যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ চারজনের নামে ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার যশোরের আমলি (কেশবপুর) আদালতে মামলাটি করেন কেশবপুরের শহীদ লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মশিয়ার রহমান।

বাদীর আইনজীবী তাহমিদ আকাশ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালতের বিচারক অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্য আসামিরা হলেন– শাহীন চাকলাদারের পিএস কেশবপুর শহরের হাসপাতাল পূর্ব পাশের সাহাপাড়া রোডের আলমগীর সিদ্দিকি টিটো, তাঁর স্ত্রী শামীমা পারভিন রুমা এবং মাগুরখালী গ্রামের সোবহান গাজীর ছেলে রবিউল ইসলাম।

মামলায় বাদী আর্জিতে উল্লেখ করেছেন, শাহীন চাকলাদার যে সময় এমপি ছিলেন, বাদী সে সময় মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ও রেজাকাটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। সেই সুবাদে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের সুবিধা নেওয়ার জন্য আসামিদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তারা জানান, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কলেজের স্নাতক ও বিএমপি শাখার এমপিও আদেশ করিয়ে দেওয়া এবং কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষকদের এমপিও ছাড় করিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া স্কুলের মাধ্যমিক শাখার এমপিও আদেশ করিয়ে দেওয়ার জন্য আরও ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। বাদী পরে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে রাজি হন এবং তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেন। 

২০২০ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ৩০ আগস্টের মধ্যে টিটোর বাড়িতে বসে শাহীন চাকলাদারসহ আসামিদের হাতে দফায় দফায় ওই টাকা দেওয়া হয়। ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন আসামিরা। কিন্তু যথাসময়ে কাজগুলো করে দিতে ব্যর্থ হন। পরে বাদী মন্ত্রণালয়ে খবর নিয়ে জানতে পারেন, ওই চারজন সব টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। গত ২০ জুন টিটো ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ওই টাকা ফেরত চাইলে তারা জানান, টাকা দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসছে– এই বলে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: যশ র শ হ ন চ কল দ র ক শবপ র র জন য কল জ র

এছাড়াও পড়ুন:

সামাজিকমাধ্যমে হঠাৎ সরব মঞ্জুর অনুসারীরা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা। গত তিন দিন ধরে নজরুল ইসলাম মঞ্জু আবারও দলে ফিরছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নও পাচ্ছেন, দাবি করে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে দেখা যাচ্ছে তার অনুসারীদের। 

তবে খুলনা মহানগর বিএনপির বর্তমান নেতারা বলছেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তারাও ফেসবুক পোস্ট দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

খুলনা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সম্পর্ক ৪৬ বছরের। ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন মঞ্জু। ১৯৮৭ সাল থেকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, ১৯৯২ সাল থেকে ১৭ বছর সাধারণ সম্পাদক, ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন তিনি। 

দীর্ঘ চার দশক ধরে খুলনা বিএনপি এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জু যেন এক নামেই জড়িয়ে ছিলেন। অবশ্য তার বিরুদ্ধে দলের মধ্যে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও নিজের লোকদের সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ ছিল প্রতিপক্ষের।

নজরুল ইসলাম মঞ্জুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ছন্দপতন ঘটে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে। ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বাদ পড়েন মঞ্জু ও তার অনুসারীরা। ১২ ডিসেম্বর দলের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় তাকে। ২৫ ডিসেম্বর তাকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

মঞ্জুর চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের এমন পরিণতি মানতে পারেননি অনুসারীরা। এক দিন পর থেকেই শুরু হয় গণপদত্যাগ। কিছু দিন রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় ছিলেন মঞ্জু ও তার অনুসারীরা। এর মধ্যে খুলনা মহানগর বিএনপি, ৫ থানা ও ৩১টি ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সব জায়গা থেকেই মঞ্জুর অনুসারীরা বাদ পড়েন। 

বাদ পড়ার ৬ মাস পরেই রাজনীতিতে কর্মসূচিতে সরব হন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। কেন্দ্রীয় বড় কর্মসূচির প্রতিটিতেই পৃথক ব্যানার ও মিছিল নিয়ে যোগ দেন মঞ্জুসহ তার অনুসারীরা। জাতীয় দিবসগুলো বড় পরিসরে পালন হচ্ছে। গত ৩০ মে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আলাদাভাবে পালন করেছেন তার অনুসারীরা। 

গত কয়েকমাস ধরে খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে নানা জ্বল্পনা চলছে। মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন খুলনা মহানগর বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। এরই মধ্যে গত ৪ জুলাই নিজের ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখে পোস্ট দেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এরপর থেকেই তাকে নিয়ে ছবি দেওয়ার হিড়িক পড়ে অনুসারীদের মাঝে। সেখানে মঞ্জুকে নিয়ে নানা প্রত্যাশা, দলে ফেরা এবং তার নির্বাচনী আসন খুলনা-২-তে মনোনয়নলাভের বার্তা ছিল।

খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ চায় তার মতো যোগ্য দক্ষ সংগঠক দলকে নেতৃত্ব দিক। কিংবা জনগণের নিকট বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে তিনি তাদের জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করুক।’

তবে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সমকালকে বলেন, এখনই সবকিছু বলার সময় হয়নি। দল থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হলে, সেটাই দলের নেতারাই ঘোষণা দিবেন।

সার্বিক বিষয় নিয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘ফেসবুকে আমরাও আলহামদুলিল্লাহ লেখা দেখছি। কেউ বলছে, ছেলে আমেরিকায় চাকরি পেয়েছে, তাই লিখছে। কেউ বলছে, মনোনয়ন পাচ্ছে। দল থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তার প্রত্যাবর্তন বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিকমাধ্যমে হঠাৎ সরব মঞ্জুর অনুসারীরা