২০১৮ সালে টি২০ জাতীয় দলে সুযোগ মেলে তাঁর। তবে এখনও ওয়ানডে দলে ফেরার সংগ্রাম করছেন। ২০২২ সালের টি২০ বিশ্বকাপ দলে না রাখা, ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্য নির্বাচকদের বিবেচনায় না থাকা এবং সম্প্রতি টি২০ দলের সহঅধিনায়ক নির্বাচিত হওয়া নিয়ে মন খুলে কথা বলছিলেন শেখ মেহেদী। আরব আমিরাতের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে গতকাল সকালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শেখ মেহেদীর আবেগের সে গল্প শুনেছেন সেকান্দার আলী

সমকাল: টি২০ দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

শেখ মেহেদী: সামনে যে দুটি সিরিজ আছে সে নিয়ে পরিকল্পনা করছি। বিশ্বকাপ অনেক দূরে। তার আগে অনেক ম্যাচ আছে। এই সিরিজগুলো খেলা, সুস্থ থেকে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। 

সমকাল: বিশ্ব টি২০তে বাংলাদেশের ভালো রেকর্ড নেই। এই সংস্করণে আপনাদের কাছে কি বড় কিছু আশা করতে পারে দেশ?

শেখ মেহেদী: আমার কাছে মনে হয়, উন্নতির অনেক জায়গা আছে। যে কোনো সংস্করণে দুটি দিক থাকে– ব্যাটিং, বোলিং। আমরা ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে পারলে ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। কারণ, আমাদের বোলিং আগের থেকে উন্নত। ব্যাটিংয়ে কিছু জায়গায় উন্নতি করা সম্ভব হলে, স্কোর বোর্ডে চ্যালেঞ্জিং স্কোর দেওয়া গেলে বোলাররা ম্যাচ জেতাবে। মূল কথা হলো, ব্যাটিংয়ে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারলে আমরা একটি ভালো দল হতে পারব। 

সমকাল: গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে দারুণ একটি টি২০ সিরিজ খেলেছেন। এ বছর কি এর ধারাবাহিকতা থাকবে?

শেখ মেহেদী: ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমরা খেলেছি ছয় মাস আগে। এই ছয় মাসের ভেতরে আন্তর্জাতিক টি২০ খেলা হয়নি। আমাদের টি২০ দলের খেলোয়াড়দের আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার কথা মাথায় থাকবে। যেটা ইতিবাচক। আমরা এখন আরব আমিরাতের সঙ্গে নতুন করে দুটি ম্যাচ খেলব। সেখানে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারলে সামনে ধারাবাহিকতা রাখা সম্ভব হবে। বিশেষ করে লিটন কুমার দাস সংবাদ সম্মেলনে যেটা বলেছেন, ওই ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলা সম্ভব হলে ভবিষ্যতের জন্য ভালো। 

সমকাল: ডিপিএলে আপনাকে বরাবর অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করতে দেখা গেছে। অথচ আপনি ওয়ানডেতে থাকেন না। এ নিয়ে কষ্ট আছে? 

শেখ মেহেদী: সুযোগ না পেলে কষ্টের জায়গা প্রত্যেক খেলোয়াড়ের থাকে। আমরা যেটাকে আক্ষেপ বলে থাকি। আসলে কোনো দলে থাকা না-থাকা নির্ভর করে নির্বাচক ও ক্রিকেট বোর্ডের ওপর। আমি তো চাইব খেলতে। কারণ, আমি ৫০ ওভারের গেমে পারফর্ম করি। লাল বলেও পারফর্ম করি। টিম কম্বিনেশনে ম্যাচ না করায় আমাকে হয়তো নেওয়া হয় না। যখন সুযোগ আসবে, তখন অবশ্যই খেলব। আমার ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে পাঁচ বছর আগে। এই পাঁচ বছরে মাত্র ১১টি ম্যাচ খেলেছি। একজন খেলোয়াড় যখন নিয়মিত খেলে, তার জন্য পারফর্ম করা সহজ। বিরতি পড়লে নতুন করে শুরু করতে হয়। আমাদের এখানে যারা নিয়মিত খেলে, তারা খেলতেই থাকে। ঘরোয়া লিগ খেলে ওটা কাভার করা সম্ভব না। আন্তর্জাতিক ফিল পুরোই আলাদা। ওই মাইন্ডসেটআপটা সম্পূর্ণ আলাদা। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ওই জায়গায় ভালো করতে চাইলে নিয়মিত খেলতে হবে। 

সমকাল: সাকিব আল হাসান একবার সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, শেখ মেহেদী বিপিএলের আবিষ্কার। আপনিও কি তাই মনে করেন? 

