‘আমরা এখনও সপদে বহাল আছি, পার্টির বিরুদ্ধে কী করেছি’
Published: 8th, July 2025 GMT
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ উল্লেখ করে মুজিবুল হক চুন্নু এখনো জাপার বৈধ মহাসচিব, এমনকি নিজেরা সপদে বহাল রয়েছেন বলে দাবি করেছেন সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেদেরর অব্যাহতির সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার (৮ জুলাই) গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “প্রেসিডিয়ামের বৈঠকের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তমতে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ২৮ জুন জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ডেকেছিলেন। সম্মেলন আহ্বান করার পর কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত দলের কোনো পদে কাউকে পরিবর্তন করা যায় না। অব্যাহতি, পদোন্নতি যা হচ্ছে গঠনতন্ত্র মতে সবই অবৈধ। তিনি মহাসচিব পদে যাকে নিয়োগ দিয়েছেন তার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অগঠনতান্ত্রিক। গঠনতন্ত্রের বিধি মোতাবেক মুজিবুল হক চুন্নু বৈধ মহাসচিব আর আমরাও আমাদের পদে বহাল রয়েছি।”
আরো পড়ুন:
চুন্নু বৈধ মহাসচিব, শামীম পাটোয়ারীর নিয়োগ গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন
জাপার নতুন মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী
তিনি প্রশ্ন রাখেন, “যে প্রেসিডিয়ামের দোহাই দিয়ে আমাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সেই প্রেসিডিয়াম বৈঠক কে ডেকেছেন। প্রেসিডিয়াম বৈঠক ডাকবেন দলের মহাসচিব। পার্টির চেয়ারম্যান তো মিটিং ডাকার এখতিয়ার রাখেন না। তাহলে এ সভার বৈধতা কি।”
“গঠনতন্ত্রের ২০/৩(খ) ধারায় বলা হয়েছে, মহাসচিব চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে, প্রেসিডিয়ামের মিটিং আহ্বান করবেন। আলোচন্য সূচি নির্ধারণ করবেন। কিন্তু যেই প্রেসিডিয়াম বৈঠক ২৮ জুন দেখানো হয়েছে সেটি মহাসচিবের অগোচরে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের না জানিয়ে করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।”
এই প্রেসিডিয়ামে কোরাম হয়নি বলেও দাবি করে আনিস।
পার্টির শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের অভিযোগে দলের পদ-পদবি থেকে তিন নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে জিএম কাদেরের এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেন ব্যারিস্টার আনিস।
দলের চেয়ারম্যানের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “কে শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেছেন, আমরা নাকি উনি। আমরা পার্টির বিরুদ্ধে কি করেছি? তিনি যখন গঠনতন্ত্রের বিশেষ ধারার ক্ষমতা অপব্যবহার করে দলকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন তখন আমরা এই ২০ (ক) বিশেষ ধারা সংশোধনের জন্য পার্টির চেয়ারম্যানকে বলেছি, দলের ফান্ডের হিসাব দিতে বলেছি, পার্টির কর্মকাণ্ড নিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বলেছি, দলের সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের কথা বলেছি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা বলেছি। এসব কি দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ।”
“তিনি কি করলেন, আমাদের কথা শুনলেন না। আমাদের প্রতিপক্ষ ভাবলেন। দলকে এককভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য কথিত প্রেসিডিয়াম সভা দেখিয়ে আমাদেরকেই পথে কাটা ভেবে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যা ভবিষ্যতে দলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।”
তিনি বলেন, “আমরা প্রায় সবাই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে দলের সঙ্গে আছি। আমিও এই পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলাম, আমাকে যখন ঘোষণা করা হয়, তখন পার্টির চেয়ারম্যান আমার পাশে বসে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর জিএম কাদের যেদিন চেয়ারম্যান হন সেদিন রাতের আঁধারে জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছেন। এরশাদ তখন মৃত্যূ পথযাত্রী ছিলেন। ঠিক যেভাবে মিলিটারি ক্যূ হয় সেভাবে করা হয়েছে।”
তিনি দলের এই সংকটময় মুহূর্তে এরশাদপ্রেমিক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বিগত নির্বাচনে আড়াই কোটি টাকার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে জানিয়ে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “পার্টির চেয়ারম্যান সেই টাকার কোনো হিসাব দেননি। পার্টির চাঁদা এবং অনুদানের কোনো হিসাবও দেননি তিনি। আমরা তার কাছে এসবের হিসাব চেয়েছি। এটাত গঠনতন্ত্রবিরোধী হতে পারে না।”
অবিলম্বে কাউন্সিলের মাধ্যমে পার্টির সব সমস্যা সমাধান করার দাবি জানিয়েছেন দলের এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
এ সময় সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক কো-চেয়ারম্যান কাজি ফিরোজ রশীদ, অব্যাহতিপ্রাপ্ত মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সাবেক কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এটি ইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আক্তার, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মো.
