বিয়ের পর হলি ক্রস কলেজে ভর্তি হই। প্রথম বর্ষের শেষ দিকে বুঝতে পারি, আমি মা হতে যাচ্ছি। আমাদের প্রথম কন্যা নোভার জন্মের পর এইচএসসি পরীক্ষার এক-দেড় মাস আগে নোভাকে নিয়ে আমেরিকা রওনা দিই। (তবে হুমায়ূন আহমেদ ‘হোটেল গ্রেভার ইন’-এ লিখেছিলেন, তাঁর লেখা চিঠি পড়ে আমি কাঁদতে কাঁদতে আমেরিকাতে রওনা হয়েছিলাম, সেটা সত্যি ছিল না)। সবাইকে চিঠি লিখেও যখন আমি আমেরিকা যেতে রাজি হইনি, তখন আমার দাদা প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁকে একটি চিঠি লেখেন তিনি।
চিঠিতে কী লেখা ছিল জানি না, তবে দাদা আমাকে কাছে ডেকে মাথায় হাত রেখে বলেন, ‘বিদেশভ্রমণও শিক্ষার একটি বড় অংশ।’ দাদার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার সাহস আমার ছিল না।
যা–ই হোক, ব‍্যক্তিগত কারণে পরীক্ষার এক মাস আগে আমেরিকা চলে যাই। হুমায়ূন আহমেদের পিএইচডির পর এক বছর পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ করে আমাদের দেশে ফেরার কথা ছিল। নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে হাইস্কুলের কিছু কোর্স ছিল। আমি তিনটি কোর্স করেছিলাম, সেগুলো হলো ম্যাথ, ফিজিকস ও কেমিস্ট্রি; সবগুলোতেই ৯০ নাম্বার পেয়েছিলাম। ওঁ বলেছিল, এ ধরনের কোর্স করতে পারলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব হয়তো। কিন্তু পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপের পাঁচ মাসের মাথায়ই ব‍্যক্তিগত কারণে দেশে ফিরে আসতে হয়। দেশে ফেরার দেড় মাসের মধ‍্যে আমাদের তৃতীয় কন্যা বিপাশার জন্ম হয় পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হাসপাতালে)।
কয়েক বছর পার হয়ে ১৯৮৭ সালে নানা রকম ঝামেলা পার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। কয়েক মাস পার হতেই আমি বুঝতে পারি, আবারও মা হতে যাচ্ছি। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। আমার শাশুড়িকে দেখেছি, তিনি তাঁর বড় ছেলেকে সংসারের সব ঝামেলা থেকে দূরে রাখতেন। তাই আমিও তা–ই করি। তিন কন্যা তিন স্কুলে পড়ত, অনেক ঝামেলা করে তাদের এক স্কুলে (হলি ক্রসে) এনেছি।
সকালে উঠে ওদের স্কুলের জন্য তৈরি করা বেশ কঠিন। স্কুলের কাপড় পরার পরই আমাকে দ্রুতগতিতে ৬টি বেণি করতে হয়! ওদের স্কুলে পাঠিয়ে দুপুরের খাবারের কথা ভাবতে হয়। ভাজাভুজি, ভাত, ডাল আকবরের মা রান্না করলেও মাছ, মুরগি অথবা মাংস আমাকেই রান্না করতে হয়। কন‍্যাদের বাবা রান্না ভালো না হলে খেতে পারেন না এবং প্রায়ই বন্ধুদের নিয়ে খেতে পছন্দ করেন।
আমার দাদা ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস, মা-ও ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স পড়তেন। আর আমি কি সারা জীবন ম‍্যাট্রিক পাস হয়ে থাকব? অনেক কষ্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। এখন আবার পড়াশোনা বন্ধ করতে হবে? হুমায়ূন আহমেদের তখন ৩ নম্বর ধারাবাহিক নাটক লেখার কথা হচ্ছিল। আমি তাঁকে অনুরোধ করি নাটকের কাজ কিছুদিন পরে করতে। সে রাজি হলো না, তাঁর নাকি তখনই লিখতে ইচ্ছে করছিল! আমাদের মধ্যে কথা ছিল এ রকম, তাঁর পড়াশোনার সময় আমি সাহায্য করেছি, তাই আমার পড়াশোনার সময় সে আমাকে সাহায্য করবে। কিন্তু সে তাঁর কথা রাখছে না। এদিকে আমার আগের প্রেগন্যান্সিতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার আমার খুবই কষ্ট হচ্ছিল। খাওয়া নিয়ে তো অসুবিধা হচ্ছিলই, তার সঙ্গে অন‍্য আরও কিছু উপসর্গ ছিল। একটু পরপর মুখে থুতু জমা হতো! বাসায় থাকলে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু ক্লাসের সময় কী করব? তখনো টিস্যু বক্স দেশে পাওয়া যেত না। আমি বড় একটি কাঁধে ঝোলানো ব‍্যাগে অনেক পুরোনো পত্রিকা রাখতাম, থুতু কাগজে ফেলে পলিথিনের ব্যাগে রাখতাম। শরীরের গঠনের জন্য অনেক দিন পর্যন্ত কিছু বোঝা যায়নি। তারপরও আমি খুব চওড়া সুতির ওড়না পরতাম।