শেখ মেহেদী: ওরকম না। আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে যেখানেই খেলি, তাতে পুরো ফোকাস থাকে। পারফর্ম করার চেষ্টা করি, সব সময় হয়তো ক্লিক করে না। বিপিএলে যেহেতু সবার দৃষ্টি থাকে, ওখানকার পারফরম্যান্স বেশি কাউন্ট হয়। এ কারণেই হয়তো সাকিব ভাই বলেছেন, আমার উত্থান বিপিএল থেকে। 

সমকাল: নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছিলেন, শেখ মেহেদী ফ্লুক না। সে নিজেকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সে টিকে থাকার জন্যই এসেছে।

শেখ মেহেদী: স্যারের মতো একজন মানুষের কাছ থেকে এ রকম কমেন্ট পেলে অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। ক্রিকেট বোর্ডে যারা বড় দায়িত্বে আছেন, তারা ভালো কমপ্লিমেন্ট দিলে ভালো লাগে। বেশির ভাগ খেলোয়াড় বয়সভিত্তিক দল থেকে আসে। আমার অনূর্ধ্ব-১৯ খেলা হয়নি। সেদিক থেকে আমি একটু পিছিয়ে ছিলাম। ধীরে ধীরে সেটা ওভারকাম করেছি। আমার সংগ্রামটা বেশি ছিল।  

সমকাল: ২০২২ সালের টি২০ বিশ্বকাপে নেওয়া হয়নি কন্ডিশনকে অজুহাত বানিয়ে। একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে এক বছর জাতীয় দলে নেওয়া হয়নি। সে দুঃখ ভুলতে পেরেছেন?

শেখ মেহেদী: দুঃখের সময় তো অবশ্যই। আমি ২২ বা ২৩টি ম্যাচের ভেতরে একটি ম্যাচ খারাপ খেলেছিলাম। একটি ম্যাচের কারণে হয়তোবা তারা মনে করেছে, অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে আমার বোলিং কার্যকর হবে না। তাই দলে নেয়নি। খেলার সুযোগ পেলে দেখানো যেত বোলিং কন্ডিশন উপযোগী কিনা। নিউজিল্যান্ডে ভালো করতে পারলে অস্ট্রেলিয়ায় না করার কারণ দেখি না। যেটা বললেন, বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে এক বছর জাতীয় দলে ছিলাম না। ওটা মনে করলে খারাপই লাগে। 

সমকাল: টি২০ দলের সহঅধিনায়ক হওয়ার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই?

শেখ মেহেদী: এটা তো ভালো লাগার মতো একটি বিষয়। বিসিবি আমার ওপর আস্থা রেখেছে। এখন আমার কর্তব্য ভালো খেলে এবং টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে দলকে ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে সহযোগিতা করা। বিসিবির সিদ্ধান্তে আমি খুশি। তাদের বিশ্বাসের মর্যাদা যেন ধরে রাখতে পারি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব শ বক প র জন য সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ সফরে আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার প্রধান

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুন ৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন। এক দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

তুরস্ক থেকে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র সোমবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীর মাঝে সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, কেনাকাটা, বিনিয়োগ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অধ্যাপক হালুক গরগুন আলোচনা করতে পারেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অধীনে সরাসরি কাজ করে প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থা (ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এজেন্সি–এসএসবি)। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক—বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, গবেষণার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর বিকাশ ও বিবর্তনের বিষয়ে এসএসবি মূল ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং বিনিয়োগের দেখভাল করে এসএসবি।

তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রাজনৈতিক দিকটি দেখভাল করেন। আর তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কৌশলগত বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছেন হালুক গরগুন। কারণ, এসএসবি প্রতিরক্ষাশিল্প নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্পের জন্য প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এটি সমরাস্ত্রের নকশা ও উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়।

বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, সম্প্রতি ঢাকা–আঙ্কারা সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে তুরস্ক নানা ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিয়ে থাকে। গত সাত বছরে বারাক্তার টিবি–২ ড্রোনসহ অন্তত ১৫ ধরনের আধুনিক সমরাস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ।

মূলত ২০১৮ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির আরও কিছু সমরাস্ত্র কেনাকাটা, বাংলাদেশে সমরাস্ত্রের কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়েও আলোচনা চলছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দীর্ঘ মেয়াদে আরও শক্তিশালী হওয়ার নানা ইঙ্গিত আছে বলে মনে করেন ঢাকার কূটনীতিকেরা।

গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ওমের বোলাত। সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষাশিল্প স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

উত্তরে ওমের বোলাত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক টেক্সটাইল শিল্প ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৈচিত্র্যময় করতে পারে। প্রতিরক্ষাশিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধশিল্প এবং কৃষিযন্ত্র খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।

সমরাস্ত্রবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে আঙ্কারার কাছ থেকে কোবরা আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে ঢাকা।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় তুরস্ক নির্মিত মাইন থেকে সুরক্ষাকারী যান, সাঁজোয়া যান এবং বহুমাত্রিক রকেট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত কামানের গোলা বিক্রির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছে সামরিক হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিক্রিতে আগ্রহী তুরস্ক। তুরস্কের একটি কোম্পানি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে শেল বানানোর প্রযুক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের টহল নৌযান তৈরির জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমরাস্ত্র কিনেছে। ওই বছর গ্রাউন্ডেড সার্ভিলেন্স রাডার, কৌশলগত সাঁজোয়া যান কোবরা ২-সহ কয়েক ধরনের সাঁজোয়া যান ও বহনযোগ্য জ্যামার কেনা হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে অফশোর ক্রেন, সাঁজোয়া যান এবং অ্যাম্বুলেন্স, মিসাইল লঞ্চিং সিস্টেম, ওরলিকন স্কাই গার্ড রাডার সিস্টেমসহ নানা ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হয়েছে।

আরও পড়ুনতুরস্ক থেকে সমরাস্ত্র কেনা বেড়েছে২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