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গঠনতন ত র জ এম ক দ র রহম ন ল ইসল ম আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
আগামী নির্বাচনে ৩৮.৭৬% ভোট পেতে পারে বিএনপি
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অন্য সব রাজনৈতিক দলের চেয়ে বেশি ভোট পাবে বল মনে করেন তরুণরা। তাদের বিবেচনায় সর্বাধিক ৩৮ দশমিক ৭৬ ভোট পাবে দলটি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৪৫ ভোট পাবে জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পাবে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পায়, তাহলে ১৫ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ ভোট পাবে।
দেশের তরুণদের ওপর পরিচালিত মাঠ পর্যায়ের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গত ২০ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। সোমবার রাজধানীর হোটেল ব্র্যাক ইনে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগের দুটি জেলার দুটি করে উপজেলার দুই হাজার তরুণের ওপর জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
‘রূপান্তরকালে তরুণ সমাজ : জুলাই পরবর্তী কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের গতি’ শিরোনামের এই জরিপে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের তরুণের মতামত নেওয়া হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের একটা অংশ এখনও ভোটার নন। এ হারটা কত তা স্পষ্ট নয়।
জরিপের ফল বলছে, নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর বাইরের ইসলামিক দলগুলো ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে। জাতীয় পার্টি পাবে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ভোট। অন্যান্য ছোট দলগুলো পাবে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ ভোট।
তরুণদের মতে দেশের কোন বিভাগে কোন দল কী হারে ভোট পেতে পারে, তারও একটা চিত্র তুলে আনা হয়েছে জরিপে। এতে দেখা যায়, সব বিভাগেই এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। দলটি সবচেয়ে বেশি ৪১ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোট পেতে পারে চট্টগ্রাম বিভাগে। সবচেয়ে কম ৩৬ দশমিক ১৩ শতাংশ পেতে পারে সিলেটে।
ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের বিষয়ে উত্তর দাতাদের কাছে প্রশ্ন ছিল– আপনি কি মনে করেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেশের উন্নয়নের জন্য কল্যাণকর? জবাবে ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিয়েছেন। বাকিরা ‘না’ সূচক জবাব দিয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পার বলে মনে করে জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। ১৪ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ মনে করেন, এ জন্য ১০ থেকে ২০ বছর সময় লাগতে পারে। উত্তর দাতার ২২ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করেন, ধর্মভিত্তিক দল কোনোদিন এ দেশের শাসন ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণ ভোটারদের ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে চান। তবে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে হতাশা ও অনাগ্রহ রয়েছে।
৮২ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, তারা রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান না। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক সহিংসতা ও রাজনীতিবিদদের নৈতিকতার অভাবের কথা বলেছেন তারা।
জরিপটি পরিচালনার ব্যাখ্যা দিয়ে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান অনুষ্ঠানে বলেন, জুলাই বিপ্লবের এক বছর পর কর্মসংস্থান নিয়ে তরুণদের ভাবনা, চ্যালেঞ্জ, আশাবাদ ও হতাশা বুঝতে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ছিল অনেক। তরুণ সমাজের আন্দোলনের মূলে ছিল বৈষম্যের অবসান। তবে তা কি হয়েছে? এখনও নানাভাবে নানান পর্যায়ে বৈষম্য রয়েছে।