লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন ও উপসহকারী প্রকৌশলী মোকতাদিরের বিরুদ্ধে ঘুষবাণিজ্য, দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে তাদের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহক। 

সোমবার (৭ জুলাই) সকালে জেলা শহরের ঝুমুর এলাকায় লক্ষ্মীপুর পিডিবি অফিসের সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। এর আগে একই দাবিতে গত ৩ জুলাই সকালে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। 

লক্ষ্মীপুর শহরের ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র শিল্প মালিক ও বিদ্যুৎ গ্রাহকগণের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন লক্ষ্মীপুর বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল আজিজ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম, ব্যবসায়ী আবুল কাশেমসহ ক্ষুব্ধ গ্রাহক। 

বক্তারা বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ লোক নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

নুরুল আমিন ও উপসহকারী প্রকৌশলী মোকতাদির যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার যেন তাদের নিয়মে পরিণত হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা জানান, গত ২২ জুন হঠাৎ করেই লক্ষ্মীপুর পিডিবির দুই শতাধিক গ্রাহকের প্রিপেইড মিটার লক করে দেওয়া হয়। ঘুষ না দেওয়াতে এসব মিটার লক করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।

ভূক্তভোগীদের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে জড়িত করে তাদের বিরুদ্ধে ১৬টি অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে প্রিপেইড মিটারে নিয়মিত বিল পরিশোধের পরও ডিউ বিল করা, সরকারি মিটার ও ট্রান্সফর্মার ব্যবহারের নামে গ্রাহকের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা আদায়, এস.টি সংযোগের ভয় দেখিয়ে বাড়তি টাকা আদায়, সরকারি মালামাল বিক্রি, মিটার পরিবর্তন ও সংযোগের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়, সরকারি ফ্রি সেবার জায়গায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়, অন্যান্য ঠিকাদারদের বঞ্চিত করে নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া ইত্যাদি৷ 

এর আগে অভিযুক্ত দুজনকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবিতে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকারের মধ্যমে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করা হয়।

অভিযুক্ত প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘‘আমি ও আমার উপসহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে উপদেষ্টা বরাবর যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তার সাথে আমরা জড়িত নই।’’

জাহাঙ্গীর//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লক ষ ম প র গ র হক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম করে শ্রমিক থেকে প্রকৌশলী হওয়ার সত্যতা পেল দুদক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজনকে নিয়ম ভঙ্গ করে উপসহকারী প্রকৌশলী, কর আদায়কারী, সড়ক তদারককারী, অনুমতিপত্র পরিদর্শক, হিসাব সহকারী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার সত্যতা পেয়েছে দুদক। আজ সোমবার বিকেলে চসিক কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১–এর একটি দল।

এতে নেতৃত্ব দেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকদের অবৈধভাবে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিয়োগ ও পদোন্নতিসংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নথি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।

এর আগে গত ৪ জুলাই প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘শ্রমিক থেকে “এক লাফে” প্রকৌশলী, কর আদায়কারী’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দুই বছরে, যখন মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী; মূলত তখনই পদোন্নতি নিয়ে এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়রের দায়িত্ব নেন এবং গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পতন হলে ১৯ আগস্ট তাঁকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁর শেষ দুই বছরে নিয়োগ পাওয়া ১৮৮ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে চসিক। সেই তালিকায় দেখা গেছে, শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিয়েই এক লাফে উচ্চ গ্রেডের পদে পদায়ন করা হয়েছে অন্তত ৬৪ জনকে। চসিকের জনবলকাঠামো অনুযায়ী, শ্রমিক পদ ২০তম গ্রেডের। কিন্তু সেখান থেকে ১০ম গ্রেডের উপসহকারী প্রকৌশলী, ১৬তম গ্রেডের কর আদায়কারী বা অনুমতিপত্র পরিদর্শক পদে পদায়ন করা হয়েছে। এ ধরনের পদোন্নতিতে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।

চসিকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তখনকার মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, কিছু কর্মকর্তা ও শ্রমিকনেতাদের সুপারিশেই এসব নিয়োগ হয়েছিল। ঘনিষ্ঠদের জন্য পরীক্ষা ছাড়াই চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। পরে তাঁদের পদায়ন করা হয় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে। নিয়োগ ও পদোন্নতির এই প্রক্রিয়ায় কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। নেওয়া হয়নি লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা।

শ্রমিক থেকে ‘প্রকৌশলী’

মো. রোকনুজ্জামান শ্রমিক পদে যোগদান করেছিলেন ২০২৩ সালের ১৮ জুন। যোগদানের দিনেই তাঁকে সাগরিকা টেস্টিং ল্যাবের ল্যাব ইনচার্জ (উপসহকারী প্রকৌশলী) হিসেবে পদায়ন করা হয়। রোকনুজ্জামান পুরকৌশলে ডিপ্লোমা করেছেন। পরে একই বিষয়ে স্নাতক করেন।

রশিদ আহমেদ নামের আরেকজন নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। যোগদানের ১৯ দিনের মাথায় তাঁকে বিদ্যুৎ শাখায় উপসহকারী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়। তিনি ডিপ্লোমা করেছেন।

এইচএসসি পাস করা জাহেদুল আহসান গত বছরের ৩১ জানুয়ারি শ্রমিক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। নিয়োগ পাওয়ার ১৭ দিন পর ১৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে উপসহকারী প্রকৌশলী করা হয়। নিয়োগের ১৪ দিনের মাথায় শ্রমিক থেকে উপসহকারী প্রকৌশলী হয়েছেন এস এম রাফিউল হক মনিরীও।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্মচারী বিধিমালা-২০১৯ অনুযায়ী, উপসহকারী প্রকৌশলী পদে দুভাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে। একটি হচ্ছে সরাসরি ও অন্যটি পদোন্নতির মাধ্যমে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৮০ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। পদোন্নতির পেতে প্রার্থীকে সড়ক তদারককারী বা বাতি পর্যবেক্ষক পদে ১২ বছর চাকরি করতে হবে। কিন্তু এই চারজনের ক্ষেত্রে এগুলোর কোনোটিই মানা হয়নি বলে জানান সিটি করপোরেশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুদক যেসব নথিপত্র চেয়েছে, আমরা সেসব সরবরাহ করেছি। আরও কিছু নথিপত্র আগামীকাল দেব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনিয়ম করে শ্রমিক থেকে প্রকৌশলী হওয়ার সত্যতা পেল দুদক