রাজশাহীতে বৃত্তির ফলাফল জালিয়াতি, ১০ বছর পর শিক্ষা কর্মকর্তা বরখাস্ত
Published: 8th, July 2025 GMT
রাজশাহীতে ২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগে করা বিভাগীয় মামলায় বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
২ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখা থেকে এ আদেশ জারি করা হয়। এতে সচিব আবু তাহের মো.
আদেশে বলা হয়েছে, রাখী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে রুজু করা বিভাগীয় মামলায় করা অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪ (৩) (গ) মোতাবেক ‘চাকরি হতে অপসারণ’ নামীয় গুরুদণ্ড দেওয়া হলো। একই সঙ্গে তাঁর সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা হলো।
এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও ৩ (ঘ) অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর বিভাগীয় মামলা করা হয়। এ বিষয়ে তাঁর দেওয়া জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাঁকে এ গুরুদণ্ড দেওয়া হয়।
বিভাগীয় মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নম্বর ফর্দ এবং সমাপনী পরীক্ষার গোপনীয় কাগজপত্র ও কম্পিউটার তৎকালীন বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীর কক্ষে তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখা ছিল। নম্বর টেম্পারিংয়ের কাজটি তৃতীয় কারও পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর (রাখী চক্রবর্তী) নামে দুদকের পৃথক মামলা আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে রাখী চক্রবর্তীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখন কথা বলতে ইচ্ছুক নই।’
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বোয়ালিয়া থানার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪০ জন শিক্ষার্থীর খাতায় প্রাপ্ত নম্বরের চেয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে কম্পিউটারে ফলাফল প্রস্তুত করে বেশি নম্বর দেওয়া হয়। এ নিয়ে অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২২ জুন ‘রাজশাহীতে পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তির ফল জালিয়াতি’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর জুলাইয়ে রাজশাহীতে এসে এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সাইফুল ইসলাম তদন্ত করেন। ১৭ জুলাই মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। সেই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে বিভাগীয় মামলা হয়। তাঁদের মধ্যে তৎকালীন বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হলো। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) আবুল কাশেমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। পরে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে চাকরি ফিরে পেলেও পরীক্ষা–সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলছে। আর কর্মচারী সোনিয়া রওশনকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দুদকের মামলার অভিযোগপত্র থেকেও তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
এরপর সংশোধিত ফলাফল প্রকাশের জন্য রাজশাহীতে অভিভাবকেরা সুশিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। এ নিয়ে প্রথম আলোতে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, আগে বৃত্তি পেয়েছিল এমন ৪০ জন শিক্ষার্থীর বৃত্তি বাতিল করা হয়েছে। যাদের ৩০ জন ট্যালেন্টপুল ও ১০ জন সাধারণ গ্রেডের বৃত্তি পেয়েছিল। বাতিলের তালিকায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমের মেয়েও ট্যালেন্টপুলে পাওয়া বৃত্তিও ছিল।
সংশোধিত ফলাফলে বলা হয়, নগরের শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের ১৫ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল, যার সব কটি বাতিল করা হয়। বেসরকারি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তির সন্তান পড়ত। বৃত্তি বাবদ তোলা টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতে জমা দিতে বলা হয়।
সুশিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা কোমলমতি শিশুদের বৃত্তি জালিয়াতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। ফলাফল সংশোধনের পর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছিলাম। দীর্ঘদিন পরে হলেও সেই শাস্তি হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ আর এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস পাবেন না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত বরখ স ত প রক শ তদন ত ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
সহায়তার টাকা না পেয়ে জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর আহতদের
রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অফিস কক্ষ ভাংচুর করেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই অফিস কক্ষে প্রথমে তালা লাগানো হয়। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ২০ থেকে ২৫ জন জুলাই যোদ্ধা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
হামলাকারীদের অভিযোগ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজনকে দ্বিতীয় ধাপের টাকা দেওয়ার কথা বলে তিন থেকে চার বার ঘোরানো হয়েছে। এরপর আজ টাকা দেওয়ার তারিখ দিয়েছিল। কিন্তু আজও টাকা দেওয়া হয়নি।
সহায়তার এই টাকা পেতে পাশের বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত এই ব্যক্তিরা আজ দুপুরের পর ওই অফিসের সামনে ভিড় করেন। তিন থেকে চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর সন্ধ্যার দিকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, আজ টাকা দিতে পারবেন না। তাঁর এই কথা শুনে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন। এর মধ্যে ফাউন্ডেশনে একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ওই অফিস কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, অনেকগুলো চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাসে ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।
মামুন হোসেন নামে আহতদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই ফাউন্ডেশনের এক কর্মী তাঁদেরকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার কথা বলেন, এরপরে সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর চালায়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আগে তো জুলাই ফাউন্ডেশন ছিল না। আমাদের আহতদের জন্য এই জুলাই ফাউন্ডেশন। আমরা আহতরা চিকিৎসার অর্থের জন্য এখানে আবেদন করি। কিন্তু এখানে আসার পর আমাদেরকে বারবার টাকা দেওয়া হবে বলে ঘুরানো হয়।’
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানান মামুন হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবত চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? আজকে সাধারণ একটা বিষয় নিয়ে পুলিশ আমাদেরকে মেরেছে, জুলাই ফাউন্ডেশনে ফোন দেওয়া হয়েছে, তখন এখান থেকে কেউ যায়নি। তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
আহত নাজমুল হোসেন সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘সাত মাস ধরে দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য ঘুরতেছি। এখানকার ভেতরের লোকদের সাথে যাদের সম্পর্ক ভালো, তাঁদেরকে আগে টাকা দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের সাথে মামা-চাচার সম্পর্ক তাঁরাই টাকা পাচ্ছে। আমাদের যারা গুরুতর আহত, দেশে চিকিৎসা নেই, বাহিরে চিকিৎসা নিচ্ছে তাঁদেরকে সেকেন্ড টাইমের (দ্বিতীয় ধাপের) টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদেরকে টাকা দিচ্ছেন না।’
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অফিস কক্ষে ভাঙচুরের পর চেয়ারগুলো পড়ে থাকতে দেখা যায়। রাজধানীর শাহবাগে ওই অফিস কক্ষে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে