণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, কিছু সরিয়ে নিতে অনেক সময় লাগত।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বাইরে যেসব গাড়ি আর ছোট ট্রাক ছিল, সেগুলো ছিল কংক্রিট শ্রমিকদের, যাঁরা টানেলের মুখ ঢাকার কাজ করছিলেন। কোনো কিছুই ওই স্থাপনা থেকে সরানো হয়নি।’ তবে তিনি এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি।
বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছেন, হামলার আগেই ইরান সম্ভবত ফোর্দোর গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনাটি থেকে অস্ত্র তৈরির উপযোগী মাত্রার উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের একটি মজুত সরিয়ে ফেলেছে এবং তারা এটি এমন কোনো গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখতে পারে, যার অবস্থান ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র বা জাতিসংঘের পরমাণু পরিদর্শকদের অজানা।
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, ম্যাক্সার টেকনোলজিসের স্যাটেলাইট চিত্রে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় অস্বাভাবিক তৎপরতা দেখা গেছে। চিত্রে দেখা যায়, স্থাপনাটির একটি প্রবেশপথের বাইরে দীর্ঘ লাইনে অনেক যানবাহন অপেক্ষা করছে।
রোববার রয়টার্সকে এক জ্যেষ্ঠ ইরানি সূত্র জানিয়েছেন, হামলার আগেই ৬০ শতাংশ মাত্রার উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বেশির ভাগ অংশ একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ইউরোপীয় গোয়েন্দা মূল্যায়নের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত মূলত অক্ষত রয়েছে। কারণ, এগুলো শুধু ফোর্দোতে কেন্দ্রীভূত ছিল না।
এ দাবিগুলো অস্বীকার করে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সফলতাকে সাংবাদিকেরা খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন।
র্যাটক্লিফ, হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন বৃহস্পতিবার একটি গোপন ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের ১০০ সদস্যের সবার সঙ্গে এ হামলার বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেন।
পেন্টাগনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এ হামলাকে ঐতিহাসিকভাবে সফল বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি এমন এক সময়ে এ মন্তব্য করেছেন, যখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার কোনো হামলা চালায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো ইরানের পাল্টা আঘাতের লক্ষ্য হবে।