যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলি হামলা, শুধু ভোর থেকে শতাধিক নিহত
Published: 18th, May 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় আজ রোববারও বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এসব হামলায় ভোর থেকে এ পর্যন্ত ১২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকার বিভিন্ন সূত্র থেকে আল–জাজিরা এমন তথ্য জানতে পেরেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে শিশু।
সূত্র বলেছে, আজ ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় গাজায়, উত্তর গাজায় এবং গাজার মধ্যাঞ্চলীয় এলাকায় তাঁরা নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার থেকে কাতারের দোহায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই ইসরায়েলি হামলায় নতুন করে শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।
গাজা উপত্যকায় সম্প্রতি সামরিক অভিযান বিস্তৃত করেছে ইসরায়েল। বোমা হামলাও জোরদার করেছে তারা।
এদিকে গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস এলাকায় বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য তৈরি এক আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো রয়টার্সকে বলেছে, গতকাল থেকে চলমান আলোচনায় এখনো পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। উভয় পক্ষই নিজেদের আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে।চিকিৎসাকর্মীরা বলেছেন, এ হামলার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও আছে। এই হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন। আশ্রয়শিবিরের কয়েকটি তাঁবু আগুনে পুড়ে গেছে।
আজ এক বিবৃতিতে হামাস এ হামলাকে ‘নতুন এক নৃশংস অপরাধ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। পরিস্থিতির অবনতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকেই দায়ী করেছে তারা।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ হামলা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে আগের এক বিবৃতিতে তারা বলেছিল, যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের অংশ হিসেবে গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে তারা ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দুই মাস ধরে স্থায়ী হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকে এ পর্যন্ত সেখানে কয়েক শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো রয়টার্সকে বলেছে, গতকাল থেকে চলমান আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। উভয় পক্ষই নিজেদের আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়, জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। এ হামলার জবাবে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাস এখনো ৫৮ জন জিম্মিকে আটকে রেখেছে।
আরও পড়ুনফিলিস্তিন নিয়ে ইহুদিদের তীব্র মতবিরোধ, ভাঙছে পরিবারও ১৫ মে ২০২৫গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৫৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত মার্চের পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন তিন হাজারের বেশি মানুষ।
আরও পড়ুনদুর্ভিক্ষের ‘মারাত্মক ঝুঁকিতে’ গাজার ২১ লাখ বাসিন্দা১৪ মে ২০২৫আরও পড়ুনজিম্মিদের উৎসর্গ করে হলেও যুদ্ধে জিততে চান নেতানিয়াহু, বিভক্তি বাড়ছে ইসরায়েলে১৪ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।