সন্তানদের সঙ্গে গুলতেকিন খান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ক আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যায়াম কি স্বাভাবিক প্রসবে সহায়ক

স্বাভাবিক প্রসব বা নরমাল ডেলিভারি অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। মায়ের ও গর্ভে থাকা সন্তানের শারীরিক অবস্থা নির্দেশ করে প্রসব স্বাভাবিক হবে নাকি অস্ত্রোপচার দরকার হতে পারে। তবে সবকিছু স্বাভাবিক ও মা–শিশু সুস্থ থাকলে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য চেষ্টা করা হয়। গর্ভাবস্থায় সঠিক ব্যায়াম এই প্রক্রিয়াকে সহজ, নিরাপদ ও আরামদায়ক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ব্যায়ামের উপকারিতা

ব্যায়াম শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করে। পেট, পিঠ, পেলভিস ও ঊরুর পেশিকে শক্তিশালী করে। গর্ভধারণ ও প্রসবের সময় যেসব পেশি বেশি ব্যবহৃত হয়, সেগুলো সুসংহত হয়ে ওঠে।

ব্যায়াম প্রসবকালীন ব্যথা সহ্য করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়ামে শরীরের সহনশক্তি বাড়ে, ফলে প্রসবের সময় ব্যথা সহজে সহ্য করা যায়।

শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষ কিছু ব্যায়াম, যেমন ডিপ ব্রিদিং ও ল্যামাজ পদ্ধতি প্রসবের সময় শান্ত থাকতে সাহায্য করে।

শিশুর সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করে। কিছু ব্যায়াম, যেমন ‘পেলভিক টিল্ট’ বা ‘ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ’ গর্ভের ভেতরে শিশুকে সঠিক অবস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

প্রসবকালীন সময়ক্ষেপণ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়ামে পেশি নমনীয় ও সচল থাকে। ফলে প্রসবকাল দ্রুত ও সহজ হয়।

কবজি, কোমর ও মেরুদণ্ডের চাপ কমায়। ব্যায়াম করলে পিঠে ব্যথা কমে ও শরীরের ভারসাম্য রক্ষা হয়।

গর্ভাবস্থায় যেসব ব্যায়াম করবেন

হাঁটা: রোজ হালকা হাঁটাহাঁটি পায়ের রক্তসঞ্চালন উন্নত করে, ক্লান্তি কমায় ও মন ভালো রাখে।

কেগেল ব্যায়াম: মাংসপেশি শক্তিশালী করে, প্রসব সহজ হয় এবং প্রসব–পরবর্তী প্রস্রাব ধরে না রাখতে পারার সমস্যাও কমায়।

স্কোয়াটস: পেলভিক অঞ্চল খুলে দেয়, শিশুকে নিচে নামতে সাহায্য করে।

ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ

মেরুদণ্ড নমনীয় রাখে, শিশুর অবস্থান ‘হেড ডাউন’ করতে সাহায্য করে।

পেলভিক টিল্ট: কোমরব্যথা কমায় ও মাংসপেশিকে সচল রাখে।

ডিপ ব্রিদিং: মানসিক চাপ কমায়, প্রসবের সময় মনোযোগ ও নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়।

সতর্ক থাকতে হবে যেসব বিষয়ে

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম শুরুর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা (উচ্চ রক্তচাপ, প্লাসেন্টার, প্রি–টার্ম কনট্রাকশন ইত্যাদি) থাকলে ব্যায়াম নিষিদ্ধ। ব্যায়াম করার সময় যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করতে হবে। যেমন বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরা। বুক ধড়ফড় বা শ্বাসকষ্ট। তলপেটে বা পিঠে তীব্র ব্যথা। রক্তপাত বা পানি বের হওয়া।

প্রত্যেক গর্ভবতী নারীর শারীরিক অবস্থা আলাদা। তাই ব্যায়াম শুরুর আগে অবশ্যই একজন গাইনোকোলজিস্ট ও ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

এম ইয়াছিন আলী: চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