বিগত কয়েক বছরে টেলিভিশন ধারাবাহিকের মধ্যে সবচেয়ে সাড়া ফেলেছে নির্মাতা কাজল আরিফিন অমির ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’। নাটকের বিষয়বস্তু, সংলাপ কিংবা প্রেজেন্টেশন নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকলেও এক শ্রেণির দর্শক এই ধারাবাহিকটিকে লুফে নিয়েছে। জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই পর পর এই ধারাবাহিকের ৪টি সিজন নির্মাণ করেন পরিচালক।

 কিন্তু মন খারাপের খবর হচ্ছে বিগত পর্বের মত এই সিজন ৫ আর ইউটিউবে দেখা যাবে না বলে জানানো হয়। কিন্তু এবার আর টেলিভিশনে নয়, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘বঙ্গ’তে দেখা যাচ্ছে ধারাবাহিকটি। স্বাভাবিকভাবেই যতো পরিমাণ দর্শক ইউটিউবে ফ্রিতে নাটকটি দেখতো, এবার পয়সা খরচা করে অতোটা দেখেনি। তাই নতুন এই সিজন নিয়ে আলোচনাও তুলনামূলক কম দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এবার তবে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ভক্তদের সুখবর জানালেন নাটকটির নির্মাতা। সিজন ৫ এবার আসতে চলেছে ইউটিউব দর্শকের জন্য। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ মিনিটে বুম ফিল্মসের ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাবে কাবিলা, পাশা, হাবু, শিমুলদের জীবনযাপনের গল্পে নির্মিত এ নাটক।

অমি বলেন, ওটিটি স্ট্যান্ডার্ডে বানানোর পরেও অনেকে সিরিয়ালটি চায় ইউটিউবে দেখতে। এসব দর্শকদের কথা মাথায় রেখে ইউটিউবে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছি। শুধু প্রমোশনাল কনটেন্ট আপলোড দিয়ে বুম ফিল্মসে ছয় লাখ সাবক্রাইবার ছাড়িয়েছে। 

অমি বলেন, এতে বোঝা যায় দর্শক ব্যাচেলর পয়েন্ট সিজন ৫ ইউটিউবে দেখার জন্য কি পরিমাণ আগ্রহী। আমি কনফিডেন্ট, দর্শক ওটিটি স্ট্যান্ডার্ডের সিরিজ ইউটিউবে একেবারে প্রথম পর্ব থেকে উপভোগ করতে পারবেন। তারা যে স্ট্যান্ডার্ড প্রত্যাশা করে আছে, বেটার কিছু পাবে। 

ইউটিউবের আগে বঙ্গ অ্যাপে 'ব্যাচেলর পয়েন্ট' সিজন ৫-এর প্রথম আটপর্ব গত মাসেই মুক্তি পেয়েছে। অমি বলেন, অ্যাপে রেকর্ড পরিমাণ দর্শকদের কাছে ইতোমধ্যে পৌঁছুতে পেরেছি। এবার সেকেন্ড রিলিজ হচ্ছে ইউটিউব। যারা আগেই অ্যাপে দেখেছেন তারা হয়তো না দেখতে পারেন। ইউটিউবের পর আবার টিভিতেও যাবে। সবমাধ্যমে দর্শক রয়েছেন। আমি চাই, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম দিয়ে তাদের কাছে কাজটি পৌঁছাক। 

এদিকে, ১০ জুলাই থেকে সপ্তাহে দুই দিন বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাত ৭টা ৫০ মিনিটে চ্যানেল আইতে দর্শকরা  সিরিজটি উপভোগ করতে পারবেন। ভোর রাত ৩টা ৪০ মিনিটে প্রথম পুনঃপ্রচার এবং প্রচারের পরদিন সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে দ্বিতীয় পুনঃপ্রচার করবে চ্যানেল আই।

জানা গেছে, সিরিয়ালটির প্রতিটি পর্বের দৈর্ঘ্য হবে ২০ মিনিট করে। প্রতিবারের মতো এবারও ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-সিজন ৫ এ অভিনয় করেছেন মারজুক রাসেল, চাষী আলম, জিয়াউল হক পলাশ, শিমুল শর্মা, লামিয়া লাম, আব্দুল্লাহ রানা, মনিরা মিঠুসহ অনেকে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ র ব হ ক ন টক স জন ৫

এছাড়াও পড়ুন:

ড. হুদা কর্মগুণেই বেঁচে থাকবেন

গত ৫ জুলাই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা ইন্তেকাল করেছেন। আমার সৌভাগ্য, আমি তাঁর স্নেহ লাভ করেছি। তাঁর সান্নিধ্যে কিছু অনুভূতি স্মৃতিপটে অক্ষয় হয়ে আছে। 
২০০৭ সালে ড. শামসুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এই দায়িত্ব গ্রহণের শুভলগ্নে তাঁর কৃতিত্বের অনেক গল্প তাঁরই পরিচিত গুণীজনের মুখে শুনেছি। কিন্তু গুণেরও যে একটা ধরন আছে, তাঁর সান্নিধ্যে না থেকে আবিষ্কার করা অসম্ভব। মানুষ ক্ষমতায় আসে ক্ষমতা উপভোগ করার জন্য। ক্ষমতা যে দুষ্টের দমন, শিষ্টের লালন এবং দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োগ করতে হয়, তা তিনি নিজের জীবনে অনুসরণ করে দেখিয়ে গেছেন। 

