অতীতে দেশটির মুসলিম শাসকেরা কতটা ‘দয়ালু ও সদাশয়’ ছিলেন, ভারত সরকারকে তা স্মরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন ওমানের প্রধান বা গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আহমদ বিন হামাদ আল-খলিলি।

একই সঙ্গে শেখ আহমদ ‘আক্রমণকারীদের ওপর বিজয়’ অর্জন করার জন্য পাকিস্তানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

চার দিন ধরে উভয় পক্ষের গোলাবর্ষণ এবং আকাশ থেকে নজিরবিহীন পাল্টাপাল্টি হামলার পর গত শনিবার একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হয় ভারত ও পাকিস্তান।

ওমানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা শেখ আহমদ বিন হামাদ আল-খালিলি গত সোমবার এক বিবৃতিতে ‘আক্রমণকারীর ওপর বিজয় অর্জনের জন্য’ পাকিস্তানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশা করি, তারা (পাকিস্তান) তাদের নির্যাতনের শিকার মুসলিম ভাইদের পাশে অবিচল দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়াবে, বিশেষ করে আল-আকসার (জেরুজালেমের) পবিত্র ভূমিতে।’

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দর ১৭৮৪ থেকে ১৯৫০–এর দশক পর্যন্ত প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ওমানের অধীন ছিল। ১৯৫৬ সালে ওমান ভারতের কাছে গোয়াদর বন্দর বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু জওহরলাল নেহরু সরকার তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়নি। পরে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের কাছে গোয়াদর বন্দর বিক্রি করে ওমান।

আরবি ভাষায় দেওয়া ওই বিবৃতিতে শেখ আহমদ আরও বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারকে মুসলমানদের প্রতি বৈরিতা পরিত্যাগ করতে আহ্বান জানাই; তাদের মুসলিম শাসকেরা অতীতে ধর্মনির্বিশেষে জনগণের প্রতি যে দয়া ও মহানুভবতা দেখিয়েছিল তা স্মরণ করতে বলি।’

ব্রিটিশ শাসন শুরুর আগে ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক জায়গায় মুসলিম শাসকেরা শাসন করতেন। ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চল মোগল শাসনের অধীন ছিল।

ওমান সরকার শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের সঙ্গেই ওমানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। পাকিস্তানের সঙ্গে ওমানের সমুদ্র সীমান্ত রয়েছে।

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দর ১৭৮৪ থেকে ১৯৫০–এর দশক পর্যন্ত প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ওমানের অধীনে ছিল। ১৯৫৬ সালে ওমান ভারতের কাছে গোয়াদর বন্দর বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু জওহরলাল নেহরু সরকার তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়নি। পরে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের কাছে গোয়াদর বন্দর বিক্রি করে ওমান।

‘আমরা ভারত সরকারকে মুসলমানদের প্রতি বৈরিতা পরিত্যাগ করতে আহ্বান জানাই; তাদের মুসলিম শাসকেরা অতীতে ধর্মনির্বিশেষে জনগণের প্রতি যে দয়া ও মহানুভবতা দেখিয়েছিল তা স্মরণ করতে বলি।’শেখ আহমেদ বিন হামাদ আল-খলিলি, ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের সূত্রপাত হয় গত ২২ এপ্রিল, ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর সন্দেহভাজন বিদ্রোহীদের হামলার পর থেকে। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগই ভারতীয় পর্যটক ছিলেন।
ভারত ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে, অন্যদিকে ইসলামাবাদ বলেছে, এ ঘটনায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

আরও পড়ুনপাকিস্তানের ৬ স্থানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশ ও স্থলে জবাব ইসলামাবাদের০৭ মে ২০২৫আরও পড়ুনভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি: ট্রাম্প১০ মে ২০২৫

গত মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতের পর পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। পাল্টা হামলা চালিয়ে জবাব দেয় পাকিস্তান।

