জাতিসংঘের তৃতীয় ওশেন কনফারেন্সে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তবে যাচ্ছেন না অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সম্মেলনের সময় বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করেছে ঢাকা। প্যারিস তাতে রাজি হয়নি। 

আগামী ৯ জুন থেকে ফ্রান্সের নিস শহরে তৃতীয় ওশেন কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলন শুরুর আগমুহূর্তে ৮ জুন অংশগ্রহণকারীদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ফ্রান্সের আমন্ত্রণ পাওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে ড.

ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের চেষ্টা করা হয়। প্যারিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্মেলনে আসতে আগ্রহী অনেক দেশ ইতোমধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক চেয়েছে। ফলে এখনই বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সম্মেলনে আসার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে মিলিয়ে না দেখার অনুরোধ করে ফ্রান্স। বরং সম্মেলনে ড. ইউনূস যোগ দিতে পারবেন কিনা, তা নিশ্চিত হতে চায় তারা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এক চিঠির মাধ্যমে ঢাকা জানতে পারে যে, শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক সম্ভব নয়।

নাম না প্রকাশের শর্তে সরকারের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, প্যারিসের কাছে যখন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগ্রহ জানানো হয়েছিল, তখন তারা এটিকে শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়নি। তারা খুঁজেছে বৈঠক থেকে ফল কী আসবে। এর অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের করা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আকারে-ইঙ্গিতে স্যাটেলাইট ও এয়ারবাস উড়োজাহাজ কেনার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে ফ্রান্স। ইঙ্গিত ছিল, এ ধরনের কোনো ইস্যু থাকলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আগ্রহ দেখাতে পারে দেশটি। এর সঙ্গে তাদের প্রতিশ্রুত জলবায়ুর অর্থেরও যোগসূত্র রয়েছে।

স্যাটেলাইট ও এয়ারবাস উড়োজাহাজ কেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক সক্ষমতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওই কর্মকর্তা বলেন, এগুলো কেনার অর্থ ঋণ হিসেবে ফ্রান্সই দিত।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণ পেলেও প্রধান উপদেষ্টা কেন যাচ্ছেন না– জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল শনিবার বিকেলে সমকালকে জানায়, জাতিসংঘের আসন্ন তৃতীয় ওশেন কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। তবে সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব কে করবেন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

এর আগে দ্বিতীয় ওশেন কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২২ সালের ২৭ জুন থেকে ১ জুলাই, পর্তুগালের লিসবনে।

জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার ফ্রান্স না যাওয়ার কারণ হিসেবে দেশে জরুরি কাজের কথা প্যারিসকে জানিয়েছে ঢাকা। আর সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা যোগ দিতে না পারার কারণে দুঃখ প্রকাশ করা হয়।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে স্যাটেলাইট সিস্টেম নিয়ে একটি সম্মতিপত্র সই হয়। ইমানুয়েল মাখোঁ ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) এবং বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম সম্পর্কিত ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এসএএসের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বা সম্মতিপত্র সই হয়।

সফরকালে ফ্রান্সের উড়োজাহাজ ও স্যাটেলাইটে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। তিনি তখন বলেছিলেন, ফ্রান্স বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। ইউরোপীয় মহাকাশ শিল্পে আস্থা রাখার জন্য এবং ১০টি ‘এ-৩৫০’ এয়ারবাস নেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য আমি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। উড়োজাহাজের দিক দিয়ে এই এয়ারবাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড।

ইমানুয়েল মাখোঁর সফরকে কেন্দ্র করে সেই সময় প্রকাশিত দুই দেশের যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার, টেকসই শান্তি ও উন্নয়ন– এ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব। বিশ্বের যে কোনো দেশে অসাংবিধানিক পরিবর্তন এবং বেআইনি সামরিক দখলের নিন্দা করে ঢাকা ও প্যারিস।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স য ট ল ইট প রক শ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

টেকনাফে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

কক্সবাজারের টেকনাফের সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়া এলাকায় বসতঘর থেকে মিনারা বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত মিনারা বেগম টেকনাফের মহেশখালীয়া পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিমের স্ত্রী। তাঁর বাবার বাড়ি উপজেলার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পূর্ব পাড়া এলাকায়। তিন সন্তানের জননী ছিলেন মিনারা বেগম।

পুলিশ জানায়, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে খবর পেয়ে রাতে ওই গৃহবধূর লাশটি উদ্ধার করা হয়। গলায় দড়ি প্যাঁচানো অবস্থায় লাশটি ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছিল। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত মিনারা বেগমের বড় ভাই মো. ইলিয়াস বলেন, গতকাল রাতে তাঁর ছোট বোনের স্বামী মোহাম্মদ ইব্রাহিম ফোন করে মিনারা বেগমের মৃত্যুর বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন ঘরের দরজায় তালা লাগানো। তালা খোলার পর দেখা যায়, তাঁর বোনের লাশ ঝুলে রয়েছে। ইব্রাহিম তালা খুলে দিয়ে পালিয়ে গেছেন।

মো. ইলিয়াস আরও বলেন, যৌতুকের দাবিতে তাঁর ছোট বোনকে নির্যাতন করে আসছিলেন ইব্রাহিম। বোনকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করে এ বিষয়ে মামলা করবেন বলে জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মিনারা বেগমের স্বামী মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। তাঁর মুঠোফোনটিও বন্ধ রয়েছে। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত পেলে ওই নারীর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