আধুনিক যুগে তথাকথিত বুদ্ধিমান লোকেরা কোনো কিছু নতুনভাবে গড়ার ঝুঁকি নিয়ে বোকা হতে চায় না। নতুন কিছু গড়তে হলে যে পরিমাণ সময় দিতে হয়, তাতে নিজের আরাম-আয়েশ করার সুযোগ একেবারেই সংকুচিত হয়ে যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সাধারণত পুরোনো জিনিস ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে গড়ে তোলার সাহস করি না। ড. হুদা ছিলেন তার ব্যতিক্রম। সময়ের প্রয়োজনে পুরোনো অবয়ব ভেঙে নতুন অবয়ব তৈরির পরিকল্পনা তাঁকে সব সময় তাড়া দিত। সৃষ্টির নেশা তাঁকে সব সময় আচ্ছন্ন করে রাখত। এসব করতে গিয়ে বিশ্রামহীনতা ও কঠোর শ্রমকে তিনি সানন্দে গ্রহণ করেছেন। বিশ্বমানের এনআইডি, বর্তমানে যা নাগরিক সত্তার অপরিহার্য নিয়ামক, তাঁরই অনবদ্য সৃষ্টি। উপজেলা কিংবা থানা পর্যায়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন ভবন স্থাপনে তাঁর ক্যারিশমা ছিল মেঘ না চাইতেই বারি বর্ষণের মতো। আমলাতন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর তিনি ভারী কুঠারের আঘাতে ছিন্ন করেছেন। নেতিবাচক মনোভাবকে নানা কৌশলে ইতিবাচক মনোভাবে রূপান্তর করে জনস্বার্থ রক্ষা করেছেন। 

সংস্কারের কথা বলতে গেলে, নির্বাচন কমিশন-সংশ্লিষ্ট আইনের প্রায় সব শাখা-উপশাখায় তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছেন। নতুন আইন প্রণয়ন কিংবা আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকে প্রচলিত ধারণায় সব সময় একটি দীর্ঘসূত্রতা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। কথিত এই দীর্ঘসূত্রতা এড়ানোর জন্য তিনি একের পর এক মিটিং করেছেন। প্রতিটি মিটিং যেন ছিল পরীক্ষার হল। সভাকক্ষে কী অলৌকিক শক্তি, ধৈর্য, মনোযোগ তাঁর ওপর ভর করত, তা বিধাতাই জানেন। অপেক্ষাকৃত তরুণ কর্মকর্তারা মিটিং চলাকালে সময়ের ব্যাপ্তিতে হাঁপিয়ে উঠলেও সর্বশেষ এজেন্ডা পর্যন্ত তিনি থাকতেন দৃঢ় ও অবিচল। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর দূরদর্শিতা যেন অন্তরদৃষ্টিকে ছাপিয়ে যেত। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যে কৌশল তিনি অবলম্বন করতেন, তা ছিল প্রচলিত পদ্ধতি থেকে আলাদা। 

মানবসম্পদ উন্নয়নে ড. হুদার দর্শন ও পরিকল্পনা ছিল পক্ষপাতহীন। ব্যক্তির যোগ্যতা বাড়ানো, যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য স্থানে পদায়নে তিনি থাকতেন অনড়। তোষামোদকারীরা তোষামোদের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিত্বের উচ্চতা ছিল হিমালয়সম। তোষামোদকারীর হাত সেই উচ্চতা অতিক্রম করতে পারত না। তাঁর আমলে নথি উপস্থাপনের ক্ষেত্রে নোট প্রদানকারী যেভাবে স্বাধীনতা ভোগ করেছেন, আজকাল তা বিরল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ন্যায়ানুগ যুক্তি নিয়ে যে কেউ খুব সহজেই তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারতেন। আরও যা উল্লেখযোগ্য, তিনি সশরীরে কিংবা অনলাইনে তৃণমূলেও পৌঁছে যেতেন। তৃণমূলের নাড়ির স্পন্দন তাঁর ব্যক্তিত্বকে শতগুণে বিকশিত করেছে। শ্রদ্ধেয় এই গুণীজনের গুণের মূল্যায়ন লিখে বা বলে বর্ণনা করা অসম্ভব। আলাদা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞের মূল্যায়ন হতে পারে।
ড. এটিএম শামসুল হুদা এখন আমাদের মাঝে সশরীরে নেই, তবে তাঁর কাজ রয়ে গেছে। জনস্বার্থে গৃহীত তাঁর মহৎ কাজগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি এ জগতে বেঁচে থাকবেন। বিধাতা তাঁকে তাঁর কর্মের বিনিময়ে জান্নাত দান করুন। আমিন।

মো. ফখর উদ্দীন শিকদার: 
সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