সর্বশেষ এই সংঘাতে পাকিস্তানে বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। ভারত বলেছে, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে তাদের অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকরাও রয়েছেন।

চার দিন ধরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আকাশযুদ্ধ ও গোলাবর্ষণের পর গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুনবিশ্বের প্রথম ‘ড্রোন যুদ্ধ’: ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে নতুন অধ্যায়ের উন্মোচন ঘটাল১১ মে ২০২৫আরও পড়ুন‘অপারেশন সিঁদুরের’ জবাবে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’ শুরু১০ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব শ খ আহমদ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল

১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন সকাল আটটা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। ভোট চলাকালেই বোঝা গিয়েছিল ১২ সংগঠনের ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ বিপুল ভোটে জিততে চলছে। কেননা, শিক্ষার্থীরা এ প্যানেল নিয়ে ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত।

নির্বাচনের পর ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল—‘চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিপুল বিজয়’। আর দৈনিক আজাদী পত্রিকার শিরোনাম ছিল—‘চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের ধস নামানো জয়’। খবরে বলা হয়, ৯৯টি পদের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।

নির্বাচনের পর ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলন করে। তারা কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। যদিও সেসব অভিযোগ পরবর্তী সময় ‘হাওয়ায়’ মিলিয়ে যায়। ১০ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরে বিজয় মিছিল বের করা হয়।

পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা সেই বিজয় মিছিলে অংশ নিতে শহীদ মিনারে যান। বিকেল চারটায় শুরু হয় বিজয় মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগরের বিভিন্ন সড়ক। মিছিলটি নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, লাল দিঘীরপাড় থেকে সন্ধ্যায় আবার শহীদ মিনারে ফিরে যায়। চাকসুর নির্বাচিত নেতারাও যোগ দেন ওই বিজয় মিছিলে। নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিজয়ে একই দিন মিছিল বের হয় কুমিল্লায়। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে শত মাইল দূরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আনন্দমিছিল হয়।

সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।আজিম উদ্দিন আহমদ, সাবেক জিএস, চাকসু

নির্বাচনের পর ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রধারা, ছাত্রপরিষদ, ছাত্র পরিষদ, ইসলামী যুব সেনা, প্রগতিশীল মানবতাবাদী ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘এই বিজয় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা শিক্ষার্থীদের বিজয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তৎকালীন উপসহসভাপতি জিয়াউল আহসান সে সময় বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এ বিজয় সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূচনা করবে।’

সর্বদলীয় সভা শেষে ছাত্র ঐক্য

চাকসুর পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ফলে ষষ্ঠ নির্বাচনেও ছাত্রশিবির ছিল ‘কনফিডেন্ট’। অর্থাৎ তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। তবে ছাত্রশিবিরের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল ১২টি ছাত্রসংগঠন। সবাই মিলে গড়ে তুলেছিল ঐক্যবদ্ধ মোর্চা- সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।

যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন।

যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন। এর মধ্যে নাজমুল হক ও শফি আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ জাসদের সমর্থক ছিল।

সে সময় ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ সহজেই তৈরি হয়নি। স্মৃতিচারণা করে চাকসুর সর্বশেষ জিএস আজিম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে জানুয়ারি মাসে একদিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে সর্বদলীয় সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) শাহ আলম, বাসদ নেতা বালাগাত উল্লাহ, জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

আজিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।’

চাকসু ভবন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক মারা গেছেন
  • ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক আর নেই
  • গবেষণালব্ধ বই যুগের আলোকবর্তিকা: ধর্ম উপদেষ্টা
  • ঢাকা আলিয়া এক‌টি প্রতিষ্ঠান নয়, তৈ‌রি হ‌চ্ছে আগামীর ভ‌বিষ‌্যৎ: ধর্ম উপদেষ্টা
  • বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক
  • পিআর পদ্ধতিতে স্থায়ী সরকারব্যবস্থা হয় না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • ৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল