১২ দিন পর নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন, রিমান্ড শেষে ৪ আসামি কারাগারে
Published: 8th, July 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে নির্যাতনের শিকার সেই নারীর (২৫) ডাক্তারি পরীক্ষা (ফরেনসিক) সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমে রাজি না হলেও ঘটনার ১২ দিন পর স্বেচ্ছায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এদিকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় করা মামলার চার আসামিকে তিন দিনের রিমান্ড শুনানি শেষে আজ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৬ জুন রাতে ওই নারী নির্যাতনের শিকার হন। এ ঘটনায় ২৭ জুন মুরাদনগর থানায় ধর্ষণের মামলা করেন ওই নারী। পরদিন ২৮ জুন ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগমুহূর্তে হঠাৎ তিনি ডাক্তারি পরীক্ষা করাবেন না বলে জানান। পরে পরীক্ষা ছাড়াই পুলিশ সদস্যরা তাঁকে নিয়ে মুরাদনগরে ফিরে আসেন। পরে স্বেচ্ছায় আজ তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, আইনানুযায়ী ভুক্তভোগী নারী ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে না চাইলে তাঁকে বাধ্য করার সুযোগ নেই। এ জন্য ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা নিয়েও পরীক্ষা ছাড়াই ফেরত আনা হয়। তিনি এখন তাঁর বাবার বাড়িতে থাকছেন না। নিজের হেফাজতে অন্যত্র থাকলেও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। ইতিমধ্যে তিনি ডাক্তারি পরীক্ষার গুরুত্ব বুঝে স্বেচ্ছায় রাজি হন। আজ দুপুরে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এটি মামলার তদন্তের জন্য ইতিবাচক।
চার আসামি কারাগারে
এদিকে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় চার আসামিকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে দুপুরে কুমিল্লার আদালতে হাজির করা হয়। গত শনিবার কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের মুরাদনগর থানায় আনা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে দুজন পুলিশকে আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছিল।
তবে আদালতে বিচারকের সামনে হাজির হওয়ার পর তাঁরা স্বীকারোক্তি দেননি। পরে চারজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ আলী ওরফে সুমন, রমজান আলী, মো.
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো পুলিশ যাচাই-বাছাই করছে। চার আসামির মধ্যে সুমন ও রমজান স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতে হাজির করার পর তাঁরা জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে ভিডিও ছড়ানোর ‘নেপথ্যের ব্যক্তি’ হিসেবে গ্রেপ্তার শাহ পরানের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। কাল বুধবার আবেদনের শুনানি হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। শাহ পরান ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি ফজর আলীর ছোট ভাই। গত বৃহস্পতিবার জেলার বুড়িচং উপজেলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁকে মুরাদনগর থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। রোববার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।
প্রধান আসামি পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন
এদিকে ধর্ষণের মামলার একমাত্র আসামি ফজর আলী পুলিশ পাহারায় এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার সময় স্থানীয় কিছু যুবক পিটিয়ে তাঁর হাত-পা ভেঙে দেয়। পুলিশ ২৯ জুন ভোরে ঢাকা থেকে ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করে।
জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, ফজর আলীর অবস্থা এখনো তেমন উন্নতির দিকে যায়নি। তাঁর অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছাড়পত্র দিতে অন্তত দুই মাস সময় লাগতে পারে।
গত ২৬ জুন দিবাগত রাতে উপজেলার একটি গ্রামে সুদের বিনিময়ে দেওয়া টাকার খোঁজ নিতে গিয়ে বাড়ি ফাঁকা পেয়ে ফজর আলী নামের ওই ব্যক্তি প্রথমে ভুক্তভোগীর বাবার টিনের ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি টের পেয়ে ফজর আলীর পাশাপাশি ভুক্তভোগী নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে ২৭ জুন এবং ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে ২৯ জুন থানায় দুটি মামলা করেন ভুক্তভোগী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র দনগর থ ন কর মকর ত চ র আস ম পর ক ষ র জন য ত র কর ঘটন য় প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে ড্রেজার সিন্ডিকেট, হুমকিতে কৃষি উৎপাদন
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্ব ধৈইর পশ্চিম ইউনিয়নের কোরবানপুর ও খোষঘর এলাকায় অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কৃষিজমি থেকে উর্বর মাটি ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে তিন ফসলি জমি, ক্ষয়ে যাচ্ছে মাটির স্তর, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের জমি এবং হুমকির মুখে পড়ছে স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবার আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামে ড্রেজার সিন্ডিকেট।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলার কোরবানপুরে ৪টি, পেন্নাই গ্রামে ২টি, রোয়াচলা গ্রামে ২টি, ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নে ৫টি, দারোরা ইউনিয়নে ৩টি, ধামঘর ইউনিয়নে ২টিসহ মুকলিশপুর, সীমানার পাড়, জুগিরখিল প্রভৃতি এলাকায় নিয়মিত ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে।
বছরের পর বছর ধরে এই ড্রেজার সিন্ডিকেট ফসলি জমি থেকে মাটি ও বালু তুলছে। স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালালে কয়েক দিন থেমে থাকে মাটি উত্তোলন, পরে আবার সক্রিয় হয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ড্রেজার ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেছেন, “প্রতিদিন জমি থেকে বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে। একসময় যে জমিতে ধান, গম, ডালসহ অনেক কিছু হতো, এখন সেখানে পানি জমে থাকে। চাষাবাদ তো দূরের কথা, জমি আর জমি নেই।”
আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন, “আমরা বারবার ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রশাসনের কাছে বলেছি। কিন্তু, কিছুদিনের জন্য বন্ধ হলেও পরে আগের মতোই ড্রেজার চলে। সবাই দেখেও না দেখার ভান করে।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার এবং আজাদ দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় একাধিক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের পুকুর থেকে শুরু করে কোরবানপুর নতুন কবরস্থানের পাশ পর্যন্ত ৩-৪টি স্থানে ড্রেজার মেশিন নিয়মিত চলছে।
ড্রেজার ব্যবসায়ী সারোয়ার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ড্রেজার শুধু আমার একার চলছে না। পাশেই তো আজাদ ও মামুনের ড্রেজার চলছে। আগে ওগুলো বন্ধ করুন, পরে আমারটা করব।
অন্য ড্রেজার ব্যবসায়ী আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেছেন, “অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১ থেকে ২ শতাংশ কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। গত বছর থেকে এ বছর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হেক্টর জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে।”
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান বলেছেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কোরবানপুর এলাকায় ইতোমধ্যে ২০-২৫ বার অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযানে যাই। তবে, অভিযান শেষে তারা আবার নতুন পাইপ ও ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করে। এগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে জমির মালিকদের নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।”
ঢাকা/রফিক