হাসপাতালে নেওয়ার নৌকা পেতে ১০ ঘণ্টা, নৌকাতেই মারা গেল অসুস্থ কিশোর
Published: 8th, July 2025 GMT
চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ উপজেলার ১২ বছরের এক কিশোর এক সপ্তাহ ধরে ভুগছিল জ্বরসহ শারীরিক নানা জটিলতায়। উপজেলায় আর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না, তাই তাকে নগরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসক। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় মিলছিল না নৌযান। ওই কিশোরকে নিয়ে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নৌযানের আশায় ঘাটে অপেক্ষা করেন পরিবারের সদস্যরা। অবশেষে সাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার জন্য মেলে ছোট একটি নৌকা। সেই নৌকাতেই মৃত্যু হয় ওই কিশোরের।
মারা যাওয়া কিশোরের নাম আবদুর রহমান। সে উপজেলার কালাপানিয়া ইউনিয়নের মো.
আবদুর রহমানের ফুফাতো ভাই এ আর সোহেল প্রথম আলোকে জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ার পর শুরুতে আবদুর রহমানকে সন্দ্বীপের বেসরকারি স্বর্ণদ্বীপ ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গতকাল সকালে তাকে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছিল। তবে সেখানে চিকিৎসক আবদুর রহমানকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
এ আর সোহেল বলেন, ‘সোমবার দুপুর ১২টার পর থেকে আমরা ঘাটে বোটের অপেক্ষায় ছিলাম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দীর্ঘ সময় কোনো বোট পাইনি। এ সময়ের মধ্যে আবদুর রহমানের অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। অবশেষে রাত ১০টা নাগাদ আমরা একটি লাল বোটের (উপকূলে যাত্রী নামানোর ছোট নৌকা) ব্যবস্থা করতে সক্ষম হই। ঝুঁকি নিয়ে সেটিতেই সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে রওনা দিতে হয়েছে।’
সন্দ্বীপের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় দুর্যোগের মধ্যে ছোট নৌকায় সাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকি নিতে হয়েছে বলে জানান আবদুর রহমানের আরেক ফুফাতো ভাই ইকরাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘উত্তাল সমুদ্রে আমাদের বোট উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা, সে সময় আমরা টের পাই আবদুর রহমান আর বেঁচে নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে ঢেউয়ের প্রচণ্ড গর্জনেও আমরা হাল ছাড়িনি। নিজেদের মনকে সান্ত্বনা দিতে আবদুর রহমানকে সীতাকুণ্ডের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসক জানান, আগেই আবদুর রহমানের প্রাণ চলে গেছে’।
আবদুর রহমানদের প্রতিবেশী মোজাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরুরি মুহূর্তে রোগী পারাপারের ক্ষেত্রে এই ধরনের চিত্র এবারই প্রথম নয়। প্রায়শই এমন ভোগান্তি আর করুণ পরিণতির মুখে পড়ে মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, লোকবল ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে এমন দুর্ভোগ ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মানস বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘১২ বছরের ওই কিশোরের মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হলে একজন উপজেলা সার্জনের প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু এই ধরনের পোস্ট আমাদের নেই। তবে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই তাঁকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ র রহম ন র দ ব প উপজ ল চ ক ৎসক প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি